‘বাপ কা বেটা’- বিধু বিনোদ চোপড়ার পুত্র অগ্নি চোপড়া রঞ্জি

প্রকাশ : 2024-01-11 13:09:06১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

‘বাপ কা বেটা’- বিধু বিনোদ চোপড়ার পুত্র  অগ্নি চোপড়া রঞ্জি

গত দুর্গাপূজার ঠিক পরপর মুক্তি পেয়েছিল ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা। প্রথমে বক্স অফিসে তেমন সাড়া পায়নি বিধু বিনোদ চোপড়া পরিচালিত সিনেমাটি। তবে, সম্প্রতি ওটিটিতে মুক্তি পাওয়ার পর হইচই ফেলে দিয়েছে এই সিনেমা। সর্বমহলে আলোচনায় উঠে এসেছে এই সিনেমার গল্প থেকে অভিনয়। ভারতের আইপিএস কর্মকর্তা মনোজ কুমার শর্মার জীবন সংগ্রামের গল্পে নির্মিত সিনেমাটিত। পর্দার মনোজের সংগ্রাম দেখে বহু দর্শক কেঁদেছেন। সত্য ঘটনা নিয়ে সিনেমা বানিয়ে বাহবা কুড়াচ্ছেন পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া। 

বাস্তব জীবনে আর্থিক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা সঙ্গী করে বেড়ে ওঠেন মনোজ। পরিবারকে সহযোগিতা করতে পড়াশোনার পাশাপাশি অটো রিকশাও চালাতেন তিনি। মাধ্যমিকে কোনোরকম পাস করলেও দ্বাদশ শ্রেণিতে হিন্দি ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেছিলেন তিনি। পরেরবার অনেক কষ্টে দ্বাদশ পাস করেন। এর মধ্যেই একবার এক পুলিশ কর্মকর্তা মনোজর অটোটি আটক করেন। পরে থানায় গিয়ে অটোটি ছাড়িয়ে আনতে যান তিনি। সেখানে একটি সাক্ষাৎ বদলে দেয় তার জীবনের প্রথম গতিপথ। কীভাবে ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়, কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় সবকিছু ওই আলোচনায় উঠে আসে। এরপর মনজ স্বপ্ন বুনেন আইপিএস কর্মকর্তা হওয়ার। 

ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন চেপে বসে মধ্য প্রদেশের এই দ্বাদশ ফেল ছেলেটির মাথায়। পাড়ি দেন গোয়ালিয়র। প্রথমটায় টেম্পো চালিয়ে, ছোট-খাটো কাজ করে লড়াই শুরু করেন তিনি। সে সময় তার মাথার উপর ছাদটুকুও ছিল না। ফুটপাথে ভিখারিদের সঙ্গে ঘুমাতে হয়েছে মনোজকে। একটা সময় লাইব্রেরিতে পিয়নের কাজ পান তিনি। কাজের সূত্রে বই পড়ার সুযোগ পেয়ে যান । সেটাই তাকে নতুন দিশা দেখায়। ধীরে ধীরে ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। সেই থেকে শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিতে মধ্য প্রদেশ থেকে দিল্লিতে পৌঁছান মনোজ। সেখানে ধনী পরিবারের কুকুরদের দেখভালের মতো কাজও করতে হয়েছে তাকে। তবে লড়াই বন্ধ হয়নি। এই লড়াইয়ের যাত্রায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলেটির জীবনে আসে উত্তরাখন্ডের মেয়ে শ্রদ্ধা জোশি। তার সব সময়ের সঙ্গী ছিলেন প্রেমিকা শ্রদ্ধা। তিনিও চাকরির পরীক্ষা দিতে দিল্লি যান। প্রথমবারেই আইআরএস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পান শ্রদ্ধা। তিনবারের চেষ্টায়ও উত্তীর্ণ হতে পারেননি মনোজ। শ্রদ্ধার অনুপ্রেরণায় চারবারের চেষ্টায় আইপিএস এর চাকরিটা পেয়ে যান তিনি।  ২০০৫ সালে মনোজ শর্মাকে বিয়ে করেন শ্রদ্ধা। বর্তমানে এই দম্পতির ঘরে চিয়া ও মানস নামের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

এদিকে, ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমার পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়ার ছেলে অগ্নি চোপড়া রঞ্জি ট্রফির অভিষেকেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। মিজোরামের হয়ে খেলছেন অগ্নি। মিজোরামের ম্যাচ ছিল সিকিমের সঙ্গে। সেই ম্যাচেই অগ্নি ১৭৯ বলে ১৬৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। ম্যাচটা হেরে যায় মিজোরাম। কিন্তু নজর কাড়েন অগ্নি। তার ব্যাট গর্জে ওঠে। সিকিম প্রথম ইনিংসে করেছিল ৯ উইকেটে ৪৪২ রান। মিজোরামের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ২১৪ রানে। দলের ৭৫ শতাংশ রানই করেন অগ্নি। দ্বিতীয় ইনিংসে অগ্নি মাত্র ৭৪ বলে ৯২ রান করেন। সিকিম ম্যাচটা ৪ উইকেটে জিতে নেয়। হেরে গেলেও অগ্নির ব্যাটিং প্রশংসিত হয়।

অগ্নির যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে জন্ম । মুম্বাইয়ের জুনিয়র দলের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। পরবর্তীকালে মিজোরামের হয়েই খেলতে দেখা যায় অগ্নি চোপড়াকে। গতবছরের অক্টোবরে মিজোরামের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন অগ্নি। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে ছত্তিশগড়ের বিরুদ্ধে মাত্র ৫ রান করেছিলেন অগ্নি। এক মাস পর চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে লিস্ট এ ম্যাচে ১৫ রান করেছিলেন অগ্নি। সেই অগ্নিই এবার ব্যাট হাতে ক্রিকেট মাঠে নেমে নিজেকে প্রমাণ করলেন ‘বাপ কা বেটা’। 

 

সা/ই