বাজার নিয়ন্ত্রকরাই এখন সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে : রিজভী

প্রকাশ : 2024-02-24 15:40:43১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বাজার নিয়ন্ত্রকরাই এখন সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বর্তমানে শেখ হাসিনার সরকারটাই শুধু ডামি নয় বরং অপ্রিয় সত্য হচ্ছে পুরো দেশ, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বই এখন যেন ডামি। কোথায় কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কেমন করে হচ্ছে, জনগণ কিছুই জানেনা। জনগণকে কিছুই জানানো হচ্ছেনা।’

শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাহিদা রফিক, ড. মামুন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রিজভী বলেন, ‘পূর্ব নির্ধারিত নির্বাচনের পর নতুন করে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার, জ্বালানি, ব্যাংক, অর্থনীতি, আইন—আদালত, শাসন—প্রশাসন, বিচার—আচার, টাকা—পয়সা, ব্যবসা বাণিজ্য—সর্বত্রই চলছে বেপরোয়া অরাজকতা ও নিয়ন্ত্রণহীন বিশৃঙ্খলা। এরা বিশ্বাস করে অশান্তি, হিংসা আর হানাহানি। খুন—খারাবি, নারী—শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারে মানুষের দিন কাটছে ঘনতমসাবৃত অবস্থায়। চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে যে ‘চীনের দুঃখ হোয়াং হো নদী’ একইভাবে গণতন্ত্র এবং ভোটার অধিকার হারানো সুশাসন বঞ্চিত জনগণ মনে করে ‘বাংলাদেশের দুঃখ শেখ হাসিনা’।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনগণের দুঃখ—দুর্দশা, গণতান্ত্রিক রাজনীতি উচ্ছন্নে দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন শেখ হাসিনা জোড়াতালি দিয়ে শুধু ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখতেই ব্যস্ত। সরকার আর মুনাফাখোর বাজার সিন্ডিকেট এখন একাকার। এদের দুই এর অশুভ আঁতাত দেশের মানুষকে নিঃস্ব করে ফেলছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিটি পণ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ অবস্থায় নিম্ন আয়ের শুধু নয়, মধ্যবিত্তরাও চরমতমভাবে অসহায় হয়ে পড়েছেন। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছে না মানুষ। আর সিন্ডিকেট সরকার উদ্ভট কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। সম্পূর্ণভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দায়ও চাপাচ্ছে বিএনপির ওপর।

গতকাল গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সরকার উৎখাতে আন্দোলনকারীদের তাদেরও কিছু কারসাজি আছে।’ এসমস্ত বক্তব্য বিকারগ্রস্ত মনেরই বহিঃপ্রকাশ।

রিজভী বলেন, ‘নিজেদের ব্যর্থতা, লুটপাট—চুরি—চামারী করে সেই অপকর্মের দায় নির্লজ্জের মতো বিএনপির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার অভ্যাস তাদের পুরানো। এই বৈশিষ্ট্য পাড়া—মহল্লার বখাটেদের মতো। বিএনপি যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে, তবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে বন্দী। এরপরেও বিএনপি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করেছে ? সরকার প্রধান হয়ে যখন অসাধু ব্যবসায়ীদের কন্ট্রোল করতে পারছেন না, তখন অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে ব্যর্থতার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘দেশে এখন নীরব দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পেটের ক্ষুধার জ্বালায় মা তার সন্তান বিক্রি করে দিচ্ছে। ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের পূর্বে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে বলে ডামি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। গতকালও এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি, বরং ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানিয়েছেন।

রিজভী বলেন, ‘চাঁদাবাজির কারণে দেশীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। ভারতের এসব পণ্যের গুণগত মান কম। চাঁদাবাজি নেই বলে দাম কম। সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশি এসব কৃষিপণ্যের দাম কিছুটা বেশী। এভাবে চলতে থাকলে কৃষকরা উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। আর এই সুযোগে বাংলাদেশের ওপর পার্শ্ববর্তী দেশের কর্তৃত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, ‘পবিত্র রমজান আসন্ন। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন সরকারি পদক্ষেপ অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে কোন কাজে আসছেনা।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব দীর্ঘদিন যাবৎ কারাগারে ডায়াবেটিস ও লিভারজনিত রোগে ভুগছেন। কারাকতৃর্পক্ষের অবহেলায় সুচিকিৎসা পাচ্ছে না। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সে এখন হাটতেও পারছে না। আমি অবিলম্বে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব এর সুচিকিৎসার জোর আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় তার কিছু হলে সরকারকেই এর দায় বহন করতে হবে।’