বাগেরহাট সদর উপজেলার সড়কে বছরে ৬ মাসই কাদা-পানি, দুর্ভোগ

প্রকাশ : 2022-08-19 19:12:52১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বাগেরহাট সদর উপজেলার সড়কে বছরে ৬ মাসই কাদা-পানি, দুর্ভোগ

অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ার হলেই ডুবে যায় সড়কটি। বাগেরহাট সদর উপজেলার গাওখালী-রঘুনাথপুর সড়কেঝুঁকি নিয়ে কাদা-পানি মাড়িয়ে বাড়ি ফিরছে শিশু-কিশোরেরা। অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ার হলেই ডুবে যায় সড়কটি। গতকাল বাগেরহাট সদর উপজেলার গাওখালী-রঘুনাথপুর সড়কে ঝুঁকি নিয়ে কাদা-পানি মাড়িয়ে বাড়ি ফিরছে শিশু-কিশোরেরা।বছরে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে কাদা-পানি থাকে বাগেরহাটে সদর উপজেলার গাওখালী-রঘুনাথপুর সড়কে। অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে ডুবে থাকে এই রাস্তা। কাদা-পানি মাড়িয়ে চলতে হয় দুই গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে। দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিলেও রাস্তাটি সংস্কার বা পাকা হয়নি। দ্রুত রাস্তাটি মাটি দিয়ে উঁচু এবং পাকা করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাস্তাটি কাদা-পানিতে একাকার হয়ে আছে। কাদা-পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা। কাদায় পিছলে পড়ে অনেকে আহতও হয়েছে। ভিজেছে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার গাওখালী-রঘুনাথপুর হয়ে মূল সড়কে যাওয়ার জন্য মধ্যবর্তী এই দুই কিলোমিটার রাস্তা দুই দশক আগে ইটের সোলিং দিয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু রাস্তার বেশির ভাগ ইট উঠে গেছে। আর যে অংশে এখনো ইটের সলিং রয়েছে, তা আস্তে আস্তে উঠে কাদায় পরিণত হচ্ছে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্মিত বাঁধ ও রাস্তা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি বাড়লেই তলিয়ে যায়। ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ।

গাওখালী গ্রামের বৃদ্ধ বিমলা সাহা বলেন, ‘সারা জীবন স্বপ্ন দেখেছি, একটি পাকা রাস্তা হবে। সরকার এসেছে, সরকার বদলেছে, অপেক্ষা শেষ হয়ে আক্ষেপে পরিণত হয়েছে; কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হয়নি আমার।’

স্থানীয় মনিষ কান্তি সাহা বলেন, ‘বৃষ্টি হলে কাঁচা রাস্তায় কাদা-পানি জমে থাকে। তখন হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়ে। আর কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিতে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। জেলা শহরের এত কাছে থেকেও আমাদের মতো হতভাগ্য আর কোনো এলাকা নেই।’

গাওখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উৎপল সাহা বলেন, বিদ্যালয়ে যেতে হলে ভিজে যেতে হয়। কাদায় পিছলে অনেক সময় পড়ে যায়। এভাবে বিদ্যালয়ে যেতে তাঁদের আর ভালো লাগে না।কালকেও তাদের দুই বন্ধু পানির মধ্যে পড়ে গেছে। জোয়ারের সময় হাঁটুপানির মধ্য দিয়ে যেতে তাদের খুব ভয় লাগে।

তারক ভৈরাগী নামের এক ব্যক্তি বলেন, বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। কাদায় পড়ে, না পানিতে ডুবে। জোয়ারে রাস্তায় অনেক স্রোতও হয়। বড়রাই ঠিকভাবে চলতে পারেন না, সেখানে ছোট বাচ্চারা কীভাবে চলবে?

গাওখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সাহা বলেন, রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে কষ্ট হয়। রাস্তাঘাট খারাপ হওয়ায় অনেকেই বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের (গাওখালী) ইউপি সদস্য ইলিয়াস বালি বলেন, গ্রামের মধ্যের দুই কিলোমিটার রাস্তার কিছু জায়গার ইট উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।

গোটাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলী বলেন, আশপাশে পাকা রাস্তা থাকলেও দুই গ্রামের মধ্যে মাত্র দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার জন্য স্থানীয়রা কিছুটা ভোগান্তিতে রয়েছেন। তবে খুব দ্রুত এখানে পিচের সড়ক হবে বলে আশা করেন তিনি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি এই রাস্তার বিষয়টি আমাদের জানাননি। আপনাদের মাধ্যমেই জানলাম। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’