বাগেরহাট সংবাদ
প্রকাশ : 2023-03-22 11:55:19১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বাগেরহাটে ঘূর্নিঝড় মৌসুমে করনীয় বিষয়ে প্রস্তুতি সভা
বাগেরহাটে আসন্ন ঘূর্নিঝড় মৌসুমে করনীয় বিষয়ে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার [২১ মার্চ] দুপুরে সাপোর্টিং কেয়ার বাংলাদেশের বাংলাদেশ র্যাপিড নিড এ্যাসেসমেন্ট প্রকল্পের সহযোগিতায় রুপান্তরের আয়োজনে বাগেরহাট শহরের রেডি অডিটোরিয়ামে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য দেন, বাগেরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুর রহমান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম রফিকুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সালেহা পারভীন, বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি নিহার রঞ্জন সাহা, সাবেক সভাপতি বাবুল সরদার, রুপান্তরের এ্যাডভোকেসি কো- অর্ডিনেটর তছলিম আহমেদ টংকার প্রমুখ। বক্তারা বলেন, উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট দেশের অন্যতম দূর্যোগ প্রবন এলাকা। প্রতিবছরই এখানে ঝড় জলোচ্ছাসসহ নানা দূর্যোগ হানা দেয়। দূর্যোগের সাথে বসবাস এই জেলার মানুষের। বিভিন্ন দূর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে জেলায় আরও বেশি আশ্রয়ন কেন্দ্র ও নোয়াখালির হাতিয়ায় নির্মিত মুজিব কেল্লার আদলে গবাদিপশুর জন্য আশ্রয়ন কেন্দ্র নির্মানের দাবি জানান বক্তারা। এছাড়া ধানী
জমিতে লবন পানি প্রবেশ করিয়ে চিংড়ি মাছ চাষ না করার জন্য সরকারে কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানান প্রস্তুতি সভায় অংশগ্রহনকারীরা।
খননে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তু প্রদর্শনী, সাড়ে ৬‘শ বছরের পুরোনো নিদর্শনে অভিভূত দর্শনার্থীরা
ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত স্থাপনা বিখ্যাত মুসলিম শাসক খানজাহান আলী [রহ] এর বসত ভিটা খননে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার [২১ মার্চ] দিনব্যাপি বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের সুন্দরঘোনা গ্রামে বসত ভিটার ডিবিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে আয়োজনে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সকালে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। এসময় বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া তাসনিম, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন, সহকারী পরিচালক মোঃ গোলাম ফেরদৌস, ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আখতারুজ্জামান বাচ্চু, বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মোহাম্মাদ যায়েদ, আল আমীন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ফিল্ড অফিসার মোসাঃ আইরীন পারভীন, মোঃ হাসানুজ্জামানসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রত্নবস্তুর প্রদর্শনী খবরে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা খানজাহান আলী (রহ) এর বসত ভিটায় ভীড় জমান। খননে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ষাটগম্বুজ খানজাহানিয়া-জব্বারিয়া আদর্শ আলিম মাদরাসার ৮ম শ্রেনির শিক্ষার্থী নুসরাত ফারিয়া বলেন, বাগেরহাট মানেই খানজাহান আলী [রহ]। খানজাহানের বসত ভিটায় এসে যেসব পুরোনো ব্যবহার্য্য পাত্র ও পাথর দেখলাম। তা দেখে আমি অভিভুত। সাড়ে ৬‘শ বছর আগেও যে মানুষ আধুনিক ছিল, তা এখানের নির্মাণশৈলী দেখলে বোঝা যায়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক লাভভি ইয়াসমিন বলেন, ‘খান জাহানেরজ বসতভিটা হিসেবে সংরক্ষিত এই প্রত্নস্থলটিতে বেশ কয়েকবার খনন করা হয়েছে। এবারের খননে প্রাচীন দেয়াল, মেঝে, পয়নিষ্কাশন প্রণালির নালা, পোড়ামাটির তৈরি পাইপসহ বিভিন্ন স্থাপত্য নিদর্শন প্রদীপদানি, পোড়ামাটির পুঁতি, লাল, কালো ও ধূসর বর্ণের মৃৎমাত্র, প্লেট, গ্লাস, পিরিচ, নল, জালের গুটি, টাইলস, অলংকৃত ইটসহ বিভিন্ন প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে। এই প্রদর্শনী শেষে প্রত্নবস্তুগুলো বাগেরহাট যাদুঘরে সংরক্ষন করা হবে। পরবর্তীতে এই গবেষনাপত্র প্রকাশেরও ইচ্ছে পোষন করেন বিভাগীয় এই কর্মকর্তা। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, পৃথিবীর প্রাচীন শহরের মধ্যে খলিফাতাবাদ অন্যতম। যা কালের বিবর্তনে বাগেরহাট নাম ধারণ করেছে। বাগেরহাটের ইতিহাস, ঐহিত্য অনেক প্রাচীন ও সম্মৃদ্ধ। প্রত্মসম্পদে ভরপুর এই জেলা। এই জেলাকে পর্যটকদের জন্য আরও বেশি আকর্ষনীয় করতে প্রত্মসম্পদ বিষয়ে গবেষনা বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানান জেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
প্রভাবশালীদের অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য আর শিল্প দূষণে আক্রান্ত সুন্দরবন
রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহলের অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য আর শিল্প দূষণে আক্রান্ত সুন্দরবন। বিষ প্রয়োগে মৎস্য নিধন, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, পরিকল্পিত অগ্নিকান্ড ও বন্যপ্রাণী হত্যা এবং প্লাস্টিক দূষণ-শিল্প দূষণে বিপর্যস্ত সুন্দরবন। পশুর নদীতে কলকারখানার বর্জ্য ও জাহাজি বর্জ্য নিক্ষেপ, কয়লা এবং তেলবাহী জাহাজডুবির মাধ্যমেও সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র হুমকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের ফুসফুস বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় সরকার ও আইনশৃংখলা বাহিনীকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।মঙ্গলবার [২১ মার্চ] বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক বন দিবস উপলক্ষে সুন্দরবনের ঢাংমারিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন [বাপা], ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার এবং ঢাংমারি ডলফিন সংরক্ষণ দলের আয়োজনে বনজীবিদের অংশগ্রহণে মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। “করবো বন সংরক্ষণ, সুস্থ থাকবো সারাক্ষণ” শ্লোগানে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন [বাপা] এর কেন্দ্রীয় নেতা পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মোঃ নূর আলম শেখ।
এসময় বক্তব্য রাখেন বাপা নেতা ঢাংমারি ডলফিন সংরক্ষণ দলের টিম লিডার ইস্রাফিল বয়াতি, বাপা নেতা শেখ রাসেল, বাপা নেতা হাছিব সরদার, বনজীবি স্টিফেন হালদার, বনজীবি বেল্লাল বেপারী, বনজীবি সাথী আদিত্য, মধুসূদন মন্ডল, বনজীবি লিপি বেগম, বনজীবি কল্পনা সরদার, বনজীবি তরুন মন্ডল, বনজীবি লিপি বেগম, বনজীবি তপন মন্ডল প্রমূখ। মানবন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, পুরো সুন্দরবন এবং সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদী প্লাস্টিকে সয়লাব হয়ে গেছে। গবেষণায় সুন্দরবনের মাছে ক্ষতিকর মাইক্রো প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। গত ২০ বছরে ২৪ বার অগ্নিকান্ডে ৭১ একর বনভূমি পুড়ে ছাই হয়েছে। বন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী মহল মুনাফালোভী ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে এসব পরিকল্পিত অগ্নিকান্ড ঘটায়। সুন্দরবন রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি বন রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলি যদি দায়িত্ব পালনে সততা-নিষ্ঠা- দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দেয় এবং তারা যদি প্রকৃতি প্রেমিক না হয় তাহলেই অচিরেই সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। মানববন্ধনে বক্তারা সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা থেকে বন বিনাশী প্রকল্প বাতিল করে পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
বিদেশি পর্যটক নিয়ে আবারও সুন্দরবনে আসছে গঙ্গা বিলাস
ভারতীয় পর্যটকবাহী প্রমোদতরী ‘গঙ্গা বিলাসে’ করে আবারও সুন্দরবনে আসছেন বিদেশি পর্যটক।বুধবার [২২ মার্চ] সুন্দরবনের ঢাংমারী স্টেশন থেকে সরকারি রাজস্ব দিয়ে তারা বনের বিভিন্ন স্থানে প্রবেশ করবেন। এ যাত্রায় চারজন সুইস এবং দুইজন জার্মান পর্যটক থাকবেন। এসময় তাদের সঙ্গে দু’জন সশস্ত্র বনরক্ষী নিযোজিত থাকবেন বলেও খুলনা বনাঞ্চলের বনসংরক্ষক [সিএফ] মিহির কুমারদো মঙ্গলবার [২১ মার্চ] দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মিহির কুমার দো বলেন, প্রথমে বিদেশি এই ছয় পর্যটক বুধাবার (২২ মার্চ) সুন্দরবনের ঢাংমারী স্টেশন থেকে সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য তাদের সরকারি রাজস্ব ফি জমা দিবেন। সেখান থেকে ওইদিন তারা বনের হারবাড়িয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে যাবেন।
এরপর বৃহস্পতিবার [২৩ মার্চ] প্রমোদতরী গঙ্গা বিলাসে করে তারা যাবেন সুন্দরবনের কচিখালী এলাকায়। সেখানে ভ্রমন করে পরদিন ২৪ মার্চ তারা কটকা এলাকার জামতলা সী বিচ ঘুরে দেখে রাতেই আবার ওই প্রমোদতরীতে উঠবেন। এদিন পশুর নদী পাড়ি দিয়ে পর্যটকবাহী বিলাসবহুল এই প্রমোদতরী ২৫ মার্চ বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ ভ্রমন শেষে ওইদিনই আবার নদী পথে খুলনার আংটিহারা এলাকায় ইমিগ্রেশন করতে যাবেন এই বিদেশি পর্যটকরা। ২৬ মার্চ ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে ভারতের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জলসীমা ত্যাগ করবেন তারা। প্রসঙ্গত, গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে চারজন সুইস, দুইজন জার্মান ও একজন অস্ট্রেলিয়ানসহ ২৮ জন পর্যটক নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী দিয়ে সুন্দরবনের নৌ সীমান্ত পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভারতের প্রমোদতরী ‘গঙ্গাবিলাস’। পরদিন ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যটকবাহী বিলাসবহুল পাঁচ তারকা মানের এ জাহাজটি মোংলা বন্দরের জেটিতে আসলে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী অভ্যার্থনা জানান।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ছয় পর্যটক ছাড়া বাকি পর্যটকরা গত ১৯ মার্চ ঢাকার হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বিন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।