বাগেরহাটে সড়কের পাশে জমজমাট খাঁটি দুধের হাট 

প্রকাশ : 2021-04-14 19:09:38১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বাগেরহাটে সড়কের পাশে জমজমাট খাঁটি দুধের হাট 

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাগেরহাটের খাঁটি দুধের হাট। প্রতিদিন ভোর থেকে দুধের এই হাট জমজমাট থাকে ক্রেতা–বিক্রেতাদের সমাগমে। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার লিটার দুধ বিক্রি হয় এই হাটে। তবে এবার করোনার কারণে লকডাউনে কেজিতে দুধের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে গেছে। এ অবস্থায় দুগ্ধ খামারিরা গো-খাদ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। 

বাগেরহাটের খুলনা মোংলা মহাসড়কের পাশে চুলকাঠী বাজার এলাকায় প্রতিদিনই বসে এই দুধের হাট। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই হাটে খুলনা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মোংলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা দুধ কিনতে আসেন। বুধবার সকালে চুলকাঠী সড়কের পাশে বসা দুধের হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেউ হেঁটে, কেউ মোটরসাইকেলে, কেউবা ভ্যানে, কেউ আবার গাড়িতে করে দুধ নিয়ে আসছেন হাটে। পাইকারসহ স্থানীয়রা এসব দুধের ক্রেতা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায় খামারিদের সব দুধ। স্থানীয় দুই শতাধিক খামারি এই হাটে দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব খামারে উৎপাদিত দুধ চলে যায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। কেউ কেনেন মিষ্টির দোকানের জন্য, কেউবা হোটেলের জন্য। আবার কেউ কেউ বাড়িতে খাওয়ার জন্যও দুধ কিনে নিয়ে যান এই হাট থেকে। ভেজালমুক্ত ও দাম কম হওয়ার কারণে দূর থেকে এখানে আসেন ক্রেতারা। তবে করোনাকালে মিষ্টির দোকান, হোটেলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুধের দাম কমে গেছে।

চুলকাঠি বাজারের আসা স্থানীয় হরিপদ কুন্ডু (৬৫) বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে এখানে দুধের হাট বসে। দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন দুধ কিনতে। আমিও আগে এই হাটে দুধ বিক্রি করতাম। এখন বয়স হয়ে গেছে। দুধ নিয়ে আসতে পারি না। কিন্তু হাটের প্রতি মায়ার কারণে প্রতিদিন ঘুরতে আসি।’

দুধ বিক্রেতা মো. ইয়াসিন মোল্লা বলেন, ‘নিজের বাড়ির গরু থেকে সংগৃহীত দুধ নিয়ে প্রতিদিন এখানে আসি। অল্প সময়ের মধ্যে সব দুধ বিক্রি হয়ে যায়। দুধ বিক্রির অর্থেই চলে আমাদের সংসার। স্বাভাবিক সময়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করলেও করোনা এবং লকডাউনের কারণে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

আলমগীর শেখ নামের করোরী গ্রামের দুধ বিক্রেতা বলেন, ‘দুটি গাভী থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৫ কেজি দুধ এই হাটে নিয়ে বিক্রি করি। বর্তমানে দাম কমের কারণে গরুর খাবার ও নিজেদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তারপরেও এই দুধ বিক্রির ওপরে নির্ভরশীল আমরা।’ 

খুলনার খালিশপুর থেকে থেকে দুধ কিনতে আসা মিজানুর রহমান বলেন, ‘খাঁটি দুধ পাওয়া যায়ম তাই পাঁচ বছর ধরে এই হাট থেকে দুধ সংগ্রহ করি। আগামীকাল থেকে রোজা শুরু। তাই আজকে একটু বেশি করে দুধ কিনে নিয়ে যাচ্ছি। তবে মহাসড়কের পাশে হাটটি হওয়াতে অনেক দুর্ঘটনার খবরও শুনেছি।’

চুলকাঠী বাজার কমিটির সভাপতি মুরারী কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘দুধের হাটটি একশ’ বছরের পুরানো। আমরা কোনো খাজনা নেই না। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার লিটার দুধ বিক্রি হয় এ হাটে। ক্রেতা-বিক্রেতারা এসে নিজেদের সুবিধামত ক্রয়-বিক্রয় করেন। তবে করোনার প্রভাবে আগের চেয়ে এখন একটু কম আসে দুধ।’ তিনি বলেন, ‘মহাসড়কের পাশ থেকে পার্শ্ববর্তী কোনো স্থানে হাটটি যদি স্থানান্তরিত করা হয়, তাহলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই দুর্ঘটনা থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ‘সরেজমিনে গিয়ে বাজার কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মতামত গ্রহণ করা হবে। তারা যেখানে উপযুক্ত মনে করেন সেখানেই হাটটি স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’