বাগেরহাটে প্রেমের টানে পালিয়েছে কিশোর-কিশোরী, ঘরবাড়ি-ভাংচুর লুটপাট

প্রকাশ : 2021-12-23 20:02:30১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বাগেরহাটে প্রেমের টানে পালিয়েছে কিশোর-কিশোরী, ঘরবাড়ি-ভাংচুর লুটপাট

বাগেরহাটে প্রেমের টানে বাড়ি থেকে পালিয়েছেন দশম শ্রেণি পড়ুয়া কিশোর স্মরণ কুমার বর্মণ (১৬) এবং একই শ্রেণির কিশোরী ইভা আক্তার (১৬)। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়ের বাবা ও তার লোকজন ছেলের বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট ও ছেলের বাবাকে মারধর করেছেন।মেয়েকে ফিরে পেতে বাগেরহাট মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মেয়ের মা বিউটি বেগম।পলাতক কিশোর-কিশোরীদের বাড়ি ফিরে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন পরিবার ও স্থানীয়রা। এদিকে পলাতক কিশোর-কিশোরীকে খুজে বের করতে শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক।

পলাতক কিশোর স্মরণ কুমার বর্মণ বাগেরহাট সদর উপজেলার কুড়শাইল গ্রামের সাধন কুমার বর্মনের ছেলে। কিশোরী ইভা আক্তার পার্শ্ববর্তী আড়পাড়া গ্রামের মাসুদ মোড়লের ছেলে। তারা দুইজনই আড়পাড়া-কুড়শাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ শ্রেণিতে পড়াশুনা করতেন।

পলাতক কিশোরের বাবা সাধন কুমার বর্মন বলেন, ইভা আক্তারের সাথে আমার ছেলের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এই অসম প্রেম থেকে বিরত থাকার জন্য বিভিন্ন সময় আমার ছেলেকে বকাঝকা ও মারধরও করেছি। তাতেও ফেরেনি তারা। একপর্যায়ে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে ছেলে মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এর জেরে মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে ইভার বাবা মাসুদ মোড়ল ও তার লোকজন আমার বাড়িতে এসে কলাপ্সিপল গেট, আলমারি ও টিভি ভাংচুর করে। এসময় বেশকিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে যায় তারা। তাদের ভয়ে আমি প্রতিবেশী প্রদীপ মন্ডলের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ভাংচুর শেষে তারা ওই বাড়িতে এসে আমাকে মারধর করে, মাসুদ মোড়লের দায়ের কোপে আমার বাম হাতের মধ্য আ্গুল কেটে ঝুলেগেছে। আমাকে ঠেকাতে এসে মাসুদের মারধরে অমিত সাহা ও প্রদীপ মন্ডলও আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ছেলে-মেয়ে পালিয়েছে প্রেমের টানে। এতে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তারপরও আমি এবং আমার আত্মীয় স্বজন ছেলে-মেয়েকে খুজতেছি। কিন্তু কোনভাবে সন্ধান পাচ্ছি না। আমরা চাই ছেলে-মেয়ে বাড়িতে ফিরে আসুক।

কিশোরের মা কৃষ্ণা রানি বর্মন বলেন, প্রেমের সম্পর্কের কারণে ছেলে-মেয়ে পালিয়েছে। এতে আমাদের দোষ কি। তারপরও মেয়ের বাবা আমার স্বামীকে মারধর  করেছে, কুপিয়েছে। গোয়ালের গরু ধরে নিয়ে গেছিল তারা, চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে ফেরত দিলেও আমাদেরকে এলাকা ছাড়া করার হুমকী দিচ্ছে তারা। ভয়ে যুবতী দুই মেয়েকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরা চাই যে কোন মূল্যে ছেলে-মেয়ে ফিরে আসুক। আমরা শান্তিতে বসবাস করি।

কিশোরের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে পলাতক কিশোরীর মা বিউটি বেগম বলেন, আমার মেয়ে ইভা আক্তার খুবই সহজ সরল প্রকৃতির। স্মরণ কুমার বর্মন ও আমার মেয়ে একই শ্রেণিতে পড়লেও স্মরণ খুবিই বাজে প্রকৃতির একটি ছেলে। সে নিয়মিত নেশা করে। নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে নেশাখোর স্মরণ কুমার বর্মন। আমি কখনও আমার মেয়েকে ছাড়া থাকিনি, আপনারা যেকোন মূল্যে আমার মেয়েকে এনে দিন এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বিউটি বেগম। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামীর মানসিকভাবে অসুস্থ্য। মেয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবরে সে একটু বেশামাল হয়ে পড়েছে। যার কারণে তাকে একটু অন্য বাড়িতে রাখা হয়েছে। তবে ছেলের বাড়িতে যেয়ে ভাংচুর-লুটপাটের ঘটনা সঠিক নয়।

এদিকে হামলা-মামলা ও ভাংচুর বাদ দিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর-কিশোরীকে খুজে বের করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় আসাদুজ্জামান মোড়ল, হুমায়ুন কবির মোড়ল, সবুজ মোড়ল নামের কয়েকজন বলেন, এলাকার সবাই জানে এই ছেলেমেয়ের প্রেমের সম্পর্কের কারণে ঘর ছেড়েছে। এটা কারও একার দোষ নয়। এক্ষেত্রে উত্তেজিত না হয়ে সবাই মিলেমিশে এদের খুজে বের করা প্রয়োজন।

জয়ন্তী রানী বর্মন নামের এক নারী বলেন, ছেলে-মেয়ে তাদের কর্মের ফল ভোগ করবে। কিন্তু বাবা-মায়ের উপর অত্যাচার, বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট এক ধরণের অশভ্যতা। আমরা এলাকাবাসী এসব চাই না।

হানিফ মোড়ল নামের এক বৃদ্ধ বলেন, মেয়েটা অনেক ভাল ছিল কিন্তু কেন এমন করল জানিনা। তবে সবকিছু ভুলে তাদের উচিত ফিরে আসা। তাহলে দুই পরিবারই শান্তিতে থাকতে পারবেন।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, আমরা কিশোরীর মায়ের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের তদন্ত চলছে। ঘনিষ্ট সম্পর্কের কারণে ঘর ছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর-কিশোরীকে উদ্ধার করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি।