বাগেরহাটে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ
প্রকাশ : 2022-04-08 18:58:41১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার নবপল্লী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিবপদ মজুমদারের বিরুদ্ধে ভুয়া এমপিও শীট তৈরি, বেতন করানোর কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা গ্রহন, শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ, হাজিরা খাতা আটকে রাখাসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষকের অন্যায় আচরণের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার বাওয়ালী বলেন, প্রধান শিক্ষক শিবপদ মজুমদার এমপিও (বেতন) করে দেওয়ার কথা বলে ২০১৮ সালে আমার কাছ থেকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেন। শুধু আমার কাছ থেকে নয়, সহকারি শিক্ষক লিপন হালাদারের কাছ থেকে ৬০ হাজার, সরোজ কুমার মজুমদারের কাছ থেকে ৯০ হাজার, সহকারী গ্রন্থাগারিক সুনীতি রানী বিশ্বাসের কাছ থেকে ৪০ হাজার এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কৃষ্ণপদ মৃধার কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা নেন। আমাদের পাঁচ জনের কাছ থেকে মোট ৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নেয় সে। প্রায় সাড়ে চার বছর হয়ে গেলেও আমাদের এমপিও হয়নি। বরং আমাদেরকে একটি ভুয়া এমপিও ভুক্তির কাগজ দিয়েছেন তিনি।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য দিপঙ্কর মন্ডল বলেন, প্রধান শিক্ষক শিবপদ মজুমদারের স্বেচ্ছাচারিতায় স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা খুবই বিরক্ত। নানা অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মফিজুর রহমান তদন্তও করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভুয়া এমপিও শীট তৈরি ও শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের প্রমান মিলেছে। এরপরেও গায়ের জোরে সে পদে রয়েছেন।বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য তাকে এখান থেকে সরানো প্রয়োজন।
সহকারি শিক্ষক পরিতোষ কুমার মন্ডল বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদের হাজিরা খাতা আটকে রাখেন, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেন না আমাদের। সরকারি ভাবে এমপিও ছাড় হলেও, গেল দুই মাস আমরা বেতন পাই না। কিন্তু প্রধান শিক্ষক এমপিও শীটে ফ্লুড দিয়ে আমাদের ৭জন শিক্ষকের বেতন সংখ্যা মুছে দিয়ে তার নিজেরসহ তিনজনের বেতন তুলেছেন। শুধু তার স্বেচ্ছাচারিতায় আমরা সাতজন বেতন পাই নাই। আমাদের বেতন কেন হয়নি, তা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আরও খারাপ ব্যবহার করেন আমাদের সাথে।
পরিতোষ কুমার মন্ডল আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে আমরা কিছু বললে তিনি আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ প্রদান করে বিভিন্ন জায়গায়। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারি শিক্ষকদের বাকবিতন্ডা হয়। বাক বিতন্ডা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য তার কক্ষে থাকা বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনের ছবি ভাংচুরের কথা বলে চিতলমারী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। আসল কথা হচ্ছে তার কক্ষ সব সময় তালা মারা থাকে। সে যখন অফিসে থাকেন তখনও ভিতর থেকে তালা দিয়ে তিনি অফিসের কাজ করেন। যার ফলে তার কক্ষে সহকারী শিক্ষকদের প্রবেশের তেমন সুযোগ নেই। মূল শিক্ষকদের হয়রানি করার জন্যই তিনি এসব মিথ্যা গল্প সাজিয়ে থাকেন।
রিনা রানী গোলদার নামের আরেক সহকারী শিক্ষক বলেন, আমরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। তদন্তও হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরপরেও তিনি আমাদের উপর নানা অত্যাচার করে যাচ্ছেন। আমরা তার অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শিবপদ মজুমদার বলেন, কয়েকজন শিক্ষকদের নিয়োগে ঝামেলা রয়েছে। এজন্য তাদের এমপিও হয়নি। এখানে আমার কিছু করার নেই, কিন্তু এই এমপিওকে কেন্দ্র করে আমাকে মারধরও করেছেন শিক্ষকরা। তাদের ভয়ে আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
টাকার বিষয়ে শিবপদ মজুমদার বলেন, এমপিও করার জন্য আমি একা টাকা গ্রহন করিনি। এর সাথে আরও অনেকে রয়েছে।
এবিষয়ে বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আানিত অভিযোগ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।