বাগেরহাটে ধর্ষণ চেষ্টায় সমাজপতিদের সালিশী

প্রকাশ : 2022-08-05 19:32:49১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বাগেরহাটে ধর্ষণ চেষ্টায় সমাজপতিদের সালিশী

বাগেরহাটে ধর্ষনের চেষ্টার ঘটনায় আসামীকে ৫হাজার ও বাদিনীর ১০ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে স্থানীয় সমাজপতিরা। বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের হালিশহর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সীমা বিশ্বাস বাদী হয়ে মোকাম বাগেরহাট বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই‘২২ রাত ৯টার দিকে সীমা বিশ্বাস নিজ ঘরে দরজা দিয়ে ঘুমাচ্ছিল। এ সময় সীমা বিশ্বাসের স্বামী বাড়িতে না থাকায় একই গ্রামের মৃত অমূল্যবালার ছেলে সাধন বালা (২৫) অত্যন্ত সু-কৌশলে ঘরের খিরকি খুলে ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় সাধন বালা তাকে জাপটে ধরে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানী ঘটায়। ভুক্তভোগী তার ইজ্জত বাচাতে ধস্তা-ধস্তি করে ও একপর্যায়ে সাধন বালা জোর পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা করে।  এ সময় তার স্বামী সজীব হালদার বাড়িতে প্রবেশ করলে দেখে তার স্ত্রীকে সাধনবালা ধস্তাধস্তি করছে। আসামীর নখের আচরে বাদীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে দাগ পড়ে।  আসামী সজীব হালদারকে দেখেই দ্রুত দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন সাধন বালাকে ধরে ফেলে। এ সময় সমাজপতিরা এসে সাধন বালাকে উদ্ধার করে ও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীর স্বামীকে মিমাংশার আশ্বাস দেন। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর স্বমী সজীব হালদার জানান,আমি কাজ শেষে রাতে বাড়িতে প্রবেশ করে দেখি সাধন বালা আমার স্ত্রীর জোর করে ধর্ষনের চেষ্টা করছি। আমি দ্রুত এগিয়ে আসলে সে পালিয়ে যেতে চাইলে এলাকা বাসি তাকে ধরে ফেলে। সমাজপতিরা এসে সাধন বালাকে উদ্ধার করে ও বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় সমাজপতিরা গত ২৯ জুলাই বিকালে সমাজপতির বাড়িতে আলোচনায় বসে। এসময় সমাজপতিরা আমাকে বলে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিবো তা মানতে হবে নইলে গ্রাম ছাড়া করে দেব বলে সাদা কাগজে আমার সাক্ষর নেয়। এ সময় সমাজপতি হালিশহর গ্রামের উত্তম কুমার মজুমদার (৫৫), সন্তোষপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুশান্ত হালদার (৫০), স্থানীয় স্বপন মজুমদার, ঠাকুরদাস গোলদার, সুভাষ দাস, ক্ষিতিষ বালা ও বিপুল গোলদার অভিযুক্ত সাধন বালাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। আমি তাদের এ শালিশী মানতে রাজি হয়নি। সমাজপতিরা আমাকে ও আমার পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করবে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে আমি শালিসী অমান্য করেছি বলে আমাকে ৫ শত টাকা জরিমানা করে। এ সময় আমি সমাজপতিতের হাত-পা ধরে কান্না কাটি করি। এক পর্যায়ে ১০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড় পাই। তিনি এ ঘটনার সঠিক বিচার চান। 

এ বিষয়ে সন্তোষপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুশান্ত হালদার জানান, এলাকার যে কোন ঘটনা আমরা সমাজপতিরা একত্রিত হয়ে এভাবে সমাধান করে থাকি। এ বিষয়টিও আমরা জানতে পেরে আমরা সমাজপতিরা একত্রিত হয়ে বিষয়টি সমাধান করি। এতে অভিযুক্ত সাধন বালাকে ৫ হাজার টাকা ও শালিসী অমান্য করায় সজীব হালদারকে ১০ টাকা জরিমানা করা হয়। তাৎক্ষনিক এই জরিমানার ৫হাজার ১০ টাকা স্থানীয় সমাজপতির কোষাধ্যক্ষর কাছে রাখা হয়। 

সাত গ্রাম হিন্দু সমাজের সভাপতিস্বপন মজুমদার বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে এভাবে সাধারন মানুষের সমস্যা সমাধান করে থাকি। ইতি পূর্বে কখনো এ ধরনের কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। তিনি বলেন, সকলের মতামতের ভিত্তিতে দুই পক্ষের প্রতিশ্রুতি নিয়েই এর সমাধান করেছি। নির্ধারিত দিনে সাধন বালা তার দোষ স্বীকার করায় আমরা সকলের মতামতের ভিত্তিতে সাধন বালাকে ৫ হাজার ও সালিশী অমান্য করায় সজিব হালদারকে ১০ টাকা জরিমানা করি।

এ বিষয়ে সমাজপতির অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতিষ বালা বলেন, আমরা এলাকার ছোটখাটো বিষয় এ ভাবেই সমাধান করে থাকি। আমরা সকলে সম্মিলিত হয়ে সকলের মতামতের ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। 

এ বিষয়ে বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।