বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের দাবীতে আন্দোলনের ডাক
প্রকাশ : 2022-03-23 19:12:46১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদেতে এবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
দায়মুক্তির সংস্কৃতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মাঝে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময় নির্বাচন এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা একই সঙ্গে চলেছে। গত বছর দুর্গোৎসব চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ও সহিংস ঘটনায় সংখ্যালঘুদের মনে ক্ষতের সৃষ্টি হলেও এ বিষয়ে সরকার বিচার করেনি।
শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে বর্তমান সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে এবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) বিকেল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে সমবেত হয়ে পদযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দু’লাখ নাগরিকের গণস্বাক্ষারসম্বলিত স্মারকলিপি দেয়ার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হবে।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত। সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির তিনজন সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিওসহ সংগঠনের অনান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রানা দাশগুপ্ত বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ অঙ্গীকার করেছিল, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করবে। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করবে। বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন করবে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন করবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি, পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের জন্য স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠন করবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতির ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এসব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উদ্যোগ তারা দেখতে পারেনি।
রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, গত ৯ মার্চ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ ৩৩টি সংগঠন মিলে গঠন করা সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার সভায় এসব দাবি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৪ মার্চ প্রায় দুই লাখ মানুষের স্বাক্ষরসংবলিত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেয়া হবে। দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর-উপাসনালয়-দোকানপাটে হামলা, ভূমি জবর দখল, অপ্রাপ্তবয়স্কা কন্যাদের অপহরণ ও ধর্ষণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, কথায় কথায় দেশত্যাগের হুমকি ইত্যাদি অনেকটা নিত্যদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্যে যত কথা-ই বলা হোক না কেন, তা অনেকটা কথার কথায় পরিণত হয়েছে। দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ সরকারি দল বা সরকারের পক্ষ থেকে আজও আন্তরিকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় এবং অস্তিত্বের সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষে ঐক্যমোর্চা গঠন করে মানবাধিকারের আন্দোলন পরিচালনা করা ছাড়া আজ সংখ্যালঘুদের সামনে আর কোন বিকল্প নেই। অভিযোগ করে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, নির্বাচন ও সাম্প্রদায়িক হামলা একসঙ্গে চলেছে। এবারের নির্বাচন কমিশনে অন্তত একজন সংখ্যালঘু প্রতিনিধিকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই দাবি মানা হয়নি। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে নির্বাচন কমিশন কোনো আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারেনি। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের নিশানা করে বিশেষ মহল আক্রমণ চালায়। আগামী দুই থেকে আড়াই বছর সময় খুব সংকটপূর্ণ।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয় না। সংখ্যালঘু মানেই নৌকার ভোটার। তাদের সমস্যার সমাধান না করলেও তারা নৌকাতেই ভোট দেবে- এমটা ভেবে নেয়া ঠিক হবে না। গতবছর দুর্গা পূজার সময় ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসন হয়নি। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাম্প্রদায়িকতা ঢুকেছে। রাজনীতির সাম্প্রদায়িকতা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।