বাংলাদেশ ও ভারতের চলমান উত্তেজনা নিয়ে যা বলল রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত
প্রকাশ : 2025-12-22 15:41:13১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক শুধু দুই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট মন্তব্য করতে চাই না। তবে পরিস্থিতিটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। কারণ, এটি শুধু দুই দেশের জন্য নয় বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি ভূরাজনৈতিক বিষয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে যদি ফলপ্রসূ সমাধান না আসে।”
এসময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা যত দ্রুত সম্ভব কমানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, “ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের বড় ভূমিকা ছিল এবং রাশিয়াও তখন সমর্থন দিয়েছিল। ভারত, বাংলাদেশ ও রাশিয়া কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছিল। ওই সময় মাইন পরিষ্কারের কাজেও সহযোগিতা করা হয়েছিল।”
নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে খোজিন বলেন, “আমার অবস্থান পরিষ্কার— যেকোনো ধরনের উত্তেজনা যত দ্রুত সম্ভব কমাতে হবে।”
আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার প্রসঙ্গে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের উদাহরণ টেনে বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিবেশী বেছে নিতে পারি না। ইউক্রেনের সঙ্গে আমাদের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেটিও আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। একইভাবে এখানকার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।”
এ সময় তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য পড়েছি। তিনি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানের পথে এগোনোর কথা বলেছেন, যাতে উত্তেজনা যতটা সম্ভব কমানো যায়।”
আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে রাশিয়ার অবস্থান তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত খোজিন। তিনি বলেন, “অবশ্যই আমরা একটি ইতিবাচক, বন্ধুত্বপূর্ণ, অহিংস, চরমপন্থামুক্ত এবং সহিংসতামুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। এটি আমাদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এ দেশের জন্যও।”
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, “আমরা দেখেছি, বর্তমানে এ দেশে বিভিন্ন ধরনের অস্থিরতা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। আমরা বাংলাদেশে উত্তেজনা কমাতে আগ্রহী। এটি নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমরা স্বাগত জানাব। তবে আমন্ত্রণটি অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় হতে হবে। নির্বাচন কমিশনই এ বিষয়ে দায়িত্বশীল।”
তিনি যোগ করেন, “আমরা ইতিবাচকভাবে সাড়া দিতে প্রস্তুত। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ এলে তা মস্কোতে জানানো হবে। আমরা সেই আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের অপেক্ষায় রয়েছি।”
অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, “রাশিয়া যখন অন্যান্য দেশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়, তখন সাধারণত রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠনের সদস্য এবং কখনো কখনো স্টেট দুমা বা উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরাও থাকেন। অতএব নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”