বাংলাদেশে মোনালিসার যোগসুত্র রহশ্যময়!

প্রকাশ : 2022-07-30 12:19:58১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বাংলাদেশে মোনালিসার যোগসুত্র রহশ্যময়!

শিক্ষকতা নয়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রী হিসাবেই কি কেরিয়ার শুরু করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মোনালিসা দাস ? মন্ত্রীর সুনজরে এসেই কি পরবর্তী সময়ে পেশা বদল করেন তিনি? মোনালিসাকে নিয়ে এবার চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ্যে এল। মোনালিসার বাংলাদেশ যোগ নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছিল ঠিকই। তবে সেই যোগাযোগ যে কতটা গভীর সে সম্পর্কে একের পর এক তথ্য সামনে এসেছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে অভিনেত্রী হিসাবেও পরিচিতি আছে মোনালিসার। একসময় বাংলা সিরিয়ালে অভিনয় করতেন বলে সামাজিক মাধ্যমের কথোপকথনে স্বীকারও করেছেন তিনি। তবে শিক্ষার আঙিনা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল ও অভিনয় জগতেও মোনালিসার যথেষ্টই যাতায়াত রয়েছে।
 
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আব্দুল হামিদের সঙ্গে একাধিক অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে মোনালিসাকে। সে দেশের দুই শীর্ষ রাষ্ট্রপরিচালকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতাতেও মোনালিসা অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গেও যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা রয়েছে মোনালিসার। এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের সঙ্গে মোনালিসার সখ্যও সে দেশে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েছে।

বাংলাদেশ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সুমন ঘোষের সঙ্গে মোনালিসা

মান্নান চেয়ারম্যান থাকাকালীন তাঁর আমন্ত্রণে বিশেষ ভ্রমণের মধ্যমণি হয়েছিলেন মোনালিসা। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সুসজ্জিত স্টিমারে সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়েছিলেন মান্নান, মোনালিসারা। সেই যাত্রায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য মহম্মদ ফায়েকুজ্জামান সহ বাংলাদেশ ইউজিসির কয়েকজন উচ্চপদস্থ আধিকারিকও উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপিকার সম্মানে একাধিকবার বিশেষ ভোজের ব্যবস্থাও নাকি করেছিলেন মান্নান।

পশ্চিমবঙ্গের অনামী এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক অধ্যাপিকা বাংলাদেশে কীভাবে এত গুরুত্ব পাচ্ছেন, তা নিয়ে উঠেছে হাজারো প্রশ্ন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে নাম জড়ানোর আগে বৃহত্তর পরিসরে মোনালিসাকে কেউ চিনতই না। শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী বা গবেষক হিসাবেও তিনি স্বনামধন্য নন। এরকম প্রোফাইলের এক শিক্ষিকা কোন জাদুবলে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে শিক্ষা বা অভিনয় জগতে প্রভাব বিস্তার করলেন, তা এখনও রহস্যাবৃত।

পার্থর দৌলতেই কি তাহলে বাংলাদেশে প্রভাব বেড়েছে মোনালিসার? এই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই। সূত্রের খবর, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে পার্থ ও মোনালিসাকে পাশাপাশি দেখা গিয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে মোনালিসার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সবমিলিয়ে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে কেউটে।

কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকার বাংলাদেশ যোগে সুমন ঘোষ নামে এক যুবকের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সুমনের সঙ্গে প্রায় দশ বছর আগে পরিচয় হয় মোনালিসার। তারপর তাঁদের সখ্য বাড়ে। বাংলাদেশের শিক্ষাজগতের কেষ্টবিষ্টুদের অন্দরমহলে অবাধ যাতায়াত রয়েছে সুমনের। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলেও তাঁর যোগাযোগ ভালোই।
 
এপারে পার্থর কেলেঙ্কারি এবং তাতে মোনালিসার নাম ওঠার খবর ভাইরাল হতেই ওপারে সুমনের সঙ্গে মোনালিসার বহু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষামহলে সুমন ও মোনালিসা রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সুমন ও মোনালিসাকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। মোনালিসা যেমন ঘন ঘন বাংলাদেশ যেতেন তেমনই সুমনও বেশ কয়েকবার কলকাতায় এসেছিলেন। কলকাতায় সুমন ও মোনালিসার সাক্ষাতের একাধিক ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে।

শিক্ষা দপ্তর বাদ দিলেও বাংলাদেশে একাধিক সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কার্যত সেলেব্রিটির মর্যাদা পেয়েছিলেন মোনালিসা। বাংলাদেশের এক অধ্যাপকের কথায়, সুমনই মোনালিসার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম সিনেমার নায়িকা। পরে শুনলাম অধ্যাপনা করেন। অবাক হলাম যখন জানলাম আমার সহকর্মীদের অনেকেই ওঁকে আগে থেকেই চেনেন। শিক্ষক হিসাবে মোনালিসা যতটা পরিচিত, আমাদের মহলে অভিনেত্রী হিসাবে তার চেয়ে কম পরিচিত নন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও মোনালিসার যাতায়াত ছিল। টিভি চ্যানেলেও তাঁর সাক্ষাত্কার দেখানো হয়েছে। শিক্ষার সূত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্বাভাবিক ব্যাপার। রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক শিক্ষকই নানা সময়ে বাংলাদেশে গিয়েছেন বিভিন্ন সেমিনারের আমন্ত্রিত বক্তা হিসাবে। তবে তাঁদের কেউই মোনালিসার মতো প্রভাবশালী ছিলেন না যে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা ইউজিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বারবার একান্ত আলাপচারিতার সুযোগ পাবেন।

বাংলাদেশ যোগ নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে জানতে একাধিকবার মোনালিসার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজের উত্তর দেননি। যদিও ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, তিনি একটি শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। নিজের যোগ্যতাতেই চাকরি করছেন। কোনও অনৈতিক কাজকর্মের সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। সুমনের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকেও কোনও উত্তর মেলেনি। সবমিলিয়ে মোনালিসার রহস্যময় জীবনযাত্রা নিয়ে ধোঁয়াশা ক্রমেই বাড়ছে। তদন্তকারী সংস্থা সেই রহস্যে আলো ফেলতে পারে কি না, সেটাই দেখার।

সৌজন্য, উত্তর বাংলা সংবাদ।