বাংলাদেশের উৎপাদিত পাটের আঁশ বিশ্বমানের হলেও মূল্য পাচ্ছে না কৃষক
প্রকাশ : 2024-09-07 17:15:56১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল। পাটকে বলা হতো সোনালি আঁশ। এই পাট দেশে এবং বিদেশে রফতানি করে দেশ প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জন হতো। বর্তমানে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ফলে পাটশিল্প আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে বসেছে।
সরেজমিনে উত্তর জনপদের শষ্য ভান্ডার নামে খ্যাত রংপুরের কাউনিয়ায় চলতি পাট মৌসুমে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। পাটকে সোনালি আঁশ বলা হলেও বিগত বছর গুলোতে পাট যেন সোনা রঙ থেকে তামাটে বর্ণ ধারণ করেছে। একসময় পাট রফতানির করে দেশে বড় অংকের বৈদেশীক মূদ্রা অর্জন হতো। সেই পাট রফতানি এক দশকে কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। এত এত উদ্ভাবনের পরেও কেন রফতানি খাতে পাট সুবিধা করতে পারছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে মেলেনি সদুত্তর। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, অনেক কিছু উদ্ভাবন হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বাজারজাতে প্রচুর সময় অপচয় হয়। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাটের সোনালি ব্যাগ উদ্ভাবন করা হলেও সরকারি স্বীকৃতি পেতে এর উদ্ভাবককে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৮ বছর। বাংলাদেশের জলবায়ু পাট উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। বাংলাদেশের উৎপাদিত পাটের আঁশ বিশ্বমানের। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানি করে থাকে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পাট মন্ত্রণালয় বছরের পর বছর লোকসান করতে থাকে। কাউনিয়ায় ইতিমধ্যে ক্ষেত থেকে পাট কাটা, পচানো পাট থেকে আঁশ ছড়ান, পাট শুকান এমন কি পাট হাটে বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রথমের দিকে আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকলেও পরবর্তিতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় পাটের আশানুরুপ ফলন হয়েছে। গত বছর মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো থাকলেও পরে দাম কমে যাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেকে। এ বছর সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকেরা। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এখনও পাট শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু এরই মধ্যে সরকার বেশকিছু পাটকল বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা, পাটকলের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা। পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা জানান, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে উফশী পাট উৎপাদনের লক্ষ্যে কাউনিয়া উপজেলায় কৃষদের প্রশিক্ষণ ও উন্নত পাট বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। পাট যে জমিতে উৎপাদন করা হয়, সে জমিতে ৬০ শতাংশ পাতা ঝরে পড়ে এগুলো পচে জৈবসার উৎপাদন করে যা মাটিকে উর্বর করে এবং পরবর্তী ফসল উৎপাদনের জন্য অনেক সহায়ক হয়।
কৃষকরা জানান বিগত বছর ঘুলোতে চাষীরা পাট চাষে লোকশানে পড়লেও পুনরায় পাট চাষে ফিড়েছে। গদাই গ্রামের চাষী আল আমিন পাটের দাম ভালো পাওয়ায় আশায় মৌসুমের শুরুতেই চাষীরা পাট চাষের দিকে ঝুকে পড়েছেন। তবে পাট কলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ বছর দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে পাটের চেয়ে পাট খড়ির দাম বেশী পাওয়া যায়। পাটের এই হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে পাট শিল্পকে আবারও জাগ্রত করতে হবে এবং কৃষকদের ন্যায্যমূল্য ফিরিয়ে দিতে হবে। তাহলে আমাদের পাটশিল্প আবার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন বর্তমানে বাজারে পাটের দাম ভালো যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় পাট উৎপাদন হয়েছে ভালো।