বন্যা পরবর্তী দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের তৎপরতা নেই: রিজভী
প্রকাশ : 2024-10-20 14:49:25১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় এবং প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, শেরপুর, নেত্রকোণাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলে বন্যায় এবং প্রবল বর্ষণে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন একটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যায় যেভাবে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক তৎপরতা দেখা দিয়েছিল সেটি বর্তমানে দেখা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক বন্যায় কৃষক ও খামারিদের অতি দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যা উপদ্রুত মানুষ ও তাদের পরিবারের দুরাবস্থার বিষয়ে সরকারকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। বাজারে চাল-ডাল-সবজি-মাছ-মাংস-ডিমের সরবরাহ ঠিক রাখতে হলেও সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সার, কীটনাশক ও বীজের সরবরাহ বাড়িয়ে কিংবা প্রণোদনা দিয়ে কৃষক ও খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত আবাসন পুননির্মাণ, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ ও পুষ্টির মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাগুলোর ঘাটতি যাতে না হয়, সেটি বিবেচনা করে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই বন্যাজনিত সংকটে শিশুরা যাতে অপুষ্টিতে না ভোগে সেজন্য সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বন্যা পরবর্তী অসুস্থতা ও পানিবাহিত রোগ নিরাময়ে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সরকারকে কর্মতৎপর হতে হবে।
রিজভী বলেন, ভয়াবহ বন্যায় শেরপুর ও নেত্রকোনায়য় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন রোপা আমন ও সবজি চাষীরা। সরকারি সূত্র থেকে জানা যায়, শুধু নেত্রকোণা জেলার পাঁচ উপজেলায় ২০ হাজার ৯০০ ৯ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে ৭০ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ শো কোটি টাকা।
অন্যদিকে, সবজি চাষের ক্ষতি হয়েছে ১৬০ হেক্টর জমির। এতে ৫৩২০ কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। প্রায় ১৭৩০টি পুকুর এবং মৎস্য খামার ডুবে গেছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ ৮ কোটি টাকা। শেরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০ জন কৃষক। এ বছর ৯৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছিল, তার মধ্যে ৩৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যায় নষ্ট হয়েছে।
এসময়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন রুহুল কবির রিজভী। দাবিগুলো হলো, বন্যার পানিতে যাদের জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে তাদের সঠিক তালিকা প্রনয়ন করে আগামী ফসল না উঠা পর্যন্ত তাদেরকে সর্বাত্মক ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা, আগামী ফসলের জন্য সুদমুক্ত কৃষি ঋণ প্রদান ও বিনা মূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচের তেলের ব্যবস্থা করা। আগামী ফসলের আগে রবি শষ্য উৎপাদনের জন্য তাদের মধ্যে রবি শষ্যের বীজ প্রদান করবো। বন্যার পানিতে যাদের মৎস্য, হাঁস-মুরগি, গবাদী পশুর খামার বিনষ্ট-মৎস্য, গবাদী পশু ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের সঠিক তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে পুনরায় খামার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সুদমুক্ত ঋণসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা।
এছাড়া বন্যার পানিতে যাদের বাড়ি-ঘর আংশিক ও পুর্ণাঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের তালিকা তৈরি করে ঘর-বাড়ি পুন:নির্মাণে সহায়তা প্রদান করতে হবে। নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যে সব গ্রাম-পাড়া-মহল্লা বিলীন হয়ে গেছে, সে সব স্থানে বসবাসকারীরা বর্তমানে উদ্বাস্ত হয়ে গেছে, তাদেরকে সরকারি খাস জমিতে/আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থানান্তরিত করা। যে সব বাঁধ, রাস্তা, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক ও ধ্বংস হয়ে গেছে, সেগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা। বন্যার পানিতে যেসব ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাসামগ্রী বিনষ্ট হয়ে গেছে, তাদেরকে সরকারি উদ্যোগে শিক্ষা সামগ্রী ও সহায়তা প্রদান করা। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে রোগ-বালাইগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে চিকিৎসা দিতে হবে।
কা/আ