বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’র ফরাসি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন
প্রকাশ : 2021-06-18 17:01:08১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের ফরাসি সংস্করণ ‘জার্নাল ডি প্রিজন’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ জুন) প্যারিসের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানায়। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি নিউইয়র্ক থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন।
এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ফরাসি লেখক, দার্শনিক ও চলচ্চিত্রকার বার্নার্ড হেনরি লেভি, বিশেষ বক্তা হিসেবে ঢাকা থেকে অংশ নেন জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবনের ১৩টি বছর পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন, পরিবার পরিজনকে ছেড়ে কারাগারে অন্তরীণ জীবন যাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্ব সচেতনতা তৈরিতে এক সোচ্চার কণ্ঠস্বর।
টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বাংলায় দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষায় বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠা অনিবার্য। শান্তির যে বার্তা তিনি প্রচার করে গেছেন, সেটাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূল মন্ত্র ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’। বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার জীবন দর্শন আমাদের অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস।’
দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন এ গ্রন্থের অনুবাদক অধ্যাপক ফিলিপ বেনোয়েত এবং বইটির প্রকাশনী সংস্থার প্রতিনিধি বার্ট্রান্ড ফেভারেল।
বিশিষ্ট ফরাসি, লেখক, দার্শনিক ও চলচ্চিত্রকার বার্নার্ড হেনরি লেভি তার বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, এ বইয়ে আমি বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর শুনতে পাই।
লেভি তার বক্তব্যে তিনটি বিশেষ দিক তুলে ধরেন। প্রথমত তিনি ফ্রান্সে বসবাসরত শেষ প্রজন্মের মানুষ যিনি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন। তিনি বলেন, এ বইয়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন মিষ্টতার প্রকাশ অনুভব করতে পেরেছি, তেমনি দৃঢ়তাও ফুটে উঠেছে। তার ওপর যন্ত্রণার অনুভূতি যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতের আশাবাদও ব্যক্ত হয়েছে।
লেভি বলেন, এ গ্রন্থের মাধ্যমে জনমানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমত্ববোধ আস্বাদন করতে পেরেছি। এটি স্থায়ীভাবে এ গ্রন্থে গ্রথিত হলো। বঙ্গবন্ধু তার বইতে যেভাবে ফরাসি বিপ্লবের কথা বলেছেন, ফরাসি জনগোষ্ঠীর সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছেন, সেই একইভাবে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে বিশিষ্ট ফরাসি দার্শনিক অঁন্দ্রে মার্লোও বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে তার সমর্থন প্রকাশ করেন।
কোভিড মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি, অনুবাদক, প্রকাশক সংস্থার প্রতিনিধি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সশরীরে অংশ নেন। ফ্রান্সে থাকা অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূত, বিশিষ্ট গুণীজনসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য অনুষ্ঠানটি একইসঙ্গে অনলাইনে প্রচার করা হয়।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘কারাগারের রোজনামচা’র ফরাসি অনুবাদ করা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
প্যারিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটি বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি জীবনের দিনলিপি। কারাবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু নিজের পরিবার পরিজনের চেয়েও দেশ, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করেছেন। কীভাবে পাকিস্তানি শাসক বাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন, দেশের মানুষকে মুক্তির আন্দোলনে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা বিধৃত হয়েছে এ বইয়ে।
ড. মোমেন ভার্চুয়ালি এবং বার্নার্ড হেনরি লেভি দূতাবাসে যৌথভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। রাষ্ট্রদূত বইটি প্রকাশনায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। গ্রন্থটি আজ থেকে ফ্রান্সের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে।