বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কেন সবাই থমকে গেল সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : 2022-01-05 15:42:06১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর কেন সবাই থমকে গেল সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যে জাতি এক নেতার ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র তুলে নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। সেই নেতাকে যখন তার পরিবারসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হলো তখন সবাই কেনও থমকে গেল তা একটা বিরাট প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের জবাব কখনও খুঁজে পাইনি। তবে হয়তো পাবো। অবশ্য কিছু লোক বিভ্রান্ত হলেও মূল দল আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সব সময় সোচ্চার ও সক্রিয় ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ফার্মগেট খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরে দেশ গড়বে—যা স্বাধীনতাবিরোধী ও যেসমস্ত বড় দেশ আমাদের সমর্থন করেনি বরং পাকিস্তানিদের সমর্থন করেছিলো—তারা বাংলাদেশের অভ্যুত্থান মেনে নিতে পারেনি তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল। জিঘাংসা চরিতার্থ করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি দেশ বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়ে গেছেন। আদর্শ দিয়ে গেছেন। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেট শুধু জাতির পিতাকে কেড়ে নেয়নি, সেই স্বাধীনতার চেতনা ও আদর্শকে বুলেটবিদ্ধ করেছিল, ধ্বংস করে দিয়েছিল। সংবিধানটিকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছিল।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি অনেককে দেখেছি হয়তো কিছু সময়ের জন্য বিভ্রান্ত হন। কিন্তু দলের তৃণমূলের নেতারা কখনও ভুল করে না। হয়তো কেউ ক্ষমতার লোভে পড়ে যান। বারবার আঘাত এসেছে। পার্টিও ভেঙ্গেছে। আবার দলকে গড়তে হয়েছে। কাজেই ছাত্রলীগকে বলবো সংগঠনটাকে গড়তে হবে।
আওয়ামী লীগর সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর সহযোগী সংগঠনগুলোকে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার লক্ষ্য ছিল দলকে আগে গড়ে তোলা। ক্ষমতায় যেতে হবে তখনই—যখন দেশের মানুষের জন্য কাজ করার শক্তি নিয়ে যাচ্ছি। যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ আমি করিনি, করবোও না। আমার লক্ষ্য ছিল আমি ক্ষমতা চাই দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে। এভাবে আমি ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয়েছি। কাজও করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই ছাত্রলীগ এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছে। বাংলাদেশের সকল সংগ্রাম ও ইতিহাসের সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সাল থেকেই চিন্তা করেছিলেন পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা যাবে না। এজন্য তিনি নিউক্লিয়াস গঠনসহ নানা পদক্ষেপ নেন। সেখানে ছাত্রলীগ ছিল তার অগ্রগামী দল। তিনি যখনি যে কাজ করেছেন সবার আগে ছাত্রলীগকে মাঠে নামিয়েছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান— ‘জয় বাংলা’কে মাঠে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগ। জাতীয় পতাকার ডিজাইন করে তৈরি রাখার নির্দেশও ছাত্রলীগকে দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দি হলে ছাত্রলীগের দায়িত্ব আমার মা নিজেই নিতেন।
এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সব চেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে। ছাত্রলীগের ইতিহাসের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত রয়েছে।
ছাত্রলীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে সবসময় আদর্শ নিয়ে গড়ে তুলতে হবে। ক্ষমতা লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে ওঠে নিজেদের আদর্শবান কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করতে পারলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া কোনও কঠিন কাজ নয়। কাজেই আমি এটুকু চাইবো—রাজনৈতিক নেতা হিসেবে যারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে চাও, আদর্শ নিয়ে সততার সঙ্গে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হবে। চলমান বিশ্বে সবসময় নিজের গতি ঠিক রেখে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যেতে হবে—তবেই এ দেশের নেতৃত্ব দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করতে পারবে।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, চীন ভ্রমণের ওপর তার লেখা বইগুলো সবার পড়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আর যেন কোনও হায়েনার দল এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আছে জানি। ওইগুলো আমি মাথায় রাখিও না। আমি বিভ্রান্তও না। কারণ আমরা সারাজীবনই দেখেছি এটা হচ্ছে, এটা হবেই। কিন্তু একটা আদর্শ নিয়ে চলতে গেলে, আর একটা লক্ষ্য স্থির করে চললে, আর বাংলাদেশের তৃণমূলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে গেলে যারা ওপরে থেকে বেশি বেশি খায়, বেশি বেশি পায় তাদের তো একটু দুঃখ থাকেই। তারা ভাবে আমাদের বোধ হয় জায়গা হবে না। সেইজন্য ষড়যন্ত্র করতেই থাকে। আর কিছু লোকের তো লক্ষ্যই থাকে—ওই একটা পতাকা পেতে হবে বা একটু ক্ষমতায় যেতে হবে বা ইত্যাদি। এই ধরণের যাদের আকাঙ্ক্ষা বেশি তারা তো দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে না।
তিনি বলেন, তাই তারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকে। কিন্তু নীতি-আদর্শ নিয়ে চললে পরে, আর সৎ পথে চললে পরে যে কোনও বাধা অতিক্রম করা যায়। সেটা প্রমাণ করেছি আমরা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়েছে একটি সিদ্ধান্ত থেকে। যেদিন পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর দোষারোপ করলো, দুর্নীতি হয়েছে। সেটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম। এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যখন প্রমাণ করতে পারে নাই তারপরেই সারা বিশ্ববাসী বা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, এক সময় যাদের কাছ থেকে আমরা ঋণ নিলে তারা মনে করতো যে আমাদেরকে খুব করুণা করলো। আমি কিন্তু সেই চিন্তা থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে এনেছি। যে আমরা ঋণ নিয়ে সুদসহ সেটা শোধ দেই। এইটা কখনও অনুদান না।
তিনি বলেন, কাজেই আমরা কিন্তু এখন পরনির্ভরশীল না। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প আমরা স্ব-অর্থায়নে করতে পারি। সেটা আমরা দেখিয়েছি এবং পদ্মা সেতু আমরা স্ব-অর্থায়নে যে আমরা করতে পারি সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এই একটা সিদ্ধান্ত থেকেই কিন্তু সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পাল্টে গেছে। এখন কেউ আমাদের করুণা করতে সাহস পায় না, বরং আমাদের সমীহ করে চলতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই অর্জনটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। কারণ আমাদের দেশের কিছু মানুষ সেই পাকিস্তান আমল থেকে দেখি সব সময় কোনও একটা প্রভু খুঁজে নিয়ে তাদের পদলেহন করতে ব্যস্ত থাকে। তাদের কোনও আত্মমর্যাদা বোধ নাই, তাদের নিজের প্রতি কোনও আত্মবিশ্বাস নাই। এদের দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণ হয় না।
তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর অনেক সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করেছে—এদেশে তো কিছুই নেই, আপনি কি দিয়ে এই দেশ গড়বেন? তিনি কী বলেছিলেন? বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। এই মাটি, মানুষ দিয়েই আমি দেশ গড়বো। মাটি মানুষ দিয়েই যে দেশ গড়া যায় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।