পেছনে কারা, খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা

প্রকাশ : 2023-09-07 12:46:48১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

পেছনে কারা,  খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টম হাউসের গোডাউন থেকে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণ উধাওয়ের ঘটনায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও সিপাহিদের সঙ্গে আর কাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। ঊর্ধ্বতনও কোনও কর্মকর্তা জড়িত কি না, এসব বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে।

চুরির মামলাটি বিমানবন্দর থানা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) উত্তরা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য জানিয়েছে ডিবি।

ডিবি বলছে, এত বড় সংখ্যক স্বর্ণ একদিনে গোডাউন থেকে বের করা হয়নি, ধাপে ধাপে বের করা হয়েছে। এ ছাড়া এত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ভেদ করে ঊর্ধ্বতন কোন কোন কর্মকর্তার মদদে এসব স্বর্ণ সরানো হয়েছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এত বিপুল সংখ্যক স্বর্ণ কি প্রক্রিয়ায় গোডাউন থেকে বের করে বাইরে আনা হয়েছে এবং কোথায় বিক্রি করা হয়েছে এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজধানীর তাঁতিবাজার ও বায়তুল মোকাররম বেচাকেনার একটি বড় জায়গা। এসব জায়গায় স্বর্ণ বিক্রি করা হয়েছে কি না, সেসব বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া স্বর্ণ বিক্রি করা হতে পারে, এসব সম্ভাব্য জায়গাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোডাউন থেকে স্বর্ণ বের করে যখন কাস্টমসের কর্মকর্তারা এ ঘটনা থেকে বাঁচতে পারবেন না বুঝতে পেরেছেন, ঠিক তখনই তারা স্বর্ণ চুরির নাটক সাজিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও সিপাহি নিয়ামত হাওলাদার পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে গোডাউন থেকে স্বর্ণ সরিয়েছেন। তাদের সঙ্গে স্বর্ণ বেচাকেনার ব্যক্তিদের যোগাযোগ রয়েছে, এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ধরনের অপকর্মের সঙ্গে কাস্টমসের কর্মকর্তাদের আর কোন কোন স্তরের কর্মকর্তারা জড়িত, এসব বিষয় তদন্ত করা হচ্ছে। যদিও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা অন্যদের যোগসূত্র ছাড়া স্বর্ণ সরানো সম্ভব নয়।

তারা আরও বলছেন, মামলার এজাহারে গত ২ সেপ্টেম্বর গোডাউন থেকে চুরির ঘটনার উল্লেখ করা থাকলেও তার আগের এক-দুই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ কাস্টমসের কাছে চাওয়া হলেও সরবরাহ করতে পারেনি। কাস্টমস থেকে জানানো হয়, সিসিটিভি অকেজো অবস্থায় ছিল। এত বড় একটি ঘটনার আগে কী কারণে সিসিটিভি অকেজো ছিল, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গোডাউনে স্বর্ণ রাখা ছিল। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম রয়েছে জব্দ করার তিন দিন পর জব্দ স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে পারে। ২০২০ সালের জব্দ করার স্বর্ণগুলো কী কারণে গোডাউনে সংরক্ষিত ছিল, এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাস্টমসের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন ছাড়া অন্য কেউ সেই গোডাউনের আশপাশে যেতে পারতো না। দায়িত্ব পালনের আগে পরে চেকিং ব্যবস্থা কী ধরনের ছিল, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার আকরাম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গোডাউনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ভেদ করে কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে স্বর্ণ সরানো হয়েছে, চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চার সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টমসের গোডাউন থেকে স্বর্ণ চুরির অভিযোগে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে চুরির মামলা করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

তার আগে ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে গোডাউন থেকে স্বর্ণ উধাওয়ের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে কাস্টমসের গুদাম কর্মকর্তা মাসুদ রানা। এ ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গোডাউনে কর্মরত এ, বি, সি এবং ডি—চার শিফটের সরকারি রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুম রানা, সাইদুল ইসলাম শাহেদ, মো. শহিদুল ইসলাম, আকরাম শেখ এবং সিপাহি মো. রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, মো. আফজাল হোসেন, মো. নিয়ামত হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনও সদুত্তর পাননি কর্মকর্তারা।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় আটক করা ৩৮৯টি ডিএম থেকে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণ লকার ভাঙা আলমারিতে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনাটি ২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ১৫ মিনিট থেকে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের মধ্যে যেকোনও সময় কে বা কারা গোডাউন থেকে স্টিলের আলমারির লকার ভেঙে চুরি করে নিয়ে গেছে। স্বর্ণগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য উল্লেখ করা হয় ৪৫ লাখ টাকা।