পৃথিবীর অন্যতম পুষ্টিকর ফল অ্যাভোকোডা চাষ মাদারীপুরে
প্রকাশ : 2022-08-16 19:47:22১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
পৃথিবীর অন্যতম পুষ্টিকর ফল অ্যাভোকোডা চাষ মাদারীপুরে চাষ হচ্ছ। ফলে বানিজ্যের অপার সম্ভারনা দাড়প্রান্তে মাদারীপুর।
আকারে ১০ ফুট উচ্চতার একটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে চকচকে সবুজ রঙের ফল। দেখতে অনেকটা পেয়ারা বা নাশপাতির মতো। একেকটির ওজন প্রায় আধা কেজি। পাতার ফাঁকে হাওয়ার সঙ্গে দোল খাচ্ছে সেই ফলগুলো। কী লোভনীয় সেই দৃশ্য। এর হাত দশেক পরেই এমনই আরও এক গাছ। পেয়ারা বা নাশপাতির মতো হলেও গাছগুলোর ফল পেয়ারা বা নাশপাতি নয়। তাই এই ফল ও এই গাছ ঘিরে মানুষের কৌতুহলের অন্ত নেই। অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখেন ফলগুলো। অনেকে ভালো লাগা থেকেই কিনে রোপণ করতে চান এই ফলের গাছ। দেখতে পেয়ারা বা নাশপাতির মতো এই ফলটি এক একটি থোকায় ২ থেকে ৩টি করে ফল ধরেছে। এ ফলটির সঙ্গে পরিচিত নয় বলে হর্টিকালচারে চারা কিনতে আসা অনেকেই কৌতুহল নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন ফলগুলো। অনেকে চারা কিনে রোপণ করারও আগ্রহ প্রকাশ করেন। শুধু তারা নয়, এই ফলটির সঙ্গে এখনও পরিচিত নয় বাংলাদেশের অধিকাংশ অ লের মানুষ। অথচ পৃথিবীর দামি ফলের মধ্যে এই ফলটি অন্যতম। এছাড়াও এফলটি ওষুধি গুণাগুণে ভরপুর। তাই এখান থেকে আরও চারা তৈরির মাধ্যমে ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে হর্টিকালচার সেন্টার কর্তৃপ¶ের।
মাদারীপুর হর্টিকালচার সূত্রে জানা যায়, এ অ্যাভাকাডো ফলের জন্মস্থান মে·িকো ও গুয়াতেমালা। পরে এটি আমেরিকা ও ক্যারাবিয়ান দেশগুলোতে বিস্তার ঘটে। বাংলাদেশে অ্যাভোকাডোর গাছ আছে মাত্র ১৫ থেকে ২০টি। এর মধ্যে দুটি গাছ বেড়ে উঠেছে মাদারীপুর হর্টিকালচার সেন্টারে। ২০১৮ সালে তিনটি গাছ রোপণ করা হয় এখানে। এর মধ্যে ১টি মারা যাওয়ায় এখন রয়েছে এ দুটি অ্যাভোক্যাডো গাছ। এ বছর এই দুটি গাছে প্রায় দুই শতাধিক ফল এসেছে। গাছগুলোর আকার ছোট। সাধারণত কলমের চারায় পাঁচ বছর পর ও বীজের চারায় আট বছর পর ফল ধরে। কিন্তু মাদারীপুর হর্টিকালচারের মাটি অ্যাভোকাডো চাষের উপযোগী হওয়ায় ২-৩ বছরেই ফল ধরেছে। এবার বিশেষ যতেœ এ গাছের পরিপক্ব ফল দেশেই পাওয়া যাবে। এখানে এক একটি অ্যাভোকাডোর ওজন হয়েছে ৪০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পযন্ত। তাছাড়া কয়েক বছরের মধ্যে এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টারে অ্যাভোক্যাডোর চারা সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। একসময় সারাদেশে এ ফলের চারা বিস্তার করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন এখানকার উদ্যানতত্ত্ববিদরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রহিম হাওলাদার বলেন, ‘আমি মাদারীপুর হর্টিকালচারে এসে বিভিন্ন রকমের ফল দেখেছি। তার মধ্যে অ্যাভাকাডো ফলটি দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। এখানকার কৃষিবিদদের কাছে শুনলাম এই ফলটিতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। আমার খুব ইচ্ছা এই অ্যাভাকাডো ফলের একটি চারা আমি বাসায় লাগাবো।’
মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব বেপারী বলেন, ‘অ্যাভাকাডো ফলটি বিদেশি। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি প্রচুর ভিটামিনে ভরপুর। এ ফলটি সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের হর্টিকালচারগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি যেহেতু দামি একটি ফল এবং জাতটি একটি সম্ভাবনাময়, তাই যারা নতুন কৃষি উদ্যোক্তা আছেন তারা এগিয়ে আসলে ভালো কিছু করতে পারবেন বলে আমি মনে করি।’
মাদারীপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক চেয়ারম্যান এস.এম সালাহউদ্দিন জানান, অ্যাভাকাডো ফলটি একটি উচ্চ মূল্য ও অধিক পুষ্টিসম্পন্ন একটি ফল। এতে ২২প্রকারের ভিটামিন ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান রয়েছে। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান। ডায়বেটিস রোগীদের বিশেষ ওষুধ হিসেবে কাজ করে এটি। যেভাবে দেশে ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছে, তাতে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ফল হবে এটি। মাদারীপুর হর্টিকালচারে ২টি গাছে এখন ফল ধরছে। আমরা এখান থেকে কলম ও বিজ থেকে চারা তৈরির মাধ্যমে সাধারণ চাষিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।