পিতার কাছে খোলা চিঠি
প্রকাশ : 2021-08-15 11:29:15১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
নূহ-উল-আলম লেনিন
----------------------------
আমরা ক্ষমার অযোগ্য পিতা, যদিও স্বভাবত তুমি ক্ষমাশীল
আমাদের ভীরুতা কাপুরুষতা এবং আত্মপরতা
আমাদের সম্মিলিত পাপ!
অপাপবিদ্ধ তোমাকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি।
যদিও সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে তুমি একা
তোমার বিশাল বুক আগলে রক্ষা করেছিলে;
দিয়েছিলে জাতি-রাষ্ট্র, বাঙালির আত্মপরিচয়।
তোমার অবিচল বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত, ‘কে তোরা, কি চাস’ ধ্বনি
যখন সমুদ্রগর্জনে আছড়ে পড়ল
বাংলাদেশের কূলে-উপকূলে, ঠিক তখন
তোমার বুক ভেদ করে অসংখ্য ঘাতক গুলি।
বত্রিশ নম্বরের সিঁড়ি বেয়ে তোমার উষ্ণ রক্তস্রোত
গড়াতে গড়াতে ঢেকে গেল মানচিত্র
ভেসে গেল বাংলার শ্যামল প্রান্তর
তেরো শত নদী।
আর ঠিক তখন আমরা কেউ হেঁসেলে কেউ গোয়াল ঘরে
ত্রস্ত ইঁদুরের মতো লুকিয়ে প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত!
আবার কেউ কেউ তোমার নামাঙ্কিত কালো কোট পরে
বঙ্গভবনে আনুগত্যের শপথ নিয়ে দাসখতে সই দেয়
চরম পুলকে।
তোমার রক্তাপ্লুত নিথর দেহ সিঁড়িতে রেখে
আমরা ক্লীব মেরুদণ্ডহীন তোমার কথিত ‘সৈনিক’
ঢুকে পড়ি অন্ধকার গুহার গভীরে।
তোমাকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি পিতা, পারিনি
বাঁচাতে মা’কে, স্বপ্নীল শিশু রাসেল, মেহেদির রংমাখা
পুত্রবধূদের আর জামাল কামালকে--রক্তের উত্তরাধিকার।
সেইদিন বাংলাদেশকে গিলে খায় রাক্ষসের দল
আর বিশ শতকের এজিদ বাহিনী নয়া মীরজাফর।
তোমাকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি পিতা--এ আমাদের পাপ
আমাদের ক্ষমাহীন অপরাধ--আমাদের পরাজয়।
অথচ কী বিস্ময়! মৃত্যুকে জিনে নিয়ে তুমি আজ মৃত্যুঞ্জয়ী,
তুমিই বিজয়ী।
তোমার নামেই আমাদের আত্মপরিচয়। তোমার নামেই জগৎসভা
করে নান্দীপাঠ। তুমি পেলে জনতার রায়--
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির অভিধা।
তোমার ভাষণ আজ মানবজাতির অভিন্ন বিশ্বের সম্পদ।
তুমি অবিনশ্বর বাঙালির স্বাধীনতা, ‘জয় বাংলা’
বাঙালির জয়ের পতাকা। দাসত্বের ক্লীবত্ব ঘুচিয়ে
তুমি জাতির পিতা, তুমিই বাংলাদেশ।
আমাদের ক্ষমা করো পিতা--
ক্ষমা করো আমাদের অক্ষমতা, আমাদের ভীরুতাকে
আমাদের সম্মিলিত পাপকে।
ক্ষমা করো পিতা, ক্ষমা করো আমাদের অপরাধ, আমাদের
লজ্জা আর দীনতাকে!