"পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি" বাতিলের দাবিতে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত

প্রকাশ : 2025-12-02 17:11:14১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

"পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি" বাতিলের দাবিতে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত

"পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি" নামক অবৈধ কালো চুক্তি বাতিলের দাবিতে আজ ০২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া(ভিআইপি) হলে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর উদ্যোগে নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নাগরিক সভায় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাছুম সাবেক ভিসি ও (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অবঃ আমান আযমি। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন রাওয়ার চেয়ারম্যান কর্নেল অবঃ আব্দুল হক , অধ্যাপক ড আবু মূসা মোঃ আরিফ বিল্লাহ (ভিজিটিং প্রফেসর,জঙ্জু নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়, চীন), বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অবঃ নাসিমুল গণী, সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অবঃ এইচ আর এম রোকন উদ্দিন, লেঃ কর্নেল অবঃ হাসিনুর রহমান, এস এম জহিরুল ইসলাম চেয়ারম্যান আরজেএফ, ব্যারিস্টার শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, এডভোকেট পারভেজ তালুকদার, আমিনুল ইসলাম বুলু, আব্দুল হান্নান আল হাদী, ড. শরিফ শাকি, মিজানুর রহমান, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, মু.সাহিদুল ইসলাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী ও পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুদ বলেন, বলেন ১৯৯৭ সালের আকজের এই দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিতর্কিত অধ্যায়ের সূচনা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও  জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) এর সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব, দেশের অখণ্ডতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলা এই চুক্তিটি সেসময় রাজনৈতিকভাবে “শান্তি প্রতিষ্ঠার সাফল্য" হিসেবে প্রচার পেলেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। চুক্তিটি শুরু থেকেই অসম, বৈষম্যমূলক এবং রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী বলে বহু বিশেষজ্ঞ, সামরিক কর্মকর্তা এবং নীতিনির্ধারক গণের বিশ্লেষণে উঠে আসে। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শান্তি চুক্তিকে কালো চুক্তি আখ্যায়িত করে জামাত, বিএনপিসহ সাত দলের সমন্বয়ে লংমার্চে করে ছিলেন।  চুক্তির মোট ৭২টি ধারার বহুাংশই সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, বিশেষ করে ভূমি ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক কর্তৃত্ব, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে গুরুতর অসঙ্গতি রয়েছে। চুক্তির সবচেয়ে বড় ত্রুটিগুলোর একটি হলো স্বাক্ষরের সময়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দু, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতামত বা অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

প্রধান আলোচক এর বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ভারতের গোলাম আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ২০০টির মত ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে গুটিয়ে নিয়ে ছিলো, ভারতের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করতে সুযোগ করে দিয়েছে একমাত্র ভারতের স্বার্থে। দেশের অখণ্ডতা রক্ষা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের উগ্রপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঘুষ্ঠি গুলোর দৌরাত্ম্য বন্ধে আরও অতিরিক্ত ৪টি পদাতিক ব্রিগেড পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থাপন করতে হবে।

বিশেষ অতিথি বক্তব্যে রাওয়ার চেয়ারম্যান কর্নেল (অবঃ) আব্দুল হক বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে পার্বত্য অঞ্চলকে সশস্ত্র বিদ্রোহ, হত্যা, অপহরণ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের হাত থেকে রক্ষা করার প্রধান প্রতিষ্ঠান ছিল সেনাবাহিনী। তাদের অভিজ্ঞতা, মাঠ বাস্তবতা, গোয়েন্দা মূল্যায়নকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র ভারতের প্রেসক্রিপশনে একটি রাজনৈতিক সংকল্পে চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেন শেখ হাসিনা। পরবর্তী সময়ে এতে অসংখ্য ত্রুটি ও বিচ্যুতির জন্ম হয়। এর ফলে পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামো ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, যা পরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর পুনরুত্থানকে আরও সহজ করে দেয়। এর ফলে পার্বত্য অঞ্চলে চলমান সংঘাত মোটেও বন্ধ হয়নি বরং তা ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চুক্তির আগে সশস্ত্র সংগঠন ছিল একটি এখন চুক্তির ফলে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫-৬ টিতে রুপান্তরিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে সন্তু লারমার দলের ৭৩৯ জন সদস্য কিছু অকেজো অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে যা মওজুদ অস্ত্রের তুলায় লোক দেখানো মাত্র। তখন ৭৩৯ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করলেও বর্তমানে ৬ টি সংগঠনের সশস্ত্র সদস্য রয়েছে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার, অবৈধ অস্ত্রের মৌজুদ রয়েছে লক্ষাধিক। কিন্তু চুক্তির মৌলিক প্রধান শর্ত ছিল, অবৈধ অস্ত্র পরিহার করে সন্ত্রাসীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। দুঃখজনক হলেও সত্য চুক্তির ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সন্তু লারমার জেএসএস সম্পূর্ণ অবৈধ অস্ত্র সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করেনি। বরং অত্যাধুনিক অস্ত্রের সংরক্ষণ বৃদ্ধি করেছে তা দিয়ে পূর্বের ন্যায় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, হানাহানি ও খুন-গুম এবং অরাজকতা করে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে নরকের পরিণত করেছে। এটা একপ্রকার রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল। তাদের প্রতি রাষ্ট্রের সহনশীল নীতিকে রাষ্ট্রের দূর্বলতা মনে করে দেশ বিরোধী শক্তির সাথেও জোটবদ্ধভাবে কাজ করছে।

সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর প্রধান সমন্বয় মোঃ মোস্তফা আল ইহযায বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় শান্তি চুক্তি নামক অবৈধ কালো চুক্তি বাতিল করে বাঙ্গালী এবং ১৩ টি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করে একটি সম্প্রীতি চুক্তি করতে হবে। সশস্ত্র দমনে সরকারের প্রশাসনিক পদক্ষেপ এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দল গুলোকেও পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

পাহাড়ে স্থায়ী শান্তির পথ তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়ায়ি রয়েছে,  ক. নিরাপত্তা, খ. সংবিধান, গ. সমঅধিকার। এই তিনটি স্তম্ভ শক্তিশালী করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আবার একটি শান্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ অঞ্চলে রূপান্তর করা সম্ভব। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও সামগ্রিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে এখনই সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তি আজ প্রমাণিত হয়েছে একটি বিভ্রান্তিমূলক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে। পাহাড়ের শান্তি, উন্নয়ন, নিরাপত্তা বা জাতিগত সম্প্রীতির কোনো লক্ষ্যমাত্রাই বাস্তবায়িত হয়নি। বরং চুক্তিটি নতুন সংকট, বৈষম্য ও রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির উত্থানের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই সময় এসেছে এই চুক্তিকে পুনর্মূল্যায়ন করে বাস্তবমুখী, সংবিধানসম্মত এবং সমঅধিকারভিত্তিক নতুন কাঠামো নির্মাণের।