পান বিক্রি করে জীবন চলে ৪ শতাধিক পরিবার
প্রকাশ : 2025-08-24 13:48:01১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, মইশখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম শেফালী ঘোষের গাওয়া গানের মতোই জনপ্রিয় মহেশখালীর পান। তেমনি দেশের অন্য অঞ্চলগুলোতেও পানের কদর কম নয়। খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে পান এই উপমহাদেশে প্রায় সবার কাছে সমাদৃত। তাদের কাছে পানের আবেদন যেন চিরদিনের। বিয়ে-বাড়িতে, ধর্মীয় উৎসবে, মেহমানদারিতে, আড্ডায় পান গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। পান ছাড়াা আচার-অনুষ্ঠান যেন অসম্পূর্ণ। কুষ্টিয়া, রাজশাহী, গাইবান্ধার রং-বেরঙের পানের জন্য কাউনিয়ায় পানের আড়ত রংপুর জেলায় বিখ্যাত। রাজশাহী, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া, গাইবান্ধার পান এই আড়তে আসে।
কাউনিয়া রেল স্টেশনে পানের আড়ৎ থেকে পান রংপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার বাজারেও সরবরাহ করা হয়। সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রামে বয়স্ক মানুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পান পুঁতলে শ্রবনে, খেয়ে না ফুরাবে রাবণে। এক অঘ্রানে ধান, তিন শ্রাবণে পান। ষোল চাষে মূলা, তার অর্ধেক তুলা, তার অর্ধেক ধান, বিনা চাষে পান। কাউনিয়ায় পান চাষের সম্ভাবনা থাকলেও কৃষি বিভাগের কোন উদ্যোগ নেই। কাউনিয়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে আমদানী করা পান আড়ৎদারের সাথে কথা বলে জানাগেছে, পাকিস্তান আমল থেকে ট্রেনে করে পান আসত কাউনিয়ায়। বর্তমানে সে বাজার ছোট হয়ে আসছে। কেবল ট্রাকে করে ১৫ থেকে ১৬ খাচা পান আসে। একটি খাচায় ৮০০ থেকে ১৫০০ বিড়া পান থাকে। প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার বীরা পান বিক্রি হয়। প্রতি খাচা পানের দাম বর্তমান বাজারে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। স্টেশনের পান আড়ৎদার এমদাদুল হক জানান কাউনিয়ায় ২টি পান আড়তে প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার পান বিক্রি হয়। এই উপজেলায় কুষ্টিয়া ভেড়ামারা, চুয়াডাঙা ও রাজশাহীর পানের চাহিদা বেশী। কোথাও পানের ৮০টিতে ১বিড়া হয়, কোথাও ৬৪টিতে ১বিড়া। রাজশাহীর পান মহেশখালীর মতো মিষ্টি নয়, তবে বরিশালের মতো ঝালও নয়। মিষ্টি পানের পাতা ছোট, মোটা, নরম ও লম্বাটে হয়। পানের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যা সাধারণত স্বাদ, আকার, এবং অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। কিছু জনপ্রিয় পান হলো- বাংলা পান, সাঁচি পান, মিঠা পান, গোলাব পান, জর্দা পান এবং বেনরসি পান। পান বিক্রেতা সাইদুল জানান, শীতকালে পানের দাম চড়া থাকে। পানের সরবরাহ বেশি থাকে আষাঢ়ে। পান গাছে কমপক্ষে ষোলোটি পান রেখে বাকি পান তুলে নেওয়া যায়। অঞ্চলভেদে আকারে, প্রকারে, গন্ধে, স্বাদে পান হয় ভিন্ন ভিন্ন। যেমন পার্বত্য অঞ্চলে তাদের উৎপাদিত পান খাসি পান নামে পরিচিত। তারা জানান এই পান ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় ৪০০ পরিবার। পান সুপারি বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে। এছাড়া আড়তে কাজ করে ১০জন কর্মচারী। তারা পান ব্যবসায়ীদের জন্য স্বল্প লাভে সরকারী ভাবে ঋণ সহয়াতার দাবী জানিয়েছেন। বর্তমানে পানের বাজার মূল্য ৩০টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
পান ক্রেতা মজিবর রহমান জানান, স্থানীয় ভাবে পান চাষের কোন উদ্যোগ নেই, এখানে পান চাষ হলে আমরা কম দামে পান খেতে পারতাম। জানাগেছে বাংলার দেওয়ানি লাভের পর রবার্ট ক্লাইভ ১৭৬৭ সালে পান চাষকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসায় পরিণত করেন। পানের গুণেরও শেষ নেই। সর্দি-কাশি কমাতে পান ভালো দাওয়াই। হজমে সাহায্য করে পান। শুধু রাজা-বাদশাহের দরবারে নয়, পানের গুণগান গাওয়া হয়েছে মধ্যযুগের অনেক কবি-সাহিত্যিকের লেখায়। আগেকার দিনে পান রাজা-বাদশাদের রাজকীয় খাবার থাকলেও, পান খাওয়ার প্রচলন এখন রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেই। সনাতন ধর্মের লোককথা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ পান খেতে পছন্দ করতেন বলে পানপাতাকে শুভ বা কল্যাণকর এবং পবিত্র বলে মানা হয়। তাই তো পুজো-পার্বণেও দেখে মেলে পানের বিশাল সমাহার। কাউনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আকতার জানান, পান লতাজাতীয় গাছের পাতা। পানের কোন ফল হয় না। তাই লতা থেকে লতার জন্ম পান। খনার বচনে ডেকে ডেকে খনা গান, রোদে ধান ছায়ায় পান। উপজেলায় ৪০ শতকের মধ্যে ২টি পানের বরজ হয়েছে, এখনও উৎপাদনে যায়নি, আশা করছি তারা উৎপাদনে গেলে এখনকার পানের চাহিদা মিটবে। নতুন ভাবে অর্থনৈতিক বাজার তৈরী হবে।