পাকিস্তানের বিপক্ষে বাজে ব্যাটিং-বোলিংয়ের খেসারত দিলো বাংলাদেশ

প্রকাশ : 2022-10-03 12:33:47১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

পাকিস্তানের বিপক্ষে বাজে ব্যাটিং-বোলিংয়ের খেসারত দিলো বাংলাদেশ

 রাতুল-আসিফ নামের দুই বন্ধু হবিগঞ্জ থেকে এসেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বলে তাদের বাড়তি উন্মাদনা। কিন্তু তাদের সেই আনন্দ, সেই উন্মাদনা ভাটা পড়তে বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। পাকিস্তানের বোলিংয়ের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণের পর স্পিনারদেরও একই ভূমিকাতে দেখা হতাশ তারা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের এমন নাজুক ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ের পর হারটাই যেন প্রত্যাশিত। বাস্তবে হয়েছে সেটাই। বাংলাদেশের দেওয়া ৭১ রান অনায়াসেই টপকে গেছে বিসমাহ মারুফের পাকিস্তান।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ঘাসও নিগার সুলতানাদের অপিরিচিত হওয়ার কথা নয়। এখানে নিয়মিত ম্যাচ খেলছেন তারা, নিয়মিত অনুশীলন ক্যাম্প হয়েছে। ফলে পাকিস্তানের বিপক্ষে এমন পারফরম্যান্সে কোনও অজুহাতই দাঁড় করানোর উপায় নেই। সোমবার (৩ অক্টোবর) নারী এশিয়া কাপের ম্যাচটির শুরুতেই পরিকল্পনাহীন ব্যাটিংয়ে ৭১ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। সহজ লক্ষ্যে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের বিপক্ষে ঠিক যে পরিকল্পনায় বোলিং করতে হতো, সেটির অভাবও ছিলো স্পষ্ট। দৃষ্টিকটু ফিল্ডিংও চোখ এড়ায়নি। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের নখদন্তহীন বোলিংয়ে ও বাজে ফিল্ডিংয়ের সুযোগ নিয়ে ৪৬ বল আগেই ৯ উইকেটে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তান।

পাওয়ার প্লেতেই পাকিস্তান তুলে নেন বিনা উইকেটে ৪০ রান। যে নাহিদা-সালমার বোলিংয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা চুপষে যায়, তাদের বিপক্ষেই কিনা পাকিস্তানের দুই ওপেনার অবলিলায় ব্যাটিং করলেন। মুনিবা আলী ও সিদ্রা আমিন মিলে ৪৯ রানের জুটি গড়েন। সালমার বলে ১৯ বলে ১৪ রান করে মুনিবা উইকেট কিপার শামীমার তালুবন্দি হন। বাকি পথটুকু বিশমাহ মারুফকে নিয়ে সহজেই পেরিয়ে যান সিদ্রা আমিন। ৩৫ বলে ৪ চারে ৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মুনিবা। বিসমাহ ২০ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন।

বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের সাফল্যের মূল কারিগর স্পিনাররা। সোমবার তারাই ছন্দছাড়া বোলিং করছেন। সালমা খাতুন, নাহিদা আক্তার, সানজিদা আক্তার, রুমানা আহমেদ কেউই নিজের সামর্থ্য দেখাতে পারেননি। পাকিস্তানের একমাত্র উইকেটটি শিকার করেন অফস্পিনার সালমা।

ম্যাচের আগের রাত থেকেই সিলেটে ঝুম বৃষ্টি। হুট করে হওয়া এই বৃষ্টির কারণে এখানে আগে ব্যাটিং করা বেশ কঠিনই। নিগার সুলতানার দলকে টসে হেরে সেই কঠিন কাজটিই করতে হলো। তবে তা করতে গিয়ে পরিকল্পনাহীন ব্যাটিংয়ের খেসারত দিলো টিম বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বোলারদের কৃতিত্বের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটারদের দায়ই বেশি দিতে হবে। নিগার সুলতানা, সালমা খাতুন, লতা মণ্ডলের ডাবল অংকের ফিগারের কারণে কোনোমতে ৭০ রানের সংগ্রহ দাঁড় করাতে পেরেছে বাংলাদেশ।

সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দুই নম্বর গ্রাউন্ডে টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছে তারা। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দারুন শুরু করা দুই ওপেনার শামীমা আক্তার ও ফারজানা হক দুই জন পরপর দুই ওভারে ১ রান করে আউট হয়েছেন। অফস্ট্যাম্পের বরাবর বল কাট করতে গিয়ে শামীমা ক্লিন বোল্ড হন ডায়না বেগের বলে। পরের ওভারে মেডেন উইকেট নেন সাদিয়া ইকবাল। সুইপ করতে গিয়ে পিংকিও ক্লিন বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন।

চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা রুমানা আহমেদও ভূমিকা রাখতে পারেননি। ৭ বলে ১ রান করে ডায়ানার বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন এই অলরাউন্ডার। সবমিলিয়ে প্রথম ৬ ওভারে বাংলাদেশ দল ১২ রান তুলতেই হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। পঞ্চম ওভারে পর পর দুই বলে নিগার চার না মারলে রান দাঁড়াতো ৬ ওভারে ৪! প্রথম পাওয়ার প্লের তিন ওভারে কোন রানই নিতে পারেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। লতা মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা শুরুর এই চাপ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দারুন ব্যাটিং করতে থাকা লতাকে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেনে নিদা দার। ১৯ বলে ১২ রান করেন এই ব্যাটার।

এরপর পঞ্চম উইকেটে সালমাকে সঙ্গে নিয়ে নিগার ১৫ রানের জুটি গড়েন। দলের হয়ে ১৭ রানের ইনিংস খেলা নিগার নিদা দারের শিকার হন। ৩০ বলে ২ চারে অধিনায়ক নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৪ রানের ইনিংস খেলেন সালমা। ২৯ বলে ২ চারে নিজের ইনিংসটি সাজান এই ব্যাটার। সবমিলিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৭০ রান করতে পারে বাংলাদেশের মেয়েরা। বাংলাদেশকে একশ রানের নিচে চারবার আউট করলো পাকিস্তান। লাল-সবুজ জার্সিধারীদের সর্বনিম্ম স্কোর ৩০। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৮ সালে কক্সবাজারে ৩০ রানে আউট হয়েছিল মেয়েরা।

পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে ডায়না বেগ ১১ রানে ২টি এবং নিদা দার ১৯ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন। সাদিয়া ও সোহেলী একটি করে উইকেট নিয়েছেন।