পাঁচ মাসেই বদলী বাগেরহাটের ডিসি, ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড়
প্রকাশ : 2021-05-17 20:19:27১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
মাত্র পাঁচ মাসেই বদলী হয়ে গেলেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ,ন,ম ফয়জুল হক। বদলির আদেন নিয়ে গত (১৬ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপনে বাগেরহাটের নতুন জেলা প্রশাসক হিসাবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আজিজুর রহমানের নাম ঘোষনা করা হয়েছে। একই সাথে আ,ন,ম ফয়জুল হককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব করা হয়েছে।
এদিকে, মাত্র ৫ মাসের মাথায় নিজের কর্মদক্ষতা দিয়ে বাগেরহাটবাসীর মন জয় করে নেয়া জেলা প্রশাসক আ,ন,ম ফয়জুল হকের এমন বিদায় মানতে পারছে না বাগেরহাটবাসী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুকে) রীতিমত প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন তারা। তবে এরই পাশাপাশি এত অল্প সময়ে কেন এই বদলী এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে তাদের মনে। রবিবার দিনভর যখন এ বিষয়টি নিয়ে বাগেরহাটের সর্বত্র আলোচনার-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহুর্তে বিকাল ৪টার দিকে নিজ ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে নিজ অবস্থান জানানোর পাশাপাশি বাগেরহাটবাসীর জন্য দিয়েছেন আবেগঘন স্ট্যাটাস।
সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জেলা প্রশাসক আ,ন,ম ফয়জুল হকের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো, সম্মানিত বাগেরহাটবাসী। আপনারা ইতমধ্যে জেনে গেছেন আমার বদলীর আদেশ হয়েছে। অনেকেই ফোন করেছেন। বিভিন্ন পেশাজীবী ফোরাম থেকে বলেছেন আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাতে চাই যে আপনাকে যেতে দেব না। আপনার আদেশ প্রত্যাহার করে ছাড়ব ইত্যাদি ইত্যাদি। বিগত পাচঁ মাস আমি আপনাদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম তাতেই আমি আপনাদের ভালবাসা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ। অনেকে জানতে চেয়েছেন কেন হঠাত এ আদেশ? আসলে সরকারি আদেশের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কারণ বলা যায় না। তবে আমি এ জেলায় দায়িত্ব গ্রহণের আগে স্হানীয় সরকার বিভাগে থাকতে ঘটে যাওয়া একটা বিষয় নিয়ে নাকি কে একজন বাগেরহাটের মোল্লাহাটের ছেলে কেবিনেটে অভিযোগ দায়ের করেছে। সেটি আমার মনে হয় আপনাদের একটু বলা প্রয়োজন, না হলে সোসাল মিডিয়ার অপব্যবহারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক এর ঐতিহ্যবাহী পদটিকে সম্মানহানী করার চেষ্টা করা হতে পারে। আপনাদের বাগেরহাটেরই মোল্লাহাটের ঐ ছেলে, ফেসবুকে বিডি প্রথম আলো নামে একটা পেজ খুলে (পেজটি একদম নতুন খোলা হয়েছে এবং সংবাদ মাধ্যম হিসেবে এর কোনো ভিত্তি আছে বলে জানা নেই) সেখানে তার পারিবারিক বিষয়ে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা বানোয়াট কিছু কথা লিখে অনবরত নিজস্ব কিছু লোকজন দিয়ে সেটিকে ভাইরাল করে। ফেসবুকে আপনারাও অনেকে এটা দেখেছেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি হয়তো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্তাধীন তাই বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। তবে আমি এবং আমার পরিবার আমাদের নিজেদের অবস্থানে আত্মবিশ্বাসী। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি যে ঐ অভিযোগে আমার কোনো দায় নেই। আমার সারল্যের সুযোগ নিয়ে এমন বানোয়াট অভিযোগ তৈরি করা হয়েছে। দু:খজনক হলেও সত্যি আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে এখনও আমার নিকট থেকে কোনওরুপ বক্তব্য নেয়া হয়নি বা অভিযোগকারীকে আমি নিজেই চিনি না, অভিযোগের কপিটিও আমি অফিসিয়ালি পাইনি। আমার বদলির পেছনে এটি ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ও থাকতে পারে। একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে জনস্বার্থে সরকারের আদেশ বিনাবাক্যব্যয়ে মেনে নেয়া আমার দায়িত্ব। যাই হোক, এটা সত্যি কথা যে আরো কিছুদিন আপনাদের সংঙ্গে কাজ করতে পারলে আপনাদের সুখে দুখে পাশে থাকতে পারলে আমার ভাল লাগত। যেহেতু সরকারি আদেশ, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমাকে মেনে চলতে হবে, তাই নতুন জেলা প্রশাসকের নিকট অতি দ্রুতই দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাব। তবে খারাপ লাগবে নি:সন্দেহে, কারণ এত অল্প সময়েও আমি বাগেরহাটের মানুষকে ভালবেসেছিলাম। কত-কত কাজে হাত দিয়েছিলাম। যাবার বেলায় যত কথাই বলি বাগেরহাটের মানুষ আর এখানের শিশু পরিবার ও সেফ হোমের বাচ্চাগুলোর জন্য ভীষণ ভীষণ কষ্ট হবে। যখন চলে যাব তখন দড়াটানা নদীর ব্রিজের ওপরে গাড়ীর জানালা থেকে দড়াটানা নদীর দিকে তাকিয়ে কষ্টে চোখ ভিজে যাবে ! মনে হবে আমার জীবন দর্শনের কথা “কোথায়, কখন, কবে, কোন তারা ঝরে গেলো আকাশ কী মনে রাখে”।
অপরদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “বিডি প্রথম আলো” নামের পেজ থেকে জেলা প্রশাসক আ,ন,ম ফয়জুল হকের নামে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর এক ব্যাক্তির একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। আংশিক প্রকাশিত ওই অভিযোগে, ওই ব্যাক্তি তার স্ত্রীর (বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা) সাথে জেলা প্রশাসক আ,ন,ম ফয়জুল ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ করেন। সেই সাথে তিনি ফয়জুল হকের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর উপর যৌন নির্যাতন, তাদের সংসার ভেঙ্গে দেয়াসহ তাকে হুমকী প্রদানের অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় ওই ব্যাক্তি ফয়জুল হকের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াসহ তার বাচ্চাদের জীবনের নিরাপত্তা ও সংসার বাঁচানোর আবেদন জানান।
ফেসবুক ওই পেজটির পক্ষ থেকে ওই ব্যাক্তির পক্ষে লেখাটা হুবহু তুলে ধরা হলো, জামালপুরের ডিসির পরে বাগেরহাটের ডিসি বন্দনা। আমাদের দেশের কতিপয় নীতি নির্ধারকদের চরিত্র এতটা নিম্নমানের হতে পারে সেটা এসব প্রকাশ না পেলে বোঝার উপায় ছিল না। জামালপুরের ডিসির কুকীর্তির রেশ কাটতে না কাটতেই আবার বাগেরহাটের ডিসি (স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রালয়ের সাবেক উপসচিব ফয়জুল হক)-এর পরকীয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ডিসি সাহেব অন্য এক ভদ্রলোকের বউকে বিভিন্ন কৌশলে ফাঁদে ফেলে তাদের সংসারটাকে ধংস করে দিচ্ছে। সাথে ভুক্তভোগী স্বামীকে নানান ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা তদবীর করছে। ডিসি হওয়ার বদৌলতে তার বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খোলার মত সাহস দেখাতে পারছে না। কোন প্রতিবাদ করার আগেই ভুক্তভোগীকে নানানভাবে হয়রানি করা হয়। এবং তাকে সবকিছু মেনে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু ভুক্তভোগীর দুইটা ৯ এবং ৩ বছরের সুন্দর ফুটফুটে শিশুর ভবিষ্যেতের কথা বিবেচনা করে তিনি কোন ভাবেই এটা মেনে নিতে পারছেন না। অপরদিকে ডিসি সাহেব এবং লোক লজ্জার ভয়ে তারা কারোর কাছে বিষয়টি প্রকাশ করেত পারছেন না। কারন ভুক্তভোগীর পরিবার একটি মার্জিত এবং উচ্চশিক্ষিত ভদ্র পরিবার। তারা ডিসি সাহেবের অনবরত হুমকি ধামকি সহ্য করতে না পেরে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ সচিব বরাবর একটা আবেদন প্রেরণ করেন।
এখন আমার কথা হচ্ছে যে আমাদের দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আচরন যদি একজন অশিক্ষিত এবং বর্বর মানুষের মতো হয় তাহলে এহেন পরিস্থিতে দেশের এবং দেশের সরকারের ভাবমুর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে আমি মনে করি। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনি দয়া করে এই বিষয়টার সুষ্ঠ তদন্ত করে সঠিক বিচার নিশ্চিত করুন। তা না হলে এসব আমলাদের কারনে সরকারের অর্জিত সকল সুনাম নষ্ট হচ্ছে। পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে একটি অসহায় পরিবারের ভাঙ্গন এবং নিস্পাপ দুটি শিশুর জীবন রক্ষা করতে সহায়তা করুন।