পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনমজুর বাশার

প্রকাশ : 2022-07-28 20:20:51১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনমজুর বাশার

সরকার যেখানে ভূমিহীনদের জমিসহ ঘর দিচ্ছেন, সেখানে ৫০ বছর ধরে থাকা এক ভূমিহীনকে সরকারি জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। জমি থেকে তারাতে ভূমিহীন আবুল বাশারের টিন-কাঠের তৈরি ঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বশত ঘরের মাটি কোদাল দিয়ে কেটে ফেলে দেওয়া হয়েছে মৎস্য ঘেরে। ফেলে দেওয়া হয়েছে, রান্নার সরঞ্জামাদি। পলিথিন দিয়ে কোন মতে শিশু সন্তান ও স্বজনদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন এমনই অভিযোগ করেছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের পাথুরিয়া কালিবাড়ি এলাকার মৃত আবুল হাশেমের ছেলে ভূমিহীন হতদরিদ্র আবুল বাশার।

তিনি বলেন, আমরা গরীব, তাই আমাদের উপর এত অত্যাচার। আমি বাড়ি ছিলাম না, এই সুযোগে আমার মামা মোশারফ ফরাজী লোকজন নিয়ে এসে আমার ঘর ভেঙ্গে ফেলেছে। টিন খুলে নিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। 

আবুল বাশার আরও বলেন, নিজস্ব কোন জমি-জমা না থাকায় আমার বাবা উত্তর জিউধরা মৌজায়  থাকা এক একর সরকারি জমি ডিসিআর কেটে ভোগদখল করতেন। আমরা ভাই-বোনরাও বাবার সাথে ওই বাড়িতে থাকতাম। প্রায় ৫০ বছর ধরে আমরা এই বাড়িতে রয়েছি। ২০০৬ সালে  বাবার মৃত্যুর পরে, আমার মামা মোশারফ ফরাজী আমাদের এই জমি ছেড়ে দিতে বলেন । জমি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তিনি বিভিন্ন ভাবে আমাদের হয়রানি করতে শুরু করেন। আমাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। এরই মধ্যে তিনি ডিসিআর কেটে আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করে। তখন মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দারস্ত হলে তিনি মৌখিকভাবে আমাদেরকে এই জমি ভোগ দখল করতে বলেন এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে জমির দখল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলেন। ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল জিউধরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সুমঙ্গল মজুমদার সরজিমন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন আবুল হাশেমের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে তার সন্তান মোস্তফা শেখ, এছহাক শেখ, সুলথান শেখ, আবুল বাশার শেখ, রিজিয়া বেগম, রওশনারা বেগম, রাশিদা বেগম ওই জমি ভোগ দখলে আছেন। এরপরেও মোশারফ ফরাজী আমাদের এই জমি দখলের চেষ্টা করেছেন। এরই মধ্যে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দুপুরে উপজেলা ভূমি অফিসের লোকজন বিনা নোটিশে এসে আমাদেরকে বাড়ি থেকে নেমে যেতে বলে। আমি বাড়ি না থাকায় মহিলা ও শিশুদের সাথে তারা খারাপ ব্যবহার করেন। সরকারি লোকজনের সাথে থাকা মোশারফ ফরাজীর গুন্ডারা আমার বউ এবং ৬ ও ৩ বছর বয়সী দুই বাচ্চাকে মারাত্মকভাবে ভয় দেখায়। বসত ঘরের পোতার মাটি কুপিয়ে ফেলে দিয়েছে। বউ বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব আমি। আমার মরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আবুল বাশার।

আবুল বাশারের স্ত্রী চম্পা বেগম বলেন, হঠাৎ করে অনেক লোকজন এসে আমাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর করে। মোশারফ ফরাজীর লাটিয়ালরা আমার ছেলে-মেয়ে ও আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে আমাদেরকে ট্রাকের নিচে মাথা দিয়ে মরে যেতে বলে তারা।

পাথুরিয়া কালিবাড়ি এলাকার বৃদ্ধ মোতালেপ খান বলেন, ৫০ বছরের উপরে আবুল হাশেম ও তার সন্তানরা এই জমি ভোগ দখল করছেন। কিন্তু মোশারফ ফরাজী কেন কিভাবে এই জমি দখল করে আমরা জানিনা। সব অত্যাচার গরীবের উপর এই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

শুধু মোতালেপ নয়, স্থানীয় মোঃ হালিম মল্লিক, মোঃ শাহজাহান মোল্লা, মহারাজ হাওলদারসহ স্থানীয় অনেকের সাথে কথা বলে আবুল বাশারের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ব্যবসায়ী মোঃ ইব্রাহীম হাওলাদার বলেন, মোশারফ ফরাজী একজন ভূমি দস্যু, নিজের ভাগ্নের জমি দখলের জন্যও সে অন্যায় পথ অভলম্বন করছেন।

মোশারফ ফরাজী বলেন, ভাগ্নে হলেও, বাশারের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। ডিসিআর কেটে জমি নিয়েছি, আমি ওই জমিতে কোনভাবেই বাশারকে থাকতে দিব না।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই জমি নিয়ে আদালতে একটি মামলা ছিল। মামলায় মোশারফ ফরাজীর অনুকূলে আদালত রায় দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ অণুযায়ী আমরা আবুল বাশারকে ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করেছি। 

তিনি আরও বলেন, আবুল বাশার যদি সত্যিই ভূমিহীণ হয়ে থাকেন, তাহলে খোজ খবর নিয়ে তাকে সরকারি জমি ও ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গকরা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।