পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের পদত্যাগ 

প্রকাশ : 2024-01-31 19:22:22১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের পদত্যাগ 

পরিচালনা পর্ষদ থে‌কে পদত্যাগ ক‌রে‌ছেন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ‘ব্যক্তিগত ও স্বাস্থ্যগত কারণ’ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। 

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এ তথ্য নিশ্চিত ক‌রে‌ছেন। মুখপাত্র জানান, পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডার হিসেবে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম পদ্মা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুরবস্থা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা আছে। এর ম‌ধ্যে অন্যতম পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)।

২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর চার বছর না যে‌তেই সংকটে পড়ে রাজনৈ‌তিক বি‌বেচনায় অনু‌মোদন পাওয়া ব্যাংকটি। পরিস্থিতির চরম অবনতি হলে ২০১৭ সালে পদ ছাড়তে বাধ্য হন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ওই সময় ব্যাংকটির এমডি এ কে এম শামীমকেও অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন এই ব্যাংককে বাঁচাতে মূলধন সহায়তা দেয় সরকারি চার ব্যাংক ও আইসিবি। সেই সুবাদে ব্যাংকটির পরিচালনায় যুক্ত হন ওই চার ব্যাংক ও আইসিবির প্রতিনিধিরা। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে দি ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক।

২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা ব্যাংক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেল মরগান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যাংকটি। কোম্পানিটি ৭০ কোটি ডলার (৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ আনতে মধ্যস্থতা করবে। ২ সেপ্টেম্বর ডেল মরগানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে পদ্মা ব্যাংক। অনুষ্ঠানে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও ডেলমর্গানের চেয়ারম্যান রব ডেলগাডো উপস্থিত ছিলেন।

এই বিনিয়োগ আনার স্বার্থে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটিকে বেশ কিছু নীতি ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ৯০০ কোটি টাকার বেশি লোকসানে থাকা ব্যাংকটিকে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে এ লোকসান না দেখানোর সুযোগও দেওয়া হয়। লোকসানের বিপরীতে ‘ইনটেনজিবল অ্যাসেট বা অদৃশ্য সম্পদ’ সৃষ্টি করার সুযোগ দেওয়া হয়, যা পরের ১০ বছরের মুনাফা থেকে সমন্বয় করতে হবে। এছাড়া লোকসান সমন্বয়ের সময়সীমা পর্যন্ত ১০ বছর ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেই বিনিয়োগ আসেনি।

অনিয়ম-জালিয়াতির কারণে সাবেক ফারমার্স ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে চারটি সরকারি ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ব্যাংকটির বড় অংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করে। পাশাপাশি পদ্মা ব্যাংকে আমানতও রাখে। তবে আমানতকারীদের আস্থা ফিরে পায়নি। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকটিকে নানা সুবিধা নিতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বাছবিচার ছাড়া সরকারের মৌখিক নির্দেশে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সব‌শেষ সমস্যায় থাকা পদ্মা ব্যাংক বড় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে তাদের এখন শেয়ার দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, পদ্মা ব্যাংক বড় অঙ্কের আমানত রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ার দেবে। ব্যাংকটিতে এমন আমানত রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। আমানতকারীদের মধ্যে সবই সরকারি ব্যাংক, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি খাতের ট্রাস্ট তহবিল।

ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সরকারি খাতের আমানতকারীদের শেয়ার দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপরই আমানতকারীদের প্রস্তাব পাঠানো শুরু করেছে ব্যাংকটি। এমন সময় পদত্যাগ করলেন ব্যাংক‌টির চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।