পঞ্চগড়ে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে কলেজ ছাত্র মিলন
প্রকাশ : 2024-07-14 13:29:07১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার কলেজ ছাত্র মামুনুর রশিদ মিলন (২২)। কাঠ মিস্ত্রি বাবা আর গৃহিনী মায়ের একমাত্র ছেলের সপ্ন ছিল বিসিএস করে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করবেন। পরিবারের মুখে হাসিঁ ফোটাবেন। ধরবেন সংসারের হাল। লাঘব করবেন বাবা মায়ের কষ্ট। সেই সপ্ন নিয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে উত্তরের অক্সফোর্ড খ্যাত রংপুরের কারমাইকেল কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। অন্য বন্ধুদের মত করেই প্রতিদিন সময়মত কলেজে যেতেন। ক্লাস শেষে ছাত্রাবাসে ফিরতেন সময়মত। পড়াশোনার ফাঁকে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা, আড্ডা দেয়া সহ হাসিখুঁশি চলাফেরা করতেন তিনি। এভাবেই কলেজে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ কাটে তার। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুর দিকে শারিরীক অসুস্থতা অনুভব করায় রংপুর থেকে বাসায় চলে আসেন। বাসায় ফিরে প্রায় সময় ঘরে শুয়ে থাকতেন। পরে বাবা মাকে নিজের শারিরীক দূর্বলতার কথা জানালে মা প্রতিবেশিদের কাছ থেকে নিজের সাধ্যমত দুধ ও ডিম কিনে একমাত্র ছেলেকে খাওয়ানো শুরু করেন। এরই মাঝে কেটে যায় দুইটি সপ্তাহ। পরে একদিন মিলনের মা তাকে নিয়ে যান অন্যর জমিতে মরিচ ক্ষেতে নিরানীর কাজ করতে। কাজের শুরু থেকে কিছুক্ষণ পর পর হাপিয়ে উঠছিলেন আর ক্ষেতের আইলে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মিলন। এক পর্যায়ে আর কাজ করতে পারছিলেন না তিনি। তরুণ ছেলে একটু কাজেই কেন হাপিয়ে উঠছেন মায়ের সন্দেহ হয়। পরে তাকে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক সিদ্দিকুর রহমানের কাছে তাকে নেয়া হয়। এসময় তিনি মিলনের রক্ত সল্পতার কথা জানিয়ে দ্রুতই ৫ ব্যাগ রক্ত দিতে বলেন। পরে বাসায় নিয়ে তাকে শারিরীক দুর্বলতার কারণে পল্লী চিকিৎসকের মাধ্যেমে স্যালাইন দেয়া হয়। তবুও কাটেনি তার শারিরীক দূর্বলতা। তখনও মিলন সহ পরিবারের কেউই আচঁই করতে পারেন নি যে মিলনের শরীরে মরণ ঘাতক ক্যান্সার বাসা বেধেঁছে। কিছুই বুঝতে পারছিলেন বাবা মা। কি করবেন একমাত্র ছেলেকে নিয়ে। কোথায় গেলে কাটবে ছেলের শারিরীক দূর্বলতা। পরে চিকিৎসক সিদ্দিকুর রহমানের পরামর্শে নিজেদের হাতে থাকা কিছু টাকা ও ধার দেনা করে গত ফেব্রুয়ারী মাসের ২০ তারিখে নেয়া হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল কাদের জিলানীর কাছে। সেখানে সব সমস্যার কথা জানালে বেশকিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা দেয়া হয় মিলনের। এক পর্যায়ে শনাক্ত হয় মিলন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। এ কথা শোনা মাত্রই আকাশ থেকে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। মরণ ঘাতক ব্যাধি থেকে কিভাবে মিলনের নিস্তার মিলবে তা চিন্তায় কেদেঁ বুক ভাসান তারা। পরে প্রতি সপ্তাহে এক বা দুই ব্যাগ করে অন্তত তিন মাস রক্ত দিতে পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পরে তেতুঁলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়ে পর্যায়ক্রমে ১২ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। এরপরেও আবারো তাকে চিকিৎসক আব্দুল কাদের জিলানীর কাছে নেয়া হলে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে মিলনকে ভর্তি করানো হলে তার সম্পূর্ণ চিকিৎসা খরচ চাওয়া হয় ১৪ লাখ টাকা। এতেও সুস্থ হবেন কিনা নিশ্চয়তা দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে বাসায় ফিরে আবারো চিকিৎসক আব্দুল কাদের জিলানীর কাছে নেয়া হলে তিনি কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে বাসায় ফিরে মিলনের চিকিৎসা খরচ যোগাতে তার বন্ধুদের সাথে নিয়ে স্থানীয় হাট বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন স্থানে আর্থিক সাহায্য তোলেন পরিবারের সদস্যরা। পরে তাকে ভারতের সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার সেন্টার এন্ড রিসার্চ ইন্সিটিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডা. মৌপালি ঘোষ ও ডা. পিপি গুপ্তার তত্ত্বাবধানে নিজেদের শেষ সম্বল, ঋণ করে ও সাহায্যর টাকা দিয়ে শুরু হয় চিকিৎসা। শুরুতে চিকিৎসা খরচ বাবদ ১৪ লাখ ভারতীয় রুপি চাওয়া হয়। তাতেও রোগমুক্তি মিলবে কিনা নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। পরে চিকিৎসার শুরুতে একটি কেমোথেরাপী দেয়া হয় মিলনকে। কেমোথেরাপীর পরে যদি অস্থিমজ্জার ক্যান্সার ৫ শতাংশের নিচে আসে তাহলে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ৩টি সাইকেল কেমোথেরাপী দিতে হবে বলে জানানো হয়। পরে একটি সাইকেল কেমোথেরাপী দেয়া হয়। তবে এখনো শঙ্কামুক্ত নয় সে। তবে এরই মাঝে ভারতে চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। বর্তমানে মিলনকে আরো দুইটি সাইকেল কেমোথেরাপী দিতে প্রয়োজন আরো তিন লাখ টাকা। পরে শারিরীক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজন হবে আরো প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
মিলনের বড় বোন মমতাজ বেগম বলেন, আমাদের ভিটেমাটি ছাড়া কোন জমি নেই। আমার বাবার দৈনিক কাজের টাকায় আমাদের সংসার চলে। নিজেদের কিছু জমানো টাকা, বিভিন্ন স্থানে আর্থিক সাহায্য তুলে ও ঋণ করে দেশে ও ভারতে প্রায় ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে আমার ভাইয়ের চিকিৎসার পেছনে। এখনো তার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা খরচ বাবদ আরো প্রায় ১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। আমার ভাইকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান করছি।
তেতুঁলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী বলেন, পরিবারের লোকজন উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করলে আমরা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যেমে সহযোগিতা অবশ্যই করবো।
কলেজ ছাত্র মিলনের বাড়ি পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের শালবাহান বাজার এলাকায়। তার বাবা মহব্বত আলী পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। আর মা মর্জিনা বেগম গৃহিনী। দুইভাইবোনের মধ্যে মিলন ছোট।
মিলনের সাথে যোগাযোগ ও আর্থিক সাহায্য পাঠাবার ঠিকানাঃ- শালবাহান বাজার, তেতুঁলিয়া, পঞ্চগড়। মোবাইল নম্বর ০১৩১৫২২১৪৫৬ এবং ০১৭২২৮৩৫৬২৮। ব্যাংক হিসাবধারীর নাম, মহব্বত আলী ( MD. MOHOBBOT ALI ), হিসাব নম্বর ০২০০০০৮১২৭০৮৮, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, শালবাহান হাট শাখা, তেতুঁলিয়া, পঞ্চগড়। এছাড়া ০১৩১৫২২১৪৫৬ (নগদ) ও ০১৩১৭৩৩৬৮১৯ (বিকাশ)।
সান