নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সীমিত আয়োজনে শোকের মাতম

প্রকাশ : 2021-08-20 13:52:05১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সীমিত আয়োজনে শোকের মাতম

আজ পবিত্র আশুরা। প্রতিবছর এ দিনটিতে রাজধানীতে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে তাজিয়া মিছিল বের হয়েছে। তবে করোনা মহামারির কারণে এবার আগে থেকেই তাজিয়া মিছিল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তারপরও সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাস্তায় মিছিল বের করতে দেখা গেছে।
 
শুক্রবার (২০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুরানো ঢাকার ইমামবাড়া হোসেনি দালান থেকে মিছিলটি বের হয়ে চকবাজার, লালবাগ, আজিমপুর, নিউ মার্কেট ও জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের দিকে যায়। তাদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবে সুন্নী মুসলমানদের পাশাপাশি যোগ দেন ভিন্ন ধর্মালম্বীরা।

আয়োজন ‘সীমিত’ পরিসরে হলেও, সীমিত ছিল না আগত মানুষের শোক। হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন কারবালা প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইনকে (রা.)।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোসনি দালান প্রাঙ্গণে সীমিত আকারে বের হওয়া তাজিয়া মিছিলে যোগ দেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। দালান প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল শোকার্ত মানুষে। শোকের রঙ কালো পোশাক পরিধানের পাশাপাশি তাদের হাতে ছিলো কালো, সবুজ, লাল রঙের আলাম বা নিশান।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হোসনি দালান প্রাঙ্গণে শুরু হয় তাজিয়া মিছিল। যাতে যোগ দিয়ে শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারীরা বুক চাপড়িয়ে ‘হায় হোসেন’, ‘হায় হোসেন’ মাতম তোলেন। তাদের মাতমে এ সময় চারপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।

এ সময় অনেকেই ইমাম হোসাইন (রা.)-এর প্রতীকী সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেইসঙ্গে নিজ পরিবারের সদস্যদের কবর জিয়ারত করেন। অনেকেই মুরগী, কবুতর ও দুধ সদকা দিয়েছেন ইমামবড়ায়।

চার বছরের শিশু বাচ্চা গোলাম মোস্তফাকে কোলে নিয়ে হোসনি দালানের তাজিয়া মিছিলে যোগ দেন বংশালের বাসিন্দা হক গোলাম কাদের। তিনি বলেন, গেল বছরের মতো এবারও আশুরার আয়োজন সীমিত করা হয়েছে। তবে আমাদের শোক থেমে নেই। পর পর দুই বার দালান প্রাঙ্গণের বাইরে মিছিল করতে না পারার দুঃখ আছে। প্রশাসন আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেভাবেই আশুরা পালন করছি।

সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে তাজিয়া মিছিল করছেন। অনেকেই দলবেঁধে মাতম করতে করতে ইমামবড়ার ভেতরে প্রবেশ করেছেন।

তাদের একজন তারা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, আমরা বন্ধুরা সব সময়ই তাজিয়া মিছিল বের করি। এবারো করেছি। আমরা দলবেঁধে এসে ইমামবড়ার ভেতরে প্রবেশ করেছি।

সৈয়দ হাসান ইসলাম বলেন, রাস্তার শোক বা তাজিয়া মিছিল গতবারের মতো এবারও আমরা ইমামবড়ার মধ্যেই করেছি। কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু সারা বিশ্বই করোনা মহামারিতে আক্রান্ত। সে কারণে আমাদের পালনকে সীমিত করতে হয়েছে।

হোসেনি দালান ইমামবাড়ার তত্ত্বাবধায়ক এম এম ফিরোজ হোসেন বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সব আয়োজন চলছে। তাজিয়া মিছিলের মধ্য দিয়ে আশুরা পালনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। সন্ধ্যায় শামে গরিবার মাধ্যমে এ আয়োজন শেষ হবে। যেখানে কারবালার প্রান্তরের সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনার বয়ান করা হবে।

আশুরাকে ঘিরে কোনো ধরনের ঝুঁকি না থাকলেও নেওয়া হয় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হোসনি দালান প্রাঙ্গণে আগত সবাইকে নিরাপত্তা তল্লাশি করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।

পরিদর্শনে এসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার জসিম উদ্দীন মোল্লা বলেন, যেকোনো ধরণের নাশকতা এড়াতে আমরা তৎপর রয়েছি। কাউকে মাস্ক ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সে সঙ্গে আগত সবাইকে আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে।

মহররমের ১০ তারিখে বা আশুরা দিবসে ঐতিহাসিক বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ ও স্মৃতিবহ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে আশুরার দিন বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে সমৃদ্ধ। তবে সর্বশেষ কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত নবী দৌহিত্র হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত এ দিনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

পবিত্র আশুরা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত প্রেরণা জাগানিয়া একটি দিন। বলা বাহুল্য, পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলাম সবসময় সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।  

ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য তার আত্মত্যাগ ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগের মহিমা মুসলিম উম্মাহর এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। জুলুম-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং অসত্য ও অন্যায় প্রতিরোধে হোসাইন (রা.)-এর এ ভূমিকায় মানবজীবনের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু রয়েছে।