নিদিষ্ট সময়ের জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চায় এফবিসিসিআই

প্রকাশ : 2021-06-05 16:49:03১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

নিদিষ্ট সময়ের জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চায় এফবিসিসিআই

অপ্রদর্শিত অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রদর্শন করার সুযোগ একটি নিদিষ্ট সময়ের জন্য সরকার দিতে পারে। তবে এটি কোনো দীর্ঘ মেয়াদে নয় বরং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার যদি দেয় তাহলে উপকার হবে। তবে এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য সুবিধা দেওয়া হলে সেখানে প্রকৃত করদাতারা বঞ্চিত হবে। 
 
শনিবার (৫ জুন) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনায় এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের প্রায় ৩০ শতাংশ বিতরণ হয়নি। আমরা বাকি বিতরণ ও নতুন আরেকটা প্যাকেজ ঘোষণার অনুরোধ করছি। মূল্য সংযোজন কর আইন সহজীকরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এফবিসিসিআইয়ের সমন্বয় টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানান জসিম উদ্দিন।

জসিম উদ্দিন বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিদ্যমান মন্দা পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক আর্ধ-সামাজিক পরিবেশের তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদি, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুল্ক ও কর কাঠামো সংস্কার করে একটি জনবান্ধব এবং উৎপাদনশীল রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। এনবিআরের পলিসি উইং এবং বাজেট বাস্তবায়ন উইংকে আলাদা করার অনুরোধ করেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি।  

রাজস্ব বাড়ানো এবং ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর জন্য উপজেলা পর‌্যায়ে ভ্যাট ও আয়কর অফিস স্থাপন করলে করের আওতা বাড়বে। টিআইএন নম্বর ব্যবহারের পাশাপাশি ট্যাক্স পেমেন্টের প্রমাণ বা ডকুমেন্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে সক্ষম কর প্রদানকারীরা রাজস্ব দিতে এগিয়ে আসবে এবং নিয়মিত করদাতাদের ওপর চাপ কমবে।  

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের পাশাপাশি ড্রেজার ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ করার অনুরোধ করছি। এ শুল্ক গত বছর থেকে ৩১ শতাংশ করা হয়েছে। তার আগে ১ শতাংশই ছিল। আমদানি পর্যায়ে আগাম কর ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ কর হয়েছে। আগাম কর ব্যবসার খরচ বাড়বে তাই এ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের আবেদন করছি। ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি করেছিল এফবিসিসিআই।  প্রত্যাহার না করে উল্টো অগ্রিম আয়কর ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ব্যবসা বাণিজ্যে অচলবস্থার সৃষ্টি হবে। সব প্রকার অগ্রিম আয়কর, উৎস কর চূড়ান্ত হিসাবে সমন্বয় করা জরুরি।  

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তি আয়কর দাতাদের ন্যূনতম কর হার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ কর ন্যূনতম শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন জসিম উদ্দিন।  

খাত ভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠনগুলোর বিরাজমান সমস্যাগুলোর সমাধান জরুরি। অন্যথায় ব্যবসা বাণিজ্যের খাতওয়ারি অসংগতি থেকে যাবে। এবিষয়ে এফবিসিসিআইর আমদানি শুল্ক, মুসক ও আয়কর সংক্রান্ত বিশেষ কয়েকটি প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে খাতওয়ারি অসংগতি দুর হবে।  

জসিম উদ্দিন বলেন, বাজেটের ঘাটতি মেটাতে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার বদলে বিশেষ স্থানীয় বন্ড ও বিদেশ থেকে স্বল্প সুদে অর্থায়ন নেওয়া যেতে পারে। এসএমইখাতে নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক টার্নওভার ৭০ লাখ টাকা করা হয়েছে। এটা এক কোটি টাকা করার অনুরোধ করছি। অনেকগুলো পণ্যতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সম্ভাবনাময় আরও অনেক পণ্য আছে সেগুলোর জন্য এ সুযোগ সম্প্রসারণ করা হোক।  

বাজেট বাস্তবায়নের চিরায়ত চ্যালেঞ্জ, সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য বান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়। এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও নির্বাহী দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও তদারকির ক্রমাগত মান উন্নয়ন জরুরি।  

করোনার কারণে কর্মহীনতা, আয় হ্রাস কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে। বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার আওতা বাড়ানো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) আরও ভূমিকা রাখবে। তাই পিপিপির ওপর বিশেষ নজর দেওয়ার অনুরোধ করেন জসিম উদ্দিন।  

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এমসিসিআই প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান মাহমুদ, এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি এম এ মোমেন, আমিন হেলালী, মো. হাবিব উল্যাহ ডন প্রমুখ।