নারী অধিকার আদায়ের প্রতীক
প্রকাশ : 2021-10-18 12:38:58১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
অভিজিৎ বড়ুয়া অভি
-----------------
দেবী দুর্গার উপাখ্যান পাওয়া যায় ‘কালীবিলাসতন্ত্র’, ‘মহাভাগবত’, ‘বৃহন্নন্দিকেশ্বরপুরাণ’, ‘দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী’, ‘দুর্গোৎসববিবেক’, ‘দুর্গোৎসবতত্ত্ব’ ইত্যাদি গ্রন্থে। দেবী-পূজার মূল উৎস হচ্ছে সনাতন ধর্মের আদি শাস্ত্র, বেদ। অভৃশ্য ঋষির কন্যা ব্রহ্মবাদিনী বাক সর্বপ্রথম তার অতীন্দ্র ধ্যাননেত্রে আবিস্কার করেন দেবীসূক্ত। এই দেবীসূক্তই হচ্ছে মাতৃবন্দনার মঙ্গলসূত্র। দেবীসূক্তের আবিস্কারও করেন একজন নারী। দেবী দুর্গার আবির্ভাব ও পূজাকে কেন্দ্র করে যতোগুলি পৌরাণিক গল্প প্রচলিত আছে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাহিনি শ্রীশ্রী চণ্ডীর। শ্রীশ্রী চণ্ডীতে গ্রন্থিত রয়েছে মার্কণ্ডেয় পুরাণের নির্বাচিত কিছু অংশ যাতে দেবী দুর্গা সম্পর্কিত তিনটি উল্লেখযোগ্য কাহিনি রয়েছে। বাঙালির মূল যে ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব, তা মূলত ‘অকালবোধন’ নামে পরিচিত। বাল্মীকির রামায়ণে রামের দুর্গাপূজার কোনো বিবরণ নেই। কিন্তু রামায়ণের অনুবাদ করার সময় কৃত্তিবাস তাতে সামান্য পরিবর্তন করে এই অকালবোধনের অংশটি সংযুক্ত করেন। দেবী দুর্গা পরমা প্রকৃতিরূপে পূজিত হয়েছেন ভারতীয় এবং মূলত বাঙালি সমাজে। অবাঙালিরা ভিন্ন ভিন্ন নামে দুর্গাপূজা করেন। যেমন, কাশ্মীর ও দাক্ষিণাত্যে অম্বা ও অম্বিকা, গুজরাটে হিঙ্গুলা ও রুদ্রাণী, কান্যকুব্জে কল্যাণী, মিথিলায় উমা, কুমারিকায় কন্যাকুমারীর পূজা প্রচলিত। দুর্গা আদ্যাশক্তি মহামায়া এবং নারীরূপে বিশ্বের পরম শক্তির প্রকাশ। মহিষ-মর্দিনী, শূলিনী, পার্বতী, কালিকা, ভারতী, অম্বিকা, গিরিজা, বৈষ্ণবী, কৌমারি, বাহারী, চণ্ডী, লক্ষ্মী, উমা, হৈমবতী, কমলা, শিবাণী, যোগনিদ্রা প্রভৃতি নামে ও রূপে বিভিন্নভাবে তার পূজা হয়ে থাকে। দেবী বন্দনার স্তোত্রে ‘মাতৃরূপে’, ‘পিতৃরূপে’, ‘শক্তিরূপে’, ‘শান্তিরূপে’, ‘বিদ্যারূপে’ আবির্ভূত এক মহাশক্তির আরাধনা। পুরানে রাজ্যহারা রাজা সুরথ রাজ্য ফিরে পাবার জন্য বসন্তকালে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। তাই এ পূজার নাম হয় ‘বাসন্তী পুজা’। রামচন্দ্র রাবণবধের জন্য শরৎকালে দেবীর পূজা করেন। অকালে পূজা করেন বলে এর নাম হয় ‘অকালবোধন’। শারদীয়া দুর্গাপূজাই তখন থেকে বেশি প্রচলিত হয়। রাজাহারা যুধিষ্ঠির বিপদনাশ ও রাজ্য ফিরে পাবার জন্য দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন বলে মহাভারতে উল্লেখ রয়েছে। সবগুলো ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, যুদ্ধজয় ও বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য দেবীর পূজা হয়েছে। দেবী দুর্গা তাই জয়-প্রদায়নকারী ও দুর্গতিনাশিনী।
রাঢ়, বঙ্গ, সমতট, পুণ্ড্র, হরিকেলসহ সমগ্র বঙ্গদেশে (পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গ মিলে) আবহমানকাল থেকে মাতৃদেবীর পূজা প্রচলিত ছিল। কখনও স্থানীয় অনার্য দেবীরূপে, কখনও আর্যদেবী রূপে বিভিন্ন নামে নারীশক্তির আরাধনা হয়েছে। তবে শারদীয় দুর্গাপূজার বর্তমান রূপ বিকাশ মধ্যযুগে। সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুতে মোঘল শাসনামলে বাংলার দেওয়ান রাজশাহী জেলার তাহিরপুরের রাজা কংস নারায়ণ এবং নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় জাঁকজমকের সঙ্গে দুর্গাপূজার প্রচলন করেছিলেন। রাজা কংস নারায়ণ খ্যাতি লাভের নিমিত্তে আট লাখ টাকা ব্যয়ে ঘটা করে দুর্গাপূজা করেন। নদীয়ায় ভবানন্দ মজুমদার বড়মিয়ার সাবর্ন রায় চৌধুরী, কোজবিহার রাজবাড়ি সর্বত্রই মহাসমারোহে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়। দশম ও একাদশ শতকেও বাংলায় দুর্গাপূজা প্রচলিত ছিল । বাঙালির দুর্গাপূজায় দেবী দুর্গার সঙ্গে থাকেন তার কন্যা বিদ্যাদেবী সরস্বতী, ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মী, পুত্র সিদ্ধিদাতা গণেশ ও বীর কার্তিক। মাথার উপরে শায়িত থাকেন স্বামী মহাদেব। পায়ের নিচে বাহন হিসেবে থাকে সিংহ। দেবীর হাতে ধরা ত্রিশূলবিদ্ধ অবস্থায় থাকে মরণোন্মুখ অসুর। দেবী সাত্ত্বিক, সিংহ রাজসিক ও অসুর তামসিক শক্তির প্রতীক। বাঙালির দুর্গাপূজার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল, দুর্গার মতো শক্তিময়ী, অস্ত্রধারী ও জগদ্ধাত্রী দেবীকে কন্যারূপে ও মাতৃরূপে কল্পনা করা। বাঙালির দুর্গা যেন তার একান্ত ঘরের মেয়ে যে শ্বশুরবাড়ি থেকে কিছুদিনের জন্য ছেলেমেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ি বেড়াতে এসেছে। বাংলায় যে দুর্গাপূজা প্রচলিত তা মূলত মহিষাসুরমর্দিনী পূজা। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় সার্বজনীন পূজা শুরু হয়। দেবী দুর্গাকে মাথায় রেখেই বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দে মাতরম’ গানটি লেখা। যা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী নেতারা সার্বজনীন এসব পূজার সাথে যুক্ত হন। ঢাকার দুর্গোৎসবের ইতিহাস পাওয়া যায় অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্তের আত্মজীবনীতে। সেখান থেকে জানা যায় ১৮৩০ সালে সূত্রাপুরে নন্দলাল বাবুর বাড়িতে ঘটা করে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়।
বিশ শতক পর্যন্ত দুর্গাপূজা ছিল পারিবারিক। জমিদার ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা করতেন। চারদিন ব্যাপী আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে ইংরেজ তোষণ ও এর একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। ইংরেজদের আমন্ত্রিত করে নৃত্য-গীত-বাদ্যের বিনিময়ে তাদের সাথে সুসম্পর্ক ঝালাইয়ের কাজটি সম্পন্ন হতো এই পূজাকে উপলক্ষ্য করে। এর ধারাবাহিকতা এখনো পরিলক্ষিত হয় গ্রামে গ্রামে পূজা উপলক্ষ্যে যাত্রাগান, পালাগান ইত্যাদির আয়োজনে। ধনাঢ্যদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে এই পূজা সার্বজনীন মাত্রা লাভ করে ইংরেজ আমলের শেষ দিকে। ইংরেজবিরোধী জাতীয়তাবোধের উন্মেষে দেবী দুর্গা জমিদারদের প্রতিপত্তি প্রকাশের মহোৎসবের মাত্রা ভেদ করে নতুন মাত্রা লাভ করে। হুগলি জেলায় বারোজন বন্ধুর অর্থাৎ বারোজন ইয়ারের একত্রিত হয়ে বারোয়ারী পূজার উদ্ভব। অকাল বোধনের শারদীয় দুর্গোৎসব কালক্রমে আজ বাঙারী হিন্দুর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব।
দেখা যায় প্রায় প্রতিটি ধর্ম পুরুষ দ্বারা প্রচারিত, ঈশ্বর ভগবানও পুরুষ বোধক। সব ধর্ম প্রচারক পুরুষ। আদিযুগ, পশুপালনযুগে, কৃষিযুগে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের অস্তিত্ব ছিলো । পুরাকালে মাতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সমাজ ব্যবস্থায় মাতার সকল অধিকার ছিল। এরপর পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সমাজ নারীর সব অধিকার কেড়ে নিলো, মানলো না নারীর নেত্রীত্ব যা পুরাকালে ছিল। আজও নারীর পুরোহিত্য মানতে রাজী নই। নারীর সূচিতার প্রশ্ন তুলে ধর্ম পুরোহিতরা নারীকে ধর্ম পুরোহিত্য করা থেকে বিরত রাখেন। শুধু ভারত বর্ষে নয়, ইউরোপ আমেরিকায় ও তৎকালীন যুগে যেসব নারীরা উন্নত জ্ঞান চর্চা করতো, উন্নত চিন্তা এবং বিভিন্ন কুপ্রথার বিরোধিতা করা শুরু করলো, পুরুষশাসিত চার্চ তাদের ভ্রষ্টা ডাইনি আখ্যা দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারলো। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, কুমারী মাতা মেরী আসলে নারীর সন্তান ধারণের অধিকারের প্রতীক, কোন পুরুষের সন্তান সে গর্ভে ধারণ করবে, তা তার অধিকার, তাই যেন ব্যক্ত করে। কারণ পুরাকালে নারীর শক্তি এবং নতুন জীবন উৎপাদন করার ক্ষমতাকে খুব পবিত্র জ্ঞান করা হতো। এবং মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের সন্তান ধারণের জন্য পুরুষ নির্বাচনে মা এর একক ক্ষমতা ও অধিকার ছিল। যা পরে ধর্ম গুরুরা , ব্রাহ্মনরা বা চার্চ সেটাকে নিশ্চিহ্ন করে নারীর সমস্ত অধিকারকে খর্ব বা বঞ্চিত করে। স্তন্য কর প্রথার মতন জঘন্যতম প্রথা সমাজে প্রচলিত ছিল। স্তনের আকার অনুসারে নারীকে কর দিতে হতো। নারীর উধ্বাঙ্গ ঢাকার অধিকার ছিল না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী যেখানে কোমল, ক্ষমতাহীন, যৌনতার প্রতীক সেখানে ‘শক্তি-রূপেন সংস্থিতা’ দেবী দুর্গার মহিষাসুর-মর্দিনী প্রতিমা স্মরণ করিয়ে দেয় আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজের নারী-নেতৃত্বের কথা। প্রকৃতির অপরিমেয় শক্তি এবং নারীর সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ছিল আদিম মানব সমাজের কাছে বিস্ময়। তাই প্রাচীন সমাজগুলোতে মাতৃদেবীর পূজাই ছিল প্রধান। দেবীদের মাহাত্ম্যসূচক পৌরাণিক আখ্যানগুলো মাতৃতন্ত্রের অবশেষরূপে সমাজে টিকে ছিল বহুকাল। পরবর্তীতে পুরুষতন্ত্র যত শক্তিশালী হয়েছে, যত ধর্মমত প্রচারিত হয়েছে তত পুরুষ দেবতারা ক্ষমতা লাভ করেছেন এবং দেবীরা চলে গেছেন দ্বিতীয় অবস্থানে; কখনও প্রধান দেবতার স্ত্রী, কখনও কন্যারূপে। সুমেরিয়া, মিশর, গ্রিস, প্রাচীন ভারত– সর্বত্রই এটি ঘটেছে। সম্পত্তির ধারণা গড়ে উঠেছে, নারীকে গৃহবন্দী ও দাসী বানিয়ে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে। ব্যাবিলন, মেসোপটামিয়া, এমনকি মিশর যেখানে দু-একজন রানীর সৌজন্যে মেয়েদের অবস্থা সম্মানজনক ভাবা হত– সর্বত্রই কিন্তু নারীর জন্য বরাদ্দ ছিল গৃহকাজ ও পুরুষানুরঞ্জন। কৃষক ও নারীকে শোষণ করেই প্রতিটি সভ্যতার বিকাশ।
মহিষাসুর আসুরিক শক্তির প্রকাশ মাত্র। মানুষের মধ্যে এই অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য দেবী দুর্গার আরাধনা। এই আসুরিক শক্তি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় না। তাকে দলন বা মর্দন করা যায়। আর সেই কারণে দুর্গাকে মহিষাসুর মর্দিনী বা অসুর দলনী বলা হয়। মা দুর্গা অসুর কে পায়ের নিচে মর্দন করছেন। কিভাবে অসুর বৃত্তিকে পদদলিত করা যায়, সেই ধারনা প্রকাশ পায় দেবী আরাধনায়। আর এই অসুর বৃত্তিকে ধ্বংস করার মানসে অসুর প্রতীক রূপে মহিষাসুরকে দুর্গাকাঠামোতে স্থান দেওয়া হইয়াছে। অসুর বৃত্তি একটি ভাব। বর্তমানে আমাদের সমাজের অসুরগুলোর অসুরত্ব ভয়ংকর। আমাদের চারিপাশের অসুররা যা নয়, তাই করে বেড়াচ্ছে। হেন অশুভ কম্ম নেই যা তারা করছে না। ঘুষ, দূর্নীতি, মদ, মাদক ব্যবসা, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, সন্ত্রাস, ধর্ষণ ইত্যাদি যত ধরণের অনাচার-ব্যাভিচার আছে সবই তারা করে যাচ্ছে। তাদের পরিবার আর সমাজ তাদের পৃষ্টপোষক। লম্পট-দুশ্চরিত্র অসুর নিষ্পাপ মেয়েদের নষ্ট করছে, নির্যাতন করছে, পুড়িয়ে মারছে। নিরীহ মেয়ে বিচার চাইতে গেলো বিচার পায় না, সেখানেও অসুরের বসবাস। অসুরগুলো শুধুমাত্র একজন দুইজন নয়, ছড়িয়ে পড়েছে হাজার হাজার, লাখো লাখো মানুষের মাঝে। সেই অসুরের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে কী অবলীলাতেই হামলে পড়ে হিংস্র হায়েনার মতো। ওরা গরল ছুঁড়ে ঝলসে দিতে চায় নারীকে। ওদের হায়েনার ন্যায় ধারালো দাঁতের ফাঁক দিয়ে ঝরে পড়ে কামনার লোল। ওদের লোভাতুর চোখের সামনে আমার কন্যারা আজ অসহায়। দুর্গার হাতে অসুর বদ যেন নারী উপর নির্যাতনের প্রতিবাদি রূপ। নারী লিপসু, নারী নির্যাতনকারী অসুরভাবপন্ন পুরুষের শাস্তি নারীর হস্তে। কিন্তু নারী অসুরভাবাপন্ন পুরুষের বিনাশের ব্যর্থ। বিনাশ নাই। এই প্রতীকী রূপকে ব্যক্ত করে।
দুর্গামূর্তিতে দেখা যায়, দেবী ত্রিশূলধারিণী। ত্রিশূলের তিনটি ‘শূল’ সত্ত্ব, রজ ও তম— এই ত্রিগুণের প্রতীক হিসেবে বর্ণিত । দেবীর চক্র ‘সুদর্শন’ এর গায়ে ১০৮টি ধারালো ফলা রয়েছে। সুদর্শন চক্রাকার ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক এবং দেবীশক্তি তার কেন্দ্রস্থল হিসেবে বর্ণিত। দেবীর হাতে শঙ্খ মাঙ্গলিক কাজ থেকে শুরু করে যুদ্ধারম্ভ— সব কাজেই ব্যবহৃত। দেবির হাতে রয়েছে অগ্নি যেমন অস্ত্র, তেমনই আবার প্রজ্জ্বলিত অগ্নি দেবীর নিজস্ব শক্তিকেও বোঝায়। অগ্নি যাবতীয় ক্লেদ থেকে জগৎকে উদ্ধার করে, শুদ্ধ করে। দুর্গার তির-ধনুক সম্ভাব্য শক্তির প্রতীক আর তির প্রকাশিত গতিশক্তি। দুর্গার হাতে অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক শক্তি। দেবীর হস্তে পদ্ম পূর্ণ চৈতন্যকে ব্যক্ত করে। দেবীর অন্যতম আয়ুধ হল খড়্গ যা একাধারে মৃত্যু ও ন্যায়বিচারের প্রতীক। দেবীর কুঠার- একাধারে নির্মাণ ও ধ্বংসের প্রতীক। কোনও কোনও দুর্গামূর্তির হাতে গদা দেখা যায়। গদা মোহকে চূর্ণ করে বলে ব্যক্ত করে বিভিন্ন শাস্ত্র। দুর্গার কোনও মূর্তির হাতে সাপ দেখা যায়। সাপ হিন্দু ধর্মে কুলকুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক। দুর্গতিনাশিনী দুর্গা বা নারী তাঁর দশ হাতে ধৃত অস্ত্রগুলি সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয়, অগ্নি, বজ্র দিয়ে নারীর প্রতি আসুরিক শক্তিকে, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করবেন, নারীরা অবমাননা প্রতিবাদ করবেন, নারীরা অধিকার আদায়ের প্রতীক এবং তাদের প্রতি সকল নির্যাতনের প্রতিবাদি হবেন এই প্রার্থনা।
অভিজিৎ বড়ুয়া অভি-কথা সাহিত্যিক , কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক