নারীদেরকে পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়তে শেখ হাসিনার ৫ প্রস্তাব

প্রকাশ : 2023-08-25 11:22:46১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

নারীদেরকে পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়তে শেখ হাসিনার ৫ প্রস্তাব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এলক্ষে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন।  স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে ভাষণদান কালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্লোবাল সাউথে, আমাদের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এসডিজি ৫ অর্জনের জন্য আমাদের সকলের হাতে হাত রেখে চলা উচিত।’  

ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে এ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন।কর্মসূচিতে শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি গ্লোবাল সাউথ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম প্রস্তাবে বলেন, আমাদের নারী ও মেয়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলমান খাদ্য, শক্তি ও আর্থিক সংকটের বিরূপ প্রভাব প্রশমিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, তিনি আমাদের মেয়েদের স্কুলে রাখতে, তাদের সাইবার অপরাধ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ও তাদের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভাজন কমানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। অনেক মেয়েই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়।

শেখ হাসিনার তৃতীয় প্রস্তাবে নারীদের লাভজনক কর্মসংস্থান, শালীন কাজ, মজুরি সমতা ও আর্থিক  অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

তাঁর চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রস্তাবে, প্রধানমন্ত্রী একটি সক্রিয় ও টেকসই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নারীদের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরির পাশাপাশি জলবায়ুর প্রভাবের কারণে নারীদের সুরক্ষা ও টিকে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীতার ওপর গভীরভাবে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।তিনি আরো বলেন, ‘আমি লিঙ্গ সমতার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আপনাদের প্রতিশ্রুতিতে সত্যিই অনুপ্রাণিত বোধ করছি।’

শেখ হাসিনা তাঁর হৃদয়ের কাছাকাছি একটি বিষয়ে কথা বলার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য রাষ্ট্রপতি রামাপোসার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং নারী মাস উদযাপনের জন্য সমস্ত দক্ষিণ আফ্রিকানকে অভিনন্দন জানান।

নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রণীত সংবিধানে নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘রাষ্ট্র ও জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার থাকবে।’আমাদের জাতীয় সংসদে একটি অনন্য নজির রয়েছে যেখানে আমাদের স্পিকার, সংসদের নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদের উপনেতা সকলেই নারী।’

তিনি আরো বলেন, , তাঁর সরকার নারীদের জন্য সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চ পদ, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরর ভাইস চ্যান্সেলর ও আরও অনেক কিছুর দরজা খুলে দিয়েছে।জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার সংস্থায় নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত হওয়ায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নারী রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি শিক্ষা ও কর্মসংস্থান দুটি মূল উপাদান-যা নারী ক্ষমতায়ন করতে পারে। তাই, নারী শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। মেয়েদের দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের তালিকাভুক্তি বেড়েছে ৯৯ শতাংশ। মেয়ে-ছেলে স্কুলে তালিকাভুক্তির অনুপাত ৫৩:৪৭-এ উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ২৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন উপবৃত্তি এবং বৃত্তি কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। উপবৃত্তির অর্থ সরাসরি তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মা অথবা বৈধ অভিভাবকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে এবং নারী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান হারের ফলে বাল্যবিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।প্রাথমিক শিক্ষায় এখন শিক্ষক পদের ৬০ শতাংশ নারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীরা আমাদের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের মেরুদ-। ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন নারী সরাসরি এই খাতে কাজ করে। নারীরা ব্যবসায়ও ভালো করছে। আমরা ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যেক্তা নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ, ঋণ ও তাদের পণ্য বাজারে প্রবেশের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের গ্রামীণ নারীদের অনেকেই এখন আইটি ফ্রিল্যান্সার বা স্থানীয় ডিজিটাল সেন্টারে অংশীদার হিসেবে কাজ করেন।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, তাঁর সরকারের গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উদ্যোগে প্রতিবন্ধীসহ সবচেয়ে দুর্বল নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।আমি আমার বিনামূল্যে আবাসন প্রকল্প- আশ্রয়ণের অধীনে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ মালিকানার ব্যবস্থা করেছি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিয়োম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।পাশাপশি, তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু’ও উক্ত অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।

নরসিংদীতে ট্রাক-মাইক্রোবাস মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ ঝরল ৭ জনের
 নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীর শিবপুরের ইটাখোলায় ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও চারজন। আহতদের মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের শিবপুরের ইটাখোলা নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম জুবায়দুল (৩০)।

পুলিশ জানিয়েছে, রাতে ঢাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস  সিলেট যাচ্ছিল। মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুরের ইটাখোলা নামক স্থানে পৌঁছলে বিপরিত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যায়। আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতাল নেওয়ার পথে একজন ও হাসপাতালের নেওয়ার পর আরও একজন মারা যায়। গুরুতর আহত হয় চারজন। তাদেরকে আশঙ্কাজন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ইটাখোলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।