নন্দীগ্রামে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে লাভবান হচ্ছে নারীরা
প্রকাশ : 2025-11-22 13:48:56১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বগুড়ার নন্দীগ্রামে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে লাভবান হচ্ছে নারীরা। উঠানজুড়ে ছড়িয়ে রাখা হাজারো কুমড়ো বড়ি বাতাসে মিষ্টি গন্ধ ছড়াচ্ছে। নারীদের হাতের কারুকাজ কুমড়ো বড়ি তৈরি করা। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় শীতকালে কুমড়ো বড়ি তৈরির ব্যস্ততম সময় অতিক্রম করে নারীরা। এই মৌসুমে খাবারটি শুধু স্বাদের জন্যই জনপ্রিয় নয়, গ্রামের হাজারো নারীকে এনে দিয়েছে বাড়তি আয়ের সুযোগ। কুমড়ো বড়ির ইতিহাস দীর্ঘ। ধারণা করা হয়, একসময় দেশের সনাতন সম্প্রদায়ের নারীরা কুমড়ো, মাসকলাই বা খেসারি ডালের মিশ্রণে তৈরি করে কুমড়ো বড়ি। ধীরে ধীরে তা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এখন শীতকালীন প্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে কুমড়ো বড়ির নাম অন্যতম। নন্দীগ্রাম উপজেলায় এই খাবারের চাহিদা এতোই বেশি যে অনেকেই বছরের তিন মাস (নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি) কুমড়ো বড়ি তৈরির ওপর নির্ভর করে পুরো বছরের আয়ের একটি অংশ সুরক্ষিত রাখেন।
নন্দীগ্রাম উপজেলার নুন্দহ, নামুইট, হাটধুমা, চাঁনপুর, কল্যাণগর ও চাকলমাসহ বিভিন্ন গ্রামের বাড়ি বাড়ি এখন কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। ভোর রাত থেকেই শুরু হয় কুমড়ো বড়ি তৈরির প্রস্তুতি। আগে ডাল রোদে শুকানো হয়। পরে সেগুলো ভেঙে পরিষ্কার করে ৩-৪ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়।
এরপর শীল-পাটায় ডাল বাটার কাজ শুরু হয়। শেষ ধাপে নারীরা নানা আকারে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে রোদে শুকায়। রোদে শুকাতে এক থেকে দুইদিন সময় লাগে। তারপরই বড়িগুলো হাট-বাজারে বিক্রি করার উপযোগী হয়। গড়ে প্রতিদিন একজন নারী কারিগর তিন কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে পারে। এতে তাদের ভালো উপার্জন হয়। শীতের তিন মাসের এই আয় অনেক নারী স্বাবলম্বী হচ্ছে।
হাটধুমা গ্রামের হাসিখুশি নারী শাহানারা বেগম দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন। তার মুখেই শোনা গেলো এই শীতকালীন শিল্পের সাফল্যের গল্প। মাসকালাইয়ের আসল কুমড়ো বড়ি আমরা প্রতিকেজি ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি করি। একটু নিম্ন মানেরগুলো প্রতিকেজি ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি করি। শীতের তিন মাসেই যতো কুমড়ো বড়ি বানাই তা সারা বছর বিক্রি হয়। আল্লাহর রহমতে আমাদের সংসার ভালোই চলে। তিনি আরো জানান, শুধু নন্দীগ্রাম নয় আশপাশের উপজেলাসহ দূরাঞ্চল থেকেও পাইকাররা এসে কুমড়ো বড়ি কিনে নিয়ে যায়। ফলে বিক্রি নিয়ে কোনো চিন্তা থাকে না।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতানা আকতার বানু বলেন, এখন নন্দীগ্রাম উপজেলার গ্রামের বধূরা খুব আগ্রহ নিয়ে কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন। তারা ঘরে বসেই এই মৌসুমী খাবার তৈরি করে সংসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। অনেক নারী স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের দক্ষতা আরো বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, কুমড়ো বড়ি এখন শুধু একটি পারিবারিক খাবার নয়, এটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণের উদাহরণ হয়ে উঠেছে।