নতুন ঠিকানায় বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : 2022-01-01 13:44:40১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে। ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) মাসব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি নীতিমালা অনুযায়ী রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে ‘আইসিটি পণ্য ও সেবাকে ২০২২ সালের ‘প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা সক্ষমতার বার্তা জোরালোভাবে পৌঁছে দেবে এমন আশাবাদের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে এসে প্রতিটি পণ্য বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত করে দিই। এমনকি মোবাইল ফোন বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত করে দিই। কম্পিউটার শিক্ষা দেওয়া ও ব্যবহারের উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম। আমাদের দেশটা যেন শিল্প-বাণিজ্যে এগিয়ে যেতে পারে, উৎপাদন বাড়াতে পারে, সে উদ্যোগ নিয়েছি। বিশেষ করে নিজস্ব বাজার তৈরিতে আমরা মনোনিবেশ করি। কারণ শিল্পায়নের ব্যাপক প্রসার ঘটবে নিজস্ব বাজার তৈরি হলে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা স্থায়ী মেলার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রথম অনুষ্ঠান করছেন, কিছু কিছু সমস্যা থাকতে পারে। আমি তো কাঠামো করে দিয়েছি, বাকিগুলো আপনারা (ব্যবসায়ী) সমাধান করে নেন। এই মেলার ফলে পণ্যের চাহিদা জানা ও সে আলোকে পণ্য তৈরি ও বাজারজাতকরণের আইডিয়া পাওয়া যাবে। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় মোট রপ্তানি আয় আমি পেয়েছিলাম ১৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ১৩ বছরে আমরা অর্জন করেছি ৪৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এই ব্যাপক উন্নতি আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের আগামী প্রজন্ম পাবে একটা সুন্দর সমাজ, সুন্দর দেশ, উন্নত দেশ; যে দেশ হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আত্মনির্ভরশীল, আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ আয়োজনে মেলা অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সভাপতিত্ব করেন।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) মো. জসিম উদ্দিন ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
প্রতি বছর রাজধানীর শেরে বাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। গত বছর করোনা মহামারির কারণে বাণিজ্য মেলা হয়নি। এবার প্রথমবারের মতো এই মেলা হচ্ছে ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ নানা বিষয় নিয়ে শুক্রবার বিকালে মেলার এক্সিবিশন সেন্টারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাণিজ্য মেলায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল ও ১৫টি ফুড স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার (প্রায় ১,৫৫,০০০ বর্গফুট) আয়তনের দুটি হলে সব স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে (সম্মুখ ও পেছনে) প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে পুরনো স্থান ছেড়ে রাজধানী থেকে কিছু দূরে নতুন শহর পূর্বাচলে এই মেলা আয়োজনে নানা রকম চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও প্রথম বছরের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা এ বছর সম্পন্ন করতে পারলে আগামী বছরগুলোয় আর পেছনে তাকাতে হবে না বলে মনে করেন তারা।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে মেলা সাজানো হয়েছে। মেলার প্রবেশদ্বারে ভিন্নতা আনতে পাঁচটি মেগা প্রকল্পের কাঠামো ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছে।
রাজধানী থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য থাকছে ৩০টি বিআরটিসি বাস। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মাসব্যাপী সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যাতায়াত করবে বাসগুলো। এসব বাসে ন্যূনতম ২৫ টাকা ভাড়ায় দর্শনার্থীরা যাতায়াত করতে পারবেন। এবার মেলায় প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা এন্ট্রি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
আয়োজকরা জানান, এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরে ও সামনের ফাঁকা জায়গা মিলে স্টল থাকবে। এতে করে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এবারও প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, জেনারেল স্টল, ফুডকোড, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টলসহ ৩২টি ক্যাটাগরি রয়েছে। মিলনায়তনের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটরিয়া রয়েছে। একসঙ্গে ৫০০ লোক বসে খাবার খেতে পারবে।
এবারের মেলায় দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো স্টল বরাদ্দ নিয়েছে। এছাড়া ভারত, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, চীনসহ আট দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করবে।
আয়োজকরা জানান, মাসব্যাপী মেলা সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তা রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। মেলার প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা, শিশুদের জন্য ২০ টাকা। মেলায় প্রদর্শন করা হবে দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারি ওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি।
ঢাকার শেরেবাংলা নগরে ১৯৯৫ সাল থেকে অস্থায়ী জায়গায় বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। প্রতি বছর জানুয়ারির ১ তারিখ প্রধানমন্ত্রী এই মেলার উদ্বোধন করেন। করোনার কারণে গত বছর বাণিজ্য মেলা হয়নি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে ৭৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। পরে ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্সিবিশন সেন্টারে তৈরি করা ফ্লোরের আয়তন ৩৩ হাজার বর্গমিটার, বিল্ডিংয়ের ফ্লোরের আয়তন ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার, এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার।