দানশীলতার উদাহরণ দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসীন
প্রকাশ : 2022-10-30 14:47:04১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
দানশীলতার উদাহরণ দিতে গেলে আমরা যে ব্যাক্তির উদাহরণ দিয়ে থাকি তিনি হলেন দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসীন [৩ জানুয়ারি ১৭৩২ – ২৯ নভেম্বর ১৮১২]। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার একজন প্রখ্যাত মুসলিম জনহিতৈষী, ধার্মিক, উদার ও জ্ঞানী ব্যক্তি, যিনি তাঁর নিজের দানশীলতার মহৎ গুণাবলীর জন্য দানবীর খেতাব পেয়েছিলেন।
দিও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন, যার ফলস্বরূপ তিনি সেসময়ে বিপুল সম্পত্তি আয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই বিপুল সম্পত্তির মালিকানা হয়েও তিনি কেবল একটি খুব সহজ ও অযৌক্তিক জীবনযাপন করেননি, বরং তিনি যথাযথ শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা এবং দরিদ্র মানুষের দুর্দশা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য তার সম্পত্তির বিশাল আত্মত্যাগ করেছিলেন।
মহসীনের সম্পদ পশ্চিমবঙ্গ এবং বর্তমান বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের মধ্যে ঐতিহ্যগত ও আধুনিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ ছড়িয়ে দিয়েছে। হুগলি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত কিছু স্কুল, মাদ্রাসা এবং কলেজে তার অনুদানের অর্থ দিয়ে এখনও অনেক বিষয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের কাঠামো প্রদান করে এবং উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমজাদ হোসেন আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, সতেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে মহসিনের পিতামহ আগা ফজলুল্লাহ তার তরুণ পুত্র ফয়জুল্লাহকে নিয়ে ইরান থেকে বাণিজ্য করতে এসে মুর্শিদাবাদে বসবাস করতে শুরু করেন। মহসিনের পিতা ফয়জুল্লাহ ছিলেন একজন ধনী জায়গীরদার।
হুগলি মহসিন কলেজ এবং হুগলি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সময় মহসিনের ওয়াকফকৃত অর্থ ব্যবহৃত হয় এবং তার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিএনএস হাজী মহসিন-এর নাম তার স্মরণে রাখা হয়েছে। মহসিন ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় ১৮৭৪ সালে ঢাকায় ঢাকা মোহসীনিয়া মাদ্রাসা [বর্তমানে ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ], চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম মোহসিনীয়া মাদ্রাসা [বর্তমানে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ] এবং রাজশাহীতে রাজশাহী মাদ্রাসা [বর্তমানে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী] প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও মহসিন ফান্ডের অর্থে অসংখ্য দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়।
হাজী মুহাম্মদ মহসিন ১৮১২ সালে হুগলিতে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে হুগলি ইমামবাড়ায় দাফন করা হয়।