দাদা প্লিজ, আমাকে তুই করে বলেন

প্রকাশ : 2021-06-02 12:54:58১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

দাদা প্লিজ, আমাকে তুই করে বলেন

দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা তাঁরা। গানের মানুষ কুমার বিশ্বজিৎ, অভিনয়ের চঞ্চল চৌধুরী। দুজনেরই জন্মদিন ছিল গতকাল ১ জুন। জন্মদিনে দুজন স্মৃতিচারণা করলেন দুজনকে নিয়ে।

সেদিন ছিল শিল্পী কুমার বিশ্বজিতের জন্মদিন। তাঁর বাসায় গিয়ে হাজির অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। দীর্ঘ সময় আড্ডা হয় তাঁদের। সেদিন পরস্পরকে গানও গেয়ে শুনিয়েছেন তাঁরা। পরে দুজন জানতে পারলেন, দুজনেরই জন্ম একই দিনে। দিনটি এখনো স্মরণীয় তাঁদের কাছে। তারপরও বহুবার তাঁদের দেখা হয়েছে। প্রতিবারই জমে উঠেছিল প্রাণবন্ত আড্ডা। 

প্রথমবার একসঙ্গে দুজন একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। সেখানে পাঁচ দিন থাকতে হয়েছিল তাঁদের। কুমার বিশ্বজিৎ জানালেন, সেই থেকেই তাঁদের হৃদ্যতা। তাঁর মতো গুণী অভিনয়শিল্পীর সরল জীবনযাপন ও চমৎকার ব্যবহারে মুগ্ধ ছিলেন তিনি। কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘চঞ্চল বন্ধুবৎসল। যেকোনো কিছুই তাঁর সঙ্গে শেয়ার করা যায়। আমরা যখন বিদেশে ঘুরেছি, চঞ্চল কিছু একটা দেখে বলছে, দাদা, আপনার জন্য একটি নিই? একটি খাবার ভালো হলেও সে একা খাবে না। বলবে, দাদা আপনি না খেলে খাব না। সব মিলিয়ে আমার কাছে পারফেক্ট একজন মানুষ মনে হয়েছে চঞ্চলকে। যার মধ্যে আদর, স্নেহ, ভুলভ্রান্তি ধরার সাহস—সবই আছে।’

অভিনেতা চঞ্চল অভিনীত নাটক, সিনেমা ও গানের প্রশংসা করলেন কুমার বিশ্বজিৎ। মনপুরা সিনেমায় চঞ্চলের অভিনয় এখনো মনে দাগ কেটে আছে এই কণ্ঠশিল্পীর। তিনি বলেন, ‘আমি চঞ্চলের নাটক অনেক দেখেছি। মনপুরা সিনেমায় তাঁর এক্সপ্রেশন আমার মনে হয়েছে ঈশ্বরপ্রদত্ত। পুরো অভিনয়ে ছন্দ ছিল। তাঁর গানও অসাধারণ লাগে আমার। সবচেয়ে ভালো লাগে, তিনি স্রোতে গা ভাসান না। আমাদের অঙ্গনকে তিনি যে কিছু দিতে চান, এটা তাঁর কাজ দেখে বোঝা যায়।’

‘তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে ফুল নিতে আসতে’ গানটি দিয়েই প্রথম কুমার বিশ্বজিৎকে চেনেন কিশোর চঞ্চল চৌধুরী। তখন তিনি স্কুলে পড়তেন। এই গান কোনো রেডিওতে বাজতে শুনলেই দৌড়ে চলে যেতেন আরও কাছে। কুমার বিশ্বজিতের অনেক গান এখনো গুনগুন করে গাইতে থাকেন এই অভিনেতা। ঢাকায় আসার প্রায় এক যুগ আগে তাঁদের প্রথম দেখা হয়। চঞ্চল সেদিন পেয়েছিলেন নিখাঁদ একজন শিল্পীকে, যাকে এখনো একজন আদর্শ মানুষ মনে করেন তিনি। 

চঞ্চল বলেন, ‘কয়েকবার দাদার সঙ্গে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে আমাদের অনেক আড্ডা হতো। খুবই ভালো সময় কেটেছিল সেই দিনগুলোতে। যখনই দেখা হতো, স্নেহভরে তিনি ডাকতেন। সবচেয়ে ভালো লাগে, তিনি সমাজ ও শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করেন। এই দায়বদ্ধতা অনেকের মধ্যেই দেখা যায় না। দেখা হলেই তাঁর কাছ থেকে শেখার চেষ্টা।’

প্রতিবছরই নিয়মিত তাঁদের দেখা হয় কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে। একবার বিশ্বজিতের বাসায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল চঞ্চলের। তৈরি হয়েছিল এক বিব্রতকর অবস্থা! কী ঘটেছিল? চঞ্চল বলেন, ‘আমি দাদার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। দাদার সঙ্গে যখনই দেখা হয়, তিনি আমাকে আপনি করে সম্বোধন করেন। আমি দাদাকে অনেকবার বলেছি। দাদা প্লিজ, আমাকে তুই করে বলেন। এক–দুবার তিনি তুই করেন বলেন, কিন্তু পরে আবারও আপনি করে বলতে শুরু করেন। তিনি মানুষকে সম্মান, ভালোবাসা, মর্যাদা দিতে পারেন। শিল্পী এবং মানুষ হিসেবে দাদা খুব ভালো একজন মানুষ।’