দল গড়ে অভ্যুত্থানের ‘চেতনা ব্যবসা’, হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিন আহমদের

প্রকাশ : 2025-11-22 15:53:31১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

দল গড়ে অভ্যুত্থানের ‘চেতনা ব্যবসা’, হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিন আহমদের

জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে পুঁজি করে নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে কেউ যেন অভ্যুত্থানের ‘চেতনার একক মালিকানা’ দাবি না করে সে বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। যারা এই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ‘চেতনা ব্যবসা’ করবে তাদের পরিণতি ‘শুভ’ হবে না বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি। সালাউদ্দিন আহমদ বলেছেন, “আমাদের সেই দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালে রক্তের সিঁড়ি বানাতে বানাতে সেই জায়গায় গিয়ে ছাত্র-গণঅভ্যত্থান সৃজন হয়েছে। এই ছাত্র-গণঅভ্যত্থান শুধুমাত্র ৩৬ দিনের লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠা হয় নাই।”

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ দেড় দশকের টানা শাসনের ইতি ঘটে।ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন। কিছু মন্ত্রী-এমপি ও নেতা চলে গেছেন অন্য দেশে। বাকিরা দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন।

গণঅভ্যুত্থান পরিবর্তি সময়ে কয়েক ডজন নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। তার মধ্যে অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা ছাত্র নেতাদের নেতৃত্বে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির।

আওয়ামী লীগের দেশ দশকে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, “সেজন্য যারা জুলাই আগস্টের চেতনার কথা বলেন, সবার কাছে অনুরোধ থাকবে, আওয়ামী লীগ ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে একক ‘ঠিকাদারি’ নিয়ে চেতনার ব্যবসা করতে করতে বিলুপ্ত প্রায় হয়ে গিয়েছে।

“চব্বিশের ছাত্র গণ-অভ্যূত্থানের চেতনাকে যারা রাজনৈতিকভাবে, রাজনৈতিক ব্যবসা করার কোনোরকমের মানসিকতা লালন করেন, তাদেরকে অনুরোধ করবো, এই জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের, এই অনুপ্রেরণা, এই ধারাবাহিকতা, এই ইতিহাস, এই চেতনা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের, যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। সুতরাং কেউ যেন রাজনৈতিক দল সৃজন করে জুলাই ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার একক মালিকানা দাবি না করে। রাজনৈতিকভাবে চেতনার ব্যবসা যারাই করে, তাদের পরিণতি শুভ হয় না।”

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক’ দাবি করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন বলেন, “সারা পৃথিবী জানে, সারা বাংলাদেশের মানুষ জানে। কিন্তু মিথ্যা একটি ‘টেলিগ্রাফিক মেসেজের’ বরাত দিয়ে (স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে) শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা সেই ‘টেলিগ্রাফিক মেসেজের’ বয়ান সংবিধানের তফসিলে ধারণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তাদের মিথ্যার রাজনীতির ভিত্তি স্থাপন করতে চেয়েছিলেন, সেটা ধোপে টিকে নাই।”

আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতির চর্চাই ছিল মিথ্যার উপর ভিত্তি করে, গণতন্ত্রহীনতার রাজনীতি। বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতির ইতিহাস গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস। ফ্যাসিবাদ কায়েমের ইতিহাস, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের ইতিহাস। নতুন কিছু নয়।

“আমরা ২০২৪ এর জুলাই-অগাস্টের ছাত্র-গণঅভ্যত্থানের মধ্যদিয়ে আওয়ামী বাকশালী ‘ফ্যাসিস্ট’ শক্তিকে বিতাড়িত করতে পেরেছি, এটা সত্য। কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির মাফিয়া শক্তির মূল উৎপাটন এখনো পর্যন্ত বাকি আছে।”শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ যে ‘বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক শক্তি’ ছিল না তা প্রমাণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সালাহউদ্দিনের ভাষ্য, “আওয়ামী বাকশালী শক্তি যে এদেশের রাজনৈতিক শক্তি ছিল না, কখন সেটা প্রমাণিত হয়েছে, তাদের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মধ্যদিয়ে। ভারতে আশ্রিত থেকে তাদের সহায়তায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করার যে প্রবণতা, পাঁয়তারা-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, তার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে এদেশের রাজনৈতিক দল ছিল না কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো গণতান্ত্রিক দলও ছিল না। একটি ‘মাফিয়া ফ্যাসিস্ট’ শক্তি ছিল গণতন্ত্রের মুখোশে আলকেল্লা পড়ে।”

‘মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের’ এই সমাবেশে তারেক রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের এক নম্বর সদস্য হিসেবে ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।এছাড়া, প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোকে দুই নম্বর সদস্য হিসেবে ঘোষণা দেন তিনি।সমাবেশে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।