দলগুলোর সমঝোতা হলে সব ভোট ব্যালটে  

প্রকাশ : 2022-09-07 20:41:04১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

দলগুলোর সমঝোতা হলে সব ভোট ব্যালটে  

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি শতভাগ সমঝোতা হয় তাহলে সব ভোট ব্যালটে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ৩৯ নাগরিকের বিবৃতির পর সাংবাদিকদের এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়াই নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে মঙ্গলবার বিবৃতিতে বিশিষ্টজনরা বলেন, “আমরা মনে করি, কমিশনের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এটি রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উসকে দেবে এবং কমিশনের বর্তমান আস্থার সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে।”

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “রাজনৈতিক সংকট হতে পারে- এটা আমি জানি না। ইভিএম নিয়ে যদি কোনও রাজনৈতিক সংকট হয়, সে সংকট মোকাবিলার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা ইভিএম নিয়ে কোনও সংকট দেখছি না।... ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক সংকট প্রকট হবে না।”

সিইসি বলেন, আমরা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে যে সংকটগুলো দেখছি সে সংকটটা ইভিএম নিয়ে নয়, আরও মোটা দাগের সংকট। আশা করি, দোয়া করি এই সংকটগুলো কেটে যাক। কেটে গিয়ে যদি রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে ফয়সালা হয়, সব ভোট ব্যালটে হবে, হান্ড্রেড পার্সেন্ট সমঝোতায় হয় অসুবিধা কী। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, সব দল যখন নির্বাচনে আসছে তাহলে সেটা ভালো উদ্যোগ।

তিনি বলেন, আমাদের জন্য যেটা প্রয়োজন ইভিএমে ভোট করলাম কি করলাম না সেটা নয়, নির্বাচনটা সঠিক, অবাধ, নির্বিঘ্ন হলো কিনা- সেটা ইভিএমে হোক ব্যালটে হোক সেটা হওয়াটা বড় কথা। কাজেই বড় ধরনের সংকট ওখানে নয় আপনারাও জানেন। ওই সংকট নিরসন হলে নির্বাচনটা সুন্দরভাবে উঠে আসবে।

সিইসি বলেন, জাফর ইকবাল বলেছিলেন এটা খুব জটিল মেশিন নয়। ওই হিসেবে বলছেন যে এটা দুর্বল যন্ত্র। যন্ত্র দুর্বল কি সবল এটা আমার বিবেচনা করার বিষয় নয়। সবল হওয়ারও দরকার নেই, দুর্বল হওয়ারও দরকার নেই। যন্ত্র কাজ করছে কিনা, এটাই আসল বিষয়। গত কয়েক বছর ধরে আমরা হাজার হাজার নির্বাচনে হাজার হাজার ইভিএম ব্যবহার করেছি। কোথাও আমাদের যন্ত্র ম্যালফাংশন করেছে, এমনটি ঘটেনি।

তিনি বলেন, ডিজিটাল জালিয়াতি সম্ভব, এই কথা তো প্রথম দিন থেকেই বলা হচ্ছে। যে ডিজিটাল জালিয়াতি হবে ভোট চুরির মেশিন। আমরা এটা নিরসন করার জন্য প্রচুর সময় নিয়েছি। সব দলকে প্রযুক্তিবিদ নিয়ে এসে যাচাই করে দেখতে বলেছি। আমরাও ওদের কথা আমলে নিয়ে পরীক্ষা করেছি। বাজারে যে কথা চালু রয়েছে, ডিজিটাল জালিয়াতির সপক্ষে আমরা কোনও প্রমাণ পাইনি। দলগুলো যদি নির্দিষ্ট না বলতে পারে কীভাবে জালিয়াতি সম্ভব, তাহলে তো হলো না। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাচ্ছি ডিজিটাল জালিয়াতি সম্ভব নয়। আমাদেরই প্রমাণ করতে হবে ডিজিটাল জালিয়াতি সম্ভব নয়—এটা কিন্তু আইনগত ভাষা নয়।'

কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, 'যারা অভিযোগ করছেন তারাই আমাদের দেখিয়ে দেবেন লিখিত এবং মৌখিকভাবে যে কীভাবে জালিয়াতি সম্ভব। আজ অবধি কোনও দল এই কথাটা বলেননি বা দেখাননি। কতগুলো দল এসেছিল, আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। পাঁচ-সাতটি দল সরাসরি ইভিএমের পক্ষে বলেছে, কতগুলো দল শর্তসাপেক্ষে বলেছে।

তিনি বলেন, 'ইভিএমের পক্ষে যারা বলেছেন তারা একেবারেই কম নয়। আমরা তাদের ভোটাভুটির জন্য ডাকিনি। মতামতের জন্য ডেকেছিলাম। আমরা সুবিধাগুলো তুলে ধরেছি। কারচুপি ও সহিংসতা নিঃসন্দেহে কমে যাবে। আমরা স্টাডি করেছি, ওখানে আমার ভোট আপনি, আপনার ভোট আমি দিতে পারবো না। ওখানে জোরাজুরি, সহিংসতা অনেকখানি কমে যাবে।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক অবস্থা আরও প্রকট হবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক সংকট প্রকট হবে না। আরেকটা জিনিস বলছেন, ভারতের তুলনা দেওয়া হচ্ছে। পেপার ট্রেইল যুক্ত করা। এটা যদি থাকে কে কাকে ভোট দিলো পরে দেখা যায়। ভারতের যতো নির্বাচন হয়েছে, ওই পেপার ট্রেইল দিয়ে কেউ এমপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন, এমন নজির নেই, একটাও হয়নি এমন। আমাদের দেশে যে ব্যালটে ভোট হয়েছে—গত ৫০ বছরে আদালতে মামলা করে পুনর্গণনার পর কে সংসদে এসেছে—এই তথ্য আছে কিনা? যদি না থাকে তাহলে এই একটা জিনিস নিয়ে আপনারা এত উঠেপড়ে লাগলেন কেন? বিগত ৫০ বছরে কোনও নির্বাচনে দেখা গেছে কি? আমাদের দেশে কারচুপি হয়, তাহলে মামলার পর কেউ তো জয়ী হয়ে আসেনি। কাজেই নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে করাটাই বড় কথা, আস্থাভাজনভাবে।'

সিইসি জানান, 'আমরা যদি ইভিএম তুলে দেই, আর যদি কারচুপি হয় আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি কেউ পরাজিত হয়ে মামলা করে পুনর্গণনা করে জয়ী হয়ে সংসদে আসতে পারবেন না। এটা গ্রাউন্ড রিয়েলিটি। আমরা এটাকে আমলে নিয়েছি। ভারত কিন্তু বায়োমেট্রিক দিতে পারেনি আমাদের ইভিএমের মতো। ইউরোপের কথা বলা হচ্ছে। সেটা আমি জানি না কী জন্য তুলে দিয়ে ইভিএম। তবে ওদের যদি হাত তুলে ভোট দিতে বলেন, ওরা ভদ্রভাবে হাত তুলে ভোট দিয়ে চলে আসবেন। নির্বাচন নিয়ে ওখানে কারচুপি হয় না। ওদের ওখানে কোনও মেশিন বসাতে হয় না। কারণ, ওদের ওখানে সভ্যতা ও নিয়মতান্ত্রিকতা এমন একটা পর্যায়ে এসেছে যে ইভিএম কী আর ব্যালট হলেই কী।'

আর্থিক সংকটের কথা আমি অ্যাপ্রিসিয়েট করি। এটা মনে করলে মন্ত্রণালয় দেখবে। এটা দেখার দায়িত্ব আমরা না। একটা সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমার এটা লাগবে, সরকার বললো পয়সা দিতে পারবো না, আমরা তো জোরাজুরি করবো না দেশের মানুষকে আর্থিক সংকটে ফেলে। সুষ্ঠু নির্বাচনের যে আর্থিক মূল্য এবং অসুষ্ঠু নির্বাচনের যে আর্থিক মূল্য তা ইভিএমের মূল্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৫০টি আসনে নির্বাচন ইভিএমে করার আর ১৫০টিতে ব্যালটে ভোট করার। কোনও পরিবর্তন করতে হলে আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করতে হবে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।