তারাই বলুক, ভালোটা বলুক মন্দটাও বলুক: জয়া
প্রকাশ : 2021-03-19 09:40:26১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বিকেল থেকে পান্থপথের স্টার সিনেপ্লেক্সে জড়ো হতে শুরু করেন চলচ্চিত্রপাড়ার অনেকেই। প্রায় এক বছর পর সবার সঙ্গে সবার দেখা! চেনা মুখের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই উল্লসিত হয়ে উঠছিলেন তাঁরা। করোনাকালের ‘নতুন অস্বাভাবিকতা’ মেনে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা দমিয়ে রাখছিলেন। এর বদলে কেবল পরস্পরকে ছুঁয়ে দিচ্ছিল মুঠ করা হাতের তালু। কমবেশি সবার মুখেই ছিল মাস্ক, তাতে আলোচনা জমাতে অসুবিধা হয়নি। দীর্ঘ সময় ঘরবন্দী থাকার পর সিনেমার মানুষেরা ফিরেছেন নিজ প্রাঙ্গণে, যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন তাঁরা। নতুন একটি সিনেমার উদ্বোধনী প্রদর্শনী, তারই অপেক্ষায় সবাই।
পৌনে পাঁচটায় ক্যামেরার ফ্ল্যাশগুলো হঠাৎ জ্বলে ওঠে। ফ্ল্যাশের আড়ালে অভিনেত্রী জয়া আহসানের মুখ দেখা যায়। তাঁর অভিনীত ছবি ‘অলাতচক্র’ শুরু হয় পাঁচটায়। প্রথম দৃশ্যেই পড়ল তুমুল করতালি। এই করতালি দর্শকদের চশমার জন্য। প্রথম থ্রি-ডি বাংলাদেশি সিনেমার জন্য। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই ছবি এ ফরম্যাটে বানানোর কী দরকার ছিল? উত্তরে উঠে আসে আরেকটি প্রশ্ন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির মাসে মুক্তি পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বানানো একটা ছবিতে যদি নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়, তাতে কী অসুবিধা?
মুক্তিযুদ্ধের ডামাডোল। ভারতের কলকাতার এক হাসপাতালের বিছানায় দিন কাটাচ্ছিল ক্যানসার আক্রান্ত তায়েবা। তার ভেতরে চলছিল আরেক যুদ্ধ, লেখক আহমদের প্রতি ভালোবাসা। অস্ফুট সেই ভালোবাসা নিয়ে সে কী করবে, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-বসে সেটাই ভাবতে থাকে। তার মনে হয়, জীবনটা যেন স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসে কাটিয়ে দেওয়া হলো। ট্রেনের কামরায় চড়ে কোনো গন্তব্যে পৌঁছানো হয় না। তাই তো চিঠিতে সে লেখে, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, আর আমি থাকব না...।’ নিশ্চিত মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছেও বাঁচার প্রবল ইচ্ছা নিয়ে লেখে, ছিঁড়েও ফেলে।
শেষ হয় ১ ঘণ্টা ২২ মিনিটের সিনেমা। শক্ত বুননে বাঁধা কোনো আঁটসাঁট গল্প নেই তাতে, সেটা টের পাওয়া যাবে সিনেমা শেষ হওয়ার পর। কিন্তু দেখার সময় সেটা মাথায় থাকবে না। এই সিনেমার আসলে কোনো শুরু আর শেষ নেই। একটা লম্বা ঘটনার যাত্রাপথের খানিকটা অংশ যেন দেখানো হয়েছে। সেখানে যুদ্ধ আর নিবেদন করতে না পারা প্রেমের নেপথ্যে উঠে এসেছে দৈনন্দিন জীবন। সে জীবনে আছে সংগ্রাম, যন্ত্রণা আর হতাশা। তবে তার ভেতরেই জায়গা করে নিয়েছে ছোট ছোট উদ্যাপন, হাসি আর গান।
প্রদর্শনীর পর তিন বা পাঁচজনের ছোট ছোট দল গোল হয়ে কথা বলতে থাকে ছবি নিয়ে। কেমন হলো ছবিটা? কানে আসে অগ্রজ পরিচালকদের টুকরো কথা, ‘কাস্টিং নিয়ে কোনো কথা হবে না। সেরা কাস্টিং। জয়া আহসান, আহমেদ রুবেল, আজাদ আবুল কালাম, গাজী মাহতাব হাসান, শিল্পী সরকার।’ আরও শোনা যায়, ‘সিনেমায় “কবর” নাটকে যাদের দেখা গেল...বড়, মাঝারি আর ছোট চরিত্রগুলো, ছকে বেঁধে আলাদা করা যায় না। যাকে একবার দেখা গেছে, তিনিও মনে রাখার মতো করে দেখা দিয়েছেন। ছোট ছোট চরিত্রের প্রতি যত্নটা চেখে পড়ল। কিছু কিছু জায়গায় শব্দ খানিকটা কানে লাগে। পুরোপুরি সিঙ্ক করেনি...।’
নানা দিক থেকে ‘প্রথম’ তকমা পেয়েছে ছবিটা। এই ছবির মাধ্যমে প্রথম সিনেমার পরিচালক হয়েছেন হাবিবুর রহমান। অন্তর্মুখী স্বভাবের এই তরুণ নির্মাতা প্রায় নীরবে সাহিত্যনির্ভর একটা ছবি বানিয়ে উপস্থাপন করলেন দর্শকদের জন্য। সেটাও আবার দেশের প্রথম থ্রি-ডি সিনেমা।
‘অলাতচক্র’ ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে জয়া ছাড়াও এসেছিলেন অভিনেতা আহমেদ রুবেল, পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী, জাহিদুর রহিম অঞ্জন, আকরাম খান, এন রাশেদ চৌধুরী, শিক্ষক ফৌজিয়া খান, শিল্প সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ, কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম, সাহিত্য সম্পাদক তপন বড়ুয়া, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কবি সাজ্জাদ শরিফ, কাজল শাহনেওয়াজ প্রমুখ। নিজের ছবি দেখে কেমন লাগল? প্রশ্ন রাখা হয় জয়া আহসানের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি কেন বলব? যাঁরা দেখলেন, তাঁরাই বলুক। ভালোটা বলুক, মন্দটাও বলুক।’