ঢাকা শহরের ৭০ স্থানে বায়ুদূষণের মাত্রা আর্দশ মানের চেয়ে ৫.২ গুণ বেশি
প্রকাশ : 2021-03-20 15:49:06১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ঢাকার ৫ এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি। অভিজাত আবাসিক এলাকাতে আশঙ্কাজনকভাবে দিন দিন বাড়ছে দূষণের মাত্রা। ২০২০ সালে বাংলাদেশের বাতাসে গড় ধুলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৭.১ মাইক্রোগ্রাম। যা পরিবেশ অধিদফতরের আদশ মানের সাড়ে ৫ গুণ বেশি। এরমধ্যে ঢাকার ৭০টি স্থানের দূষণ গবেষণা করে দেখা যায়, পরিবেশ অধিদফতরের বায়ুদূষণের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে বাতাস ৫.২ গুণ বেশি দূষিত।
শনিবার (২০ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ু দূষণ সমীক্ষা-২০২০’ শীর্ষক ক্যাপস এর বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোড়াখুড়ি ও নির্মাণ কাজ থেকে দূষণ হয় ৩০ ভাগ, ২৯ ভাগ হয় ইটভাটা ও শিল্প কারখানা থেকে, ১৫ ভাগ যানবাহনের কালো ধোয়া থেকে৷ ১০ ভাগ আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ এবং ৯ ভাগ গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষণ।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক এবং স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, লালবাগ, হাজারিবাগ, কোতোয়ালি, কামরাঙ্গীরচর ও সূত্রাপুরে বায়ু দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আবাসিক এলাকার মধ্যে ধানমন্ডি, গুলশান, বাড্ডা ও বনানীতে আশঙ্কাজনক হারে বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েছে।
পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বলেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে এর দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে দূষণ দূরের জন্য পানি ছিটানো, গাছ লাগানো, নির্মাণ সামগ্রী ঘিরে রাখারা বিষয়গুলো করা যেতে পারে।
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, দূষণের একটি বড় কারণ অনিয়ন্ত্রিত শিল্প কারখানা। এজন্য শিল্প কারখানা নির্মাণে আমাদের আরও সংবেদনশীল হতে হবে। এছাড়া পানি ছিটানো, ইটভাটা বন্ধ করা, ফিটনেস বিহীন গাড়ি অপসারণ করার পাশাপাশি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।
বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, যারা দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করবে তাদের বেশিরভাগই বসেন সচিবালয়ে। সেই সচিবালয়ের আশেপাশেই দূষণের পরিমাণ অনেক বেশি। সেটি কমাতে পারাই এখন তাদের অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সরকার ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট করে সেটি আটকে রেখেছে। এইটা হতে পারে না। দিন দিন দূষণ বেড়েই চলেছে। কিন্তু আইনের খসড়া করে তারা বসেই আছে। আগ্রহ আর নেই সেটি চূড়ান্ত করার। আমাদের মনে রাখতে হবে এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শিশুদের। আমরা এই অ্যাক্ট না করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদে ফেলছি।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, নানা উদ্যোগ নেওয়া হলো কিন্তু আইন নাই। তাহলে তো হবে না। তাই সুনির্দিষ্ট আইন থাকা জরুরি। এজন্য গবেষণা করাও অনেক বড় কাজ। কোনও অজুহাত না করে সরাসরি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদি সুপারিশ করা হয়। এরমধ্যে স্বল্পমেয়াদী সুপারিশে বলা হয়, মাস্ক ব্যবহার করা, প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা, নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা, রাস্তার ধুলা সংগ্রহে সাকশন ট্রাক ব্যবহার করা, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, ফিটনেট বিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ, সবশেষে সমন্বিতভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে।