ড্রাইভার নিয়োগে বাংলাদেশে ‘ড্রাইভিং স্কুল’ খুলবেন জাপানি উদ্যোক্তা
প্রকাশ : 2025-10-27 12:06:11১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বিশিষ্ট জাপানি উদ্যোক্তা এবং রাজনীতিবিদ মিকি ওয়াতানাবে জাপানে কর্মসংস্থানের জন্য কয়েক হাজার দক্ষ ড্রাইভার নিয়োগে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশে একটি ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। রবিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াতামী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াতানাবে এ কথা জানান।
ওয়াতানাবে প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘আমরা এখন একটি ড্রাইভিং স্কুল স্থাপনের জন্য গাজীপুরে ১২ হাজার বর্গমিটার জায়গা খুঁজছি। জাপানে দক্ষ চালকদের উচ্চ চাহিদা রয়েছে এবং বাংলাদেশ এই জনশক্তির মূল উৎস হতে পারে।’
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টা প্রস্তাবিত ড্রাইভিং স্কুলের জন্য উপযুক্ত জমি নির্ধারণের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
গত মে মাসে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের পর জাপানি উদ্যোক্তারা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ কর্মী নিয়োগের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেন।
প্রফেসর ইউনূসের দীর্ঘদিনের শুভাকাঙ্ক্ষী ওয়াতানাবে বৈঠকে জানান, তিনি ইতোমধ্যে অন্তত তিন হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে প্রশিক্ষণ ও নিয়োগের জন্য একটি ভাষা প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ওয়াতানাবে বলেন, ‘নির্মাণ ও কৃষি খাতে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে ৫২ জন শ্রমিক জাপানে গেছেন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘একাডেমি বর্তমানে প্রতি সেশনে ৪০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়। তবে নিয়োগ বাড়ানোর জন্য ধীরে ধীরে সারা দেশে এর সুবিধা এবং নেটওয়ার্ক প্রসারিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা একাডেমির পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে জাপানি শিষ্টাচার, শালীনতা ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি শিক্ষাদানকে একাডেমির প্রশিক্ষণের অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে হবে। এটি বাংলাদেশিদের জাপানকে গভীরভাবে বুঝতে এবং যাওয়ার আগে তাদের আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে।’
প্রফেসর ইউনূস ওয়াতামির প্রতিষ্ঠাতাকে যত্নশীল, নার্সিং, নির্মাণ এবং কৃষিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারণের জন্য উৎসাহিত দেন এবং উল্লেখ করেন, এই ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষ কর্মীরা জাপানে উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চতর মজুরি অর্জন করতে পারে।
জবাবে ওয়াতানাবে বলেন, ‘আমরাও এগুলো করতে চাই।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে জাপানি বিনিয়োগকারী ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সহজতর করার জন্য সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাপান সেলের প্রশংসা করেন ওয়াতানাবে। তিনি ঢাকা বা এর আশেপাশে আরেকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন, যাতে জাপানি কোম্পানিগুলোর মনহরদির মতো দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করার প্রয়োজন না হয়।
প্রধান উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে কর্মকর্তাদের একটি প্রস্তুত জায়গা খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন- কোনও একটি অব্যবহৃত আইটি পার্ক, যা দ্রুত ন্যূনতম বিনিয়োগের সঙ্গে একটি জাপানি ভাষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে পারে।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। ড্রাইভিং স্কুলের জন্য জমি এবং নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য একটি তৈরি জায়গা খুঁজে পাবো।’
প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজিব খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘শিগগিরই জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য ঢাকার আশপাশের সম্ভাব্য আইটি পার্ক সাইটগুলো পরিদর্শনের আয়োজন করা হবে।’
প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাপানি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে বৃহত্তর প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জাপানে পর্যাপ্ত ভাষা দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য বিদেশি নিয়োগকারীদের প্রয়োজন। বর্তমানে, পরীক্ষাগুলো বছরে মাত্র দুইবার অনুষ্ঠিত হয়, যা ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত নয়।’
সাক্ষাৎকালে ওয়াতানাবে এক দশকেরও বেশি সময় আগে প্রফেসর ইউনূসের দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নারায়ণগঞ্জে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা স্মরণ করেন।
তিনি জানান, স্কুলটিতে এখন দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এটি একটি চমৎকার প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা অসাধারণ এবং খুব ভালো করছে।
সভায় এসডিজি সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।