টিআইবির হতাশা, জাতিসংঘে শতাধিক প্রতিনিধি পাঠানোর বিব্রতকর রেকর্ড

প্রকাশ : 2025-09-26 11:15:03১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

টিআইবির হতাশা, জাতিসংঘে শতাধিক প্রতিনিধি পাঠানোর বিব্রতকর রেকর্ড

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে গেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তার সফরকে ঘিরে এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে সফরসঙ্গীদের সংখ্যা ও এর যৌক্তিকতা।

সরকারি নথি বলছে, সফরসঙ্গীর সংখ্যা ১০৪, অথচ প্রকাশিত পুস্তিকায় সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৬২। এই অমিল এবং প্রতিনিধিদলের আকার নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার সফরে রয়েছেন নিরাপত্তা দল, সরকারি কর্মকর্তারা এবং তিনটি রাজনৈতিক দলের ছয়জন নেতা। তাদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জামায়াতের যুক্তরাষ্ট্র শাখার মুখপাত্র মোহাম্মদ নকিবুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা রয়েছেন।

রাজনৈতিক সরকারের সময়ে সাধারণত এমন সফরে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা যোগ দিতেন। এবারে অন্তর্বর্তী সরকারও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সফরসঙ্গী করেছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে— নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার কি রাজনৈতিক সরকারের পথই অনুসরণ করছে? কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের বক্তৃতার সময় সীমিত সংখ্যক সফরসঙ্গীর উপস্থিতির সুযোগ থাকে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে এই পরিস্থিতিতে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি মন্তব্য করেছে, ‘পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের অনুকরণে এমন বিব্রতকর চর্চা অব্যাহত রেখে অন্তর্বর্তী সরকার কী বার্তা দিতে চাইছে, সে প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার জনগণের আছে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে অতীতে কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে শতাধিক প্রতিনিধি পাঠানোর সংস্কৃতি দেখা গেছে। কখনো কখনো সংখ্যা দুই শতাধিকও ছাড়িয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, রক্তক্ষয়ী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর গঠিত এই সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পথে হাঁটবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমান সরকারও সেই পুরোনো পথই অনুসরণ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার ৫৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল, যা কিছুটা হলেও স্বচ্ছতার ইঙ্গিত দিয়েছিল। এবার উল্টো শতাধিক প্রতিনিধি পাঠিয়ে সরকার নিজেই নিজের জারি করা পরিপত্রের বিরোধিতা করছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছর ৭৯তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী ছিলেন ৫৭ জন। তখন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, ব্যয় সংকোচনের নীতি অনুসরণ করা হবে। অথচ এবার সরকারি নথিতে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ১০৪।

অতীতের উদাহরণ টেনে টিআইবি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া কিংবা চীনের মতো পরাশক্তিরাও সাধারণত এত বড় প্রতিনিধিদল পাঠায় না। কিছু সুশাসনবর্জিত দেশের ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত থাকলেও সেগুলোর মূল উদ্দেশ্য কূটনৈতিক প্রয়োজন নয়, বরং ‘ভ্রমণবিলাস’।

ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্ন তোলেন, ‘জাতীয় স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রতিনিধিদের ভূমিকা কী? আলোচ্য বিষয়গুলোর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না? জনগণের করের টাকায় এই ব্যয়ের যৌক্তিকতা কী?— এসব প্রশ্নের জবাব রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের অবশ্যই দেওয়া উচিত।’