টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ইস্যুতে সতর্ক জেলেনস্কি, ট্রাম্পের অবস্থান অনিশ্চিত
প্রকাশ : 2025-10-18 11:19:14১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন থেকে তিনি প্রত্যাশিত টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের নিশ্চয়তা পাননি।
বৈঠকের পর জেলেনস্কি বলেন, তিনি ও ট্রাম্প দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন, তবে “মার্কিন প্রশাসন উত্তেজনা বাড়াতে চায় না” বলে এই বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
বৈঠকের পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে কিয়েভ ও মস্কোকে যুদ্ধ থামাতে ও বর্তমান অবস্থানে স্থির থাকতে আহ্বান জানান। খবর বিবিসি।রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপের এক একদিন পরই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
‘টমাহক দিলে রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতি দুর্বল হবে’
জেলেনস্কি বিশ্বাস করেন, রাশিয়ার তেল ও জ্বালানি স্থাপনায় টমাহক হামলা চালানো গেলে পুতিনের যুদ্ধ অর্থনীতি মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে।তবে ট্রাম্প এই সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ না করলেও হোয়াইট হাউসে তার বক্তব্য ছিল বেশ সতর্ক। তিনি বলেন, “আশা করি তাদের (ইউক্রেনের) এই ক্ষেপণাস্ত্রের দরকার হবে না। আমরা যুদ্ধটা টমাহক ছাড়া শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।”
ট্রাম্প বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো হলে তা “উত্তেজনা বাড়াবে”, তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চান।টমাহক সরবরাহের হুমকি কি পুতিনকে বৈঠকে রাজি করিয়েছে কিনা, বিবিসির এক সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করলে জবাবে ট্রাম্প বলেন, “এই হুমকি ভালো, তবে এই হুমকি সব সময়ই থাকে।”
জেলেনস্কির প্রস্তাব: ড্রোনের বিনিময়ে টমাহক
আলোচনায় জেলেনস্কি প্রস্তাব দেন, ইউক্রেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টমাহকের বিনিময়ে ড্রোন দিতে পারে। ট্রাম্প এতে হাস্যোজ্জ্বলভাবে সাড়া দেন।এছাড়া জেলেনস্কি ট্রাম্পকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, ট্রাম্প সেই গতিশীলতাকে ব্যবহার করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষের পথে আনতে পারবেন।
বাইরে সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞাসা করেন, পুতিন সত্যিই কোনো সমঝোতা চান কিনা, জেলেনস্কি বলেন, “আমি জানি না, তবে ইউক্রেনের টমাহক পাওয়ার সম্ভাবনাই রাশিয়াকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে।”জেলেনস্কি আরও বলেন, “আমি বাস্তববাদী। আশাবাদ নয়, বাস্তবতা নিয়েই কাজ করছি।”
ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ, যুক্তরাজ্যের সহায়তার আশ্বাস
জেলেনস্কি এক্স পোস্টে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমাদের এখন মূল লক্ষ্য যত বেশি সম্ভব প্রাণ বাঁচানো, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইউরোপের ঐক্য আরও শক্তিশালী করা।”যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফোনালাপটিকে “ফলপ্রসূ” বলে উল্লেখ করে জানিয়েছেন, “ব্রিটেন মানবিক ও সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে।”
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের প্রস্তুতি, জেলেনস্কিকে বাদ দেওয়া হতে পারে
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ট্রাম্প টমাহক বিক্রির ধারণায় উন্মুক্ততা দেখালেও, পুতিন সতর্ক করেছেন—এতে মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্ক আরও অবনতি ঘটবে।বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টােবর) ট্রাম্প বলেন, পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে “গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি” হয়েছে এবং তারা শিগগিরই মুখোমুখি বৈঠক করবেন।
তবে জেলেনস্কিকে সেই বৈঠকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, “পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে তিক্ততা রয়েছে। আমরা চাই সবাই স্বস্তিতে থাকুক। হয়তো তিনজনের বৈঠক হবে, আবার আলাদা করেও হতে পারে।”
ইউক্রেনে ক্ষতিগ্রস্তদের আশা: ‘শান্তি ও ন্যায়ের জয় হবে’
বিবিসি জানায়, কিয়েভের এক উপশহরে ক্ষেপণাস্ত্রে ধ্বংস হওয়া দোকান মেরামত করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ভলোদিমির।যখন তাকে ট্রাম্প-পুতিন আসন্ন বৈঠক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি প্রথমে কেঁদে ফেলেন, তারপর বলেন, “সত্য ও গণতন্ত্রের জয় হবে। সন্ত্রাস ও অশুভ শক্তি হারিয়ে যাবে। আমরা শুধু বাঁচতে চাই, যুদ্ধ নয়—আমরা শুধু শান্তি চাই।”