জোট সরকার গঠনে বিরোধীদের চুক্তি, এবার অবসান হচ্ছে নেতানিয়াহুর শাসন
প্রকাশ : 2021-06-03 07:54:38১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ইসরায়েলে নতুন জোট সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বিরোধী দলগুলো। গতকাল বুধবার দেশটির প্রধান বিরোধী দলের নেতা ইয়ার লাপিদ দেশটির প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিনকে এই ঐকমত্যের খবর জানিয়েছেন। তাঁরা শিগগিরই সরকার গঠন করবেন। এর মাধ্যমে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর টানা ১২ বছরের শাসনের অবসান হতে চলেছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মধ্যপন্থী দল ইয়েশ আতিদের নেতা ইয়ার লাপিদ একটি বিবৃতি দিয়ে জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা জানিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী দল ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেত প্রথম দুই বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর বাকি দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিদ। তবে নতুন এই সরকারের শপথ নেওয়ার আগে সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যাচাইয়ে দেশটির পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে। জোটটি যদি ১২০ আসনের পার্লামেন্টের ( নেসেট) সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়, তাহলে নতুন করে নির্বাচন হবে দেশটিতে। এটা হলে গত দুই বছরে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন দেখতে যাচ্ছে দেশটি।
বিবৃতিতে লাপিদ বলেন, চুক্তির বিষয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিনকে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে ইসরায়েলের সব নাগরিকদের জন্য কাজ করবে এই সরকার। নতুন সরকার তাদের সব বিরোধীদের প্রতি সম্মান দেখাবে এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সাধ্যমতো সবকিছু করবে। একই সঙ্গে ইসরায়েল সমাজের সব অংশকে একসঙ্গে সংযুক্ত করবে।’
গত মার্চে ইসরায়েলে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নেতানিয়াহুর ডানপন্থী দল লিকুদ পার্টি সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন আসন পায়নি দলটি। অনেক চেষ্টার পরও জোট সরকার গঠনে ব্যর্থ হয় দলটি।
ওই নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পায় নেতা ইয়ার লাপিদের মধ্যপন্থী দল ইয়েশ আতিদ। লাপিদ সাবেক টিভি উপস্থাপক এবং প্রগতিশীল, মধ্যপন্থী। নেতানিয়াহুর দল জোট সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ার পর সরকার গঠনের জন্য ইয়েশ আতিদ পার্টিকে আমন্ত্রণ জানান প্রেসিডেন্ট। এ জন্য ২৮ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল দলটিকে। কিন্তু গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের ১১ দিনের হামলায় ওই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়।
বেঁধে দেওয়া সময়সীমার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে গত সপ্তাহে জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে উগ্র ডানপন্থী নাফতালি বেনেতের দলের সঙ্গে জোট করার ঘোষণা দেন ইয়ার লাপিদ। গত রোববার এই চুক্তির পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে বেনেতের দল। তাদের ছয়টি আসন ইসরায়েলে জোট সরকার গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
ক্ষমতায় টিকে থাকতে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার পথ বেছে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। কিন্তু তাঁর আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ, ঘুষ গ্রহণ, বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে বিচার চলছে। যদিও তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। ক্ষমতা হারালে তাঁকে কঠিন সময় পার করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহুর বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল খুব সামান্য হলেও একটি জায়গায় তাঁরা সবাই মিলেছেন। প্রত্যেকেই নেতানিয়াহুর শাসনের অবসান চাইছেন।
গণতন্ত্রের শক্তি
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, নতুন এই জোটে রয়েছে বর্তমান নেতানিয়াহু সরকারের অংশ বেনি গান্তজের মধ্যপন্থী দল ব্লু ও হোয়াইট পার্টিও। নতুন জোটের পক্ষ থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার গঠন এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণ এবং ইসরায়েলি সমাজ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিতে তারা একমত হয়েছে। গান্তজ নতুন সরকারেও প্রতিরক্ষামন্ত্রীই থাকবেন।
লাপিদের একজন মুখপাত্র বলেছেন, জোট সরকার গঠনের চুক্তিতে পৌঁছেতে বামপন্থী দল মেরেতজ, মধ্য–বামপন্থী লেবার পার্টি ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যানের জাতীয়তাবাদী দল ইসরায়েল বেইতেনু পার্টিও। ইউনাইডেট আরব লিস্টও জোট সরকারের চুক্তিতে যোগ দিয়েছে। যদি এই জোট সরকার গঠিত হয়, তাহলে ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রথম কোনো আরব দল দেশটির সরকারের অংশ হবে।