‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নিয়ে বক্তব্যের জন্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাইতে হবে: নাহিদ

প্রকাশ : 2025-10-18 17:05:40১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নিয়ে বক্তব্যের জন্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাইতে হবে: নাহিদ

জুলাই সনদ সই করার দিনে দাবি পূরণে বিক্ষোভে নামা ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নিয়ে বক্তব্যের জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

আজ শনিবার বিএনপি নেতার বক্তব্য শোনার পর তার প্রতিক্রিয়ায় রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তিনি।মূলত জুলাই জাতীয় সনদে সই না করা এবং গতকালের অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল।

সে প্রসঙ্গে কথা বলার পর নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আরেকটি বিষয় আপনাদের কাছে বলতে চাই, কিছুক্ষণ আগেই আমরা দেখেছি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন সাহেব (সালাহউদ্দিন আহমদ) উনি গতকালকের ঘটনায় জুলাই যোদ্ধা, যারা গতকাল আহত হয়েছে, তাদেরকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

জুলাই সনদ স্বাক্ষরকে কেবলই আনুষ্ঠানিকতা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।নাহিদ ইসলাম বলেন, 'এটা আমরা এর আগেও বলেছি। আজকেও পুনর্ব্যক্ত করেছি। যদি এর (জুলাই সনদ) কোনো আইনি ভিত্তি না হয়, এর মূল্য, এর কোনো অর্থ তৈরি হবে না। ফলে আমরা এই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিইনি এবং যদি এর আইনি ভিত্তি তৈরি না হয় এটার কেবল আনুষ্ঠানিকতাও থাকবে না, এটি একটি গণপ্রতারণা এবং জাতির সঙ্গে একটি প্রহসন হবে।'

৯০–এর গণ-অভ্যুত্থানের পরও তিন দলের জোটের যে রূপরেখা, সেই রাজনৈতিক সমঝোতা রক্ষা করা হয়নি বলেন নাহিদ ইসলাম। সংবিধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিবর্তন করতে চাইলে আইনি ভিত্তি প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এই ৭২–এর সংবিধান যাতে পরিবর্তন না হয়, পুরোনো ফ্যাসিস্ট কাঠামো যাতে রয়ে যায়—তার জন্য নানা অপচেষ্টা কিন্তু দেশের ভেতরে, দেশের বাইরে থেকে করা হচ্ছে।'

বিগত ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সুবিধাভোগীদের চাপের কারণে কিছু কিছু রাজনৈতিক দল আপস করেছে বলে মন্তব্য করেন এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম। ফ্যাসিস্ট কাঠামো টিকিয়ে রাখতে, অক্ষুণ্ন রাখতে নানাভাবে চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং আরও কিছু রাজনৈতিক দল এবং অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার চাপেই কিন্তু সরকার এই ঐকমত্য কমিশন গঠন, সংস্কারপ্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা এবং জুলাই সনদ পর্যন্ত, এত দূর এসেছে।’

৯০–এর পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশে দেখতে চান না বলে জানান নাহিদ। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আমাদের এই উপলব্ধি ছিল যে আমাদের লড়াইটা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয় কেবল, একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তন হলেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান হবে না। বরং এই সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে ৯০–এর গণ-অভ্যুত্থানের পরে এই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে যেভাবে প্রতারণা করা হয়েছিল, গণ-অভ্যুত্থানকে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে যেভাবে জাতীয় নেতারা এবং সেই সময় রাজনৈতিক দলগুলো পকেটভর্তি করেছিল—আমরা এবার সেটা হতে দেব না।’

গতকাল শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, 'সেখানে জুলাই যোদ্ধা যাঁরা ছিলেন, শহীদ পরিবারকে কীভাবে অবমাননা করা হয়েছে এবং জনগণের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক, কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না, জনগণের আকাঙ্ক্ষার কোনো বাস্তবায়ন বা প্রতিফলন গতকালকের অনুষ্ঠানে ঘটেছে বলে আমরা মনে করি না।'

নাহিদ ইসলাম বলেন, 'এটি তখনই ঘটবে, জুলাই গণ-অভুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার সার্বভৌম অভিপ্রায় হিসেবে যখন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস (প্রধান উপদেষ্টা) একটি আদেশ জারির মাধ্যমে এর (জুলাই জাতীয় সনদ) আইনি ভিত্তি তৈরি করবে এবং সেই ভিত্তি অনুসারে গণভোট এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এবং গণপরিষদ একটি নতুন সংবিধান তৈরি করবে।'

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানান, এনসিপি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবিতে রাজপথে কর্মসূচি নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনে আমরা জোরালো ভূমিকা পালন করেছি। যদিও শুরুতে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে অনেক দলই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। শুধু এটাকে একটা জেন্টেলম্যান অ্যাগ্রিমেন্ট, একটা রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হিসেবেই রাখার পক্ষপাতী ছিলেন।' গতকাল ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার বিচার দাবি করেছে এনসিপি।

গতকাল দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে হটিয়ে দেওয়ার পর ‘জুলাই যোদ্ধারা’ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান, ভাঙচুর করেন পুলিশের বাসসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি, আগুন জ্বালান সড়কে। দুই ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর বৃষ্টির মধ্যে বিকেলের আগে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিক্ষুব্ধদের ঢিল ছোড়াছুড়ি, পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ এবং সাউন্ড গ্রেনেড ফাটানোর মধ্যে উভয় পক্ষের অন্তত ২৭ জন আহত হন।

নানা অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সই হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে তৈরি এই সনদে গতকাল সই করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট। পাশাপাশি সনদে সই করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।

তবে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অনুষ্ঠানে যায়নি, সনদে সইও করেনি। এ ছাড়া চারটি বাম দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ জুলাই সনদে সই করেনি। আর গণফোরাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও সই করেনি সনদে। অবশ্য দলগুলো চাইলে পরেও সনদে সই করতে পারবে।

আজ সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সালাহউদ্দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘যেসব বিশৃঙ্খলা হয়েছে, আমরা খোঁজ নিয়েছি, এটা তদন্তাধীন আছে। দেখা গেছে, এখানে জুলাই যোদ্ধাদের নামে কিছুসংখ্যক ছাত্র নামধারী উচ্ছৃঙ্খল লোক ঢুকেছে। সেটা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী বলে মনে করি। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বিভিন্ন ফাঁকফোকরে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে। এখানে কোনো সঠিক জুলাই বা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কেউ থাকতে পারে না।’

তাঁর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ আরও বলেন, ‘তিনি ভুলবশত, হয়তো তাঁর কাছে তথ্য না থাকার কারণে তিনি এ রকমটা বলেছেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন দেশে ছিলেন না। যেহেতু তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দেশে ছিলেন না, রাজপথে ছিলেন না। সেহেতু হয়তো তিনি জানেন না যে কে রাজপথে ছিল, কারা লড়াই করেছিল, কারা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল?’

গতকাল পুলিশের হামলায় আহত ব্যক্তিদের জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়তার কথা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, ‘আতিকুল গাজী (আতিকুল ইসলাম) যার হাত কাটা গিয়েছে, তাকে যখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বলা হয়, যখন শহীদ মীর মুগ্ধের বাবাকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বলা হয়, ইয়ামিনের বাবাকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বলা আমাদের জন্য খুবই কষ্টের, খুবই বেদনাদায়ক।’

ফলে আমাদের আহ্বান থাকবে, তিনি (সালাহউদ্দিন) তাঁর এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করবেন এবং সেই আহত যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারদের কাছে ক্ষমা চাইবেন এবং তাদের সঙ্গে বসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গল্পটা শুনবেন, ইতিহাসটা শুনবেন।’