জীবন সংগ্রামে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাহীন

প্রকাশ : 2023-05-23 11:35:31১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

জীবন সংগ্রামে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাহীন

পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে আতর, সুরমা, টুপি বিক্রি করে অতিকষ্টে জীবন সংসারে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন বগুড়ার আদমদীঘির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাহীনুর রহমান শাহীন। শাহীনের সংসার চলে খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে। প্রতিবন্ধী শাহীনের জন্ম আদমদীঘি উপজেলা সদরের শিবপুর গ্রামের হতদরিদ্র পিতা আজিমউদ্দীন প্রামানিকের ঘরে। এই ৪২ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শাহীন সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য সহযোগিতায় ক্বওমী মাদ্রাসার হেফজ বিভাগ পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। 

জন্মের পর থেকেই শাহীন দু’চোখে ঝাপসা দেখতো। শাহীন যখন ধীরে ধীরে বড় হয় তখন চোখের সমস্যা যেন আরো বাড়িয়ে যায়। এখন সে খুব একটা দেখতেই পায় না। সে রাস্তা পারাপার বা তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় কাজের সময় অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারে না। পাঁচ ভাই-বোনদের মধ্যে শাহীনই সবার বড়। শাহীন প্রায় ১৭ বছর আগে বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করে। এরপর শাহীনের পরিবারে এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু নিয়তির কি পরিহাস তার প্রথম ছেলে শিহাবও জন্ম থেকেই শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। ৯ বছর বয়সে শাহীনের প্রথম ছেলে শিহাব মারা যায়। 

বর্তমানে প্রতিবন্ধী শাহীনের ঘরে রয়েছে স্ত্রী রিনা বেগম,ছেলে সানজিত(১১), সাজাইব হাসান(৭)ও মেয়ে ফাতেমা(৫)। আদমদীঘি উপজেলা সদর, নসরতপুর,সাঁওইল,মুরইল হাট সহ প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে আতর, সুরমা, টুপি বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে তার জীবন সংসার কোন রকমে কেটে যায় শাহীনের। শাহীন জানান, জন্মের পর থেকে আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। নওগাঁ শহর থেকে আতর, সুরমা ও টুপি পাইকারি কিনে তা হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকি। প্রতিদিন দেড় শত থেকে দুই শত টাকা সুরমা, আতর, টুপি বিক্রি করে লাভ হয়। এই
টাকা দিয়ে সংসার ঠিকমত চলে না। সরকারি ভাবে শাহীন প্রতিবন্ধি কার্ডের মাধ্যমে কিছু টাকা পায়।

প্রতিবন্ধী হয়েও ভিক্ষা না করে বা মানুষের কাছে হাত না বাড়িয়ে কঠিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে হাটে বাজারে আতর, সুরমা, টুপি বিক্রি করে এই পাঁচ সদস্য সংসার চালাতে হয়। প্রতিবন্ধী শাহীন আরো জানায়,তার সামান্য আয় দিয়ে ঠিক মত স্ত্রী,সন্তানদের নতুন জামা-কাপড় সহ ভালমন্দ কিছু কিনে দিতে পারে না। শাহীন যে ব্যাগে আতর, সুরমা, টুপি বিক্রি করে বেড়ায় সে ব্যাগটিও অনেক পুরনো আর ছেঁড়া। আর পরনের কাপড় চোপড়ও ময়লা অপরিষ্কার। তারপরও এভাবেই চলছে শাহীনের জীবন-যুদ্ধ।