জার্মানির বিরুদ্ধে ড্র করল স্পেন
প্রকাশ : 2022-11-28 09:48:22১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
মাত্র দুই ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই আজ স্পেনের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমেছিলেন নিকলাস ফুলক্রুগ। সেই ফুলক্রুগই ত্রাতা হলেন জার্মানির। আল খোরের আল বায়ত স্টেডিয়ামে ভেরডার ব্রেমেন ফরোয়ার্ডের গোলেই স্পেনের বিপক্ষে হার এড়িয়েছে জার্মানি। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ‘বড়’ ম্যাচটি ড্র হয়েছে ১-১ গোলে।
৭০ মিনিটে টমাস মুলারের বদলি হিসাবে মাঠে নামা ফুলক্রুগ গোল পেয়ে যান ১৩ মিনিট পরেই। লিরয় সানের পাস থেকে জামাল মুসিয়ালার পা ঘুরে বল আসে ফুলক্রুগের কাছে। দুর্দান্ত এক শটে জার্মানির জার্সিতে দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যান ২৯ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
এর আগে ৬২ মিনিটে স্পেনকে এগিয়ে দিয়েছিলেন আরেক বদলি খেলোয়াড় আলভারো মোরাতা। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে বদলি নেমে গোল পেলেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। বাঁ প্রান্ত থেকে জর্দি আলবার পাস খুঁজে নেয় মোরাতাকে। ডান পায়ে ফ্লিকে বল জালে পাঠাতে ভুল হয়নি তাঁর।
এই ড্রতে জমে উঠল ‘ই’ গ্রুপের হিসাবনিকাশ। দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে স্পেনই শীর্ষে। সমান ৩ পয়েন্ট নিয়ে গোল পার্থক্যে দুই ও তিনে জাপান ও কোস্টারিকা। প্রথম পয়েন্ট পাওয়া জার্মানি তলানিতে থাকলেও সুযোগ আছে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার। গ্রুপের শেষ ম্যাচে জার্মানি কোস্টারিকাকে ও স্পেন জাপানকে হারালে শেষ ষোলোতে যাবে সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নই।
জাপানের কাছে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করা জার্মানরা ম্যাচ শুরুর আগেই সুখবর পেয়েছিল। সেই সুখবরটা আবার এসেছিল জাপানের কাছ থেকেই! জাপান কোস্টারিকার কাছে হেরে যাওয়াতেই যে নিশ্চিত হয়ে যায় অন্তত আজই শেষ হচ্ছে না জার্মানির বিশ্বকাপ অভিযান। স্পেনের কাছে হারলেও টিকে থাকতেন নয়্যাররা। শেষ পর্যন্ত স্পেনকে রুখে দিয়ে এক পয়েন্ট পেয়েই নিজেদের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে জার্মানি।
স্পেন শেষ পর্যন্ত হতাশ হলেও নিরপেক্ষ দর্শক দারুণ এক ম্যাচেরই সাক্ষী হলেন। দুই সাবেক চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে সুযোগ অবশ্য বেশি পেয়েছিল ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন স্পেনই। গাভি-ফেরান তোরেসরা-দানি অলমোরা সুযোগগুলো শুধু কাজে লাগাতে পারেননি। জার্মানরাও অবশ্য বলতে পারেন সুযোগ তো আমরাও নষ্ট করেছি।
দ্বিতীয়ার্ধের মতো রোমাঞ্চের কমতি ছিল না প্রথমার্ধে। দুর্দান্ত একটি গোল হতে হতেও শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত সেভ হয়ে গেছে। গোলরক্ষকের হাস্যকর ভুলও অবশ্য দেখা গেছে। ভিএআর জল ঢেলেছে গোল উদ্যাপনেও।
প্রথমার্ধে দাপট ছিল স্প্যানিশদেরই। জার্মানদের ২৮ শতাংশের তুলনায় বলের দখল প্রায় দ্বিগুণ ছিল স্পেনের। গোল করার কাছাকাছি বেশি গিয়েছিল লুইস এনরিকের দলই। কিন্তু যে একবার বল জালে জড়িয়েছিল, সেটি ছিল আবার হান্সি ফ্লিকের দলের সৌজন্যে।
কোস্টারিকাকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে কাতার বিশ্বকাপ শুরু করা স্পেন ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত আজ। বুন্দেসলিগা ক্লাব রেড বুল লাইপজিগের মিডফিল্ডার দানি ওলমো মার্কো আসেনসিওর কাছ থেকে বল পেয়ে জার্মান গোলের ডান প্রান্তকে লক্ষ্য বানিয়েছিলেন। দুর্দান্ত বাঁকানো শটটি জার্মান গোলরক্ষক মানুয়াল নয়্যারের আরও দুর্দান্তভাবে বাঁচিয়ে দিলেন। তাঁর আঙুল ছুঁয়ে একটু ওপরে উঠে ক্রসবারে শুধু চুমুই খেয়েই শেষ হয় আল রিহলার ভ্রমণ।
স্প্যানিশ আর্মাডার আক্রমণ এরপর বারবারই আছড়ে পড়েছে জার্মান সীমানায়। জার্মানরা দু-একবার স্প্যানিশ সীমানায় হানা দিলেও স্পেন স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি জার্মান রক্ষণকে।
২৬ মিনিটে নয়্যার একটু মনোযোগ হারিয়েছিলেন। সেই সুযোগ বল কেড়ে নেন তরুণ স্প্যানিশ গাভি। মনে হয়েছিল জার্মানি গোল খেয়েই বসছে। তবে ফেরান তোরেস নষ্ট করেছেন সুযোগটা। দুই মিনিট পর আবার নয়্যার, এবার আসেনসিও বল প্রায় কেড়েই নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নয়্যার অ্যান্টনি রুডিগারকে পাস দিয়ে বাঁচেন ।
জার্মানরা বড় সুযোগটা পেয়ে গিয়েছিল এর আগেই। স্পেন গোলরক্ষক উনাই সিমনই সুযোগটা করে দিয়েছিলেন। টমাস মুলার ও জামাল মুসিয়ালার সমন্বয়ে গড়া আক্রমণ থেকে ইলকায় গুন্দোয়ানের দুর্বল শট চলে যায় সিমনের কাছে। সিমন সতীর্থকে পাস দেওয়ার মতোই বলটা পাঠালেন বক্সের বাইরে থাকা জার্মান খেলোয়াড় সার্জ নাব্রির কাছে। নাব্রি অবশ্য সুযোগটা হেলায় হারালেন বাইরে মেরে।
জার্মানি গোল পেয়ে গিয়েছিল ৩৯ মিনিটে। ইয়োশুয়া কিমিখের ফ্রিকিক থেকে হেডে স্পেনের জালে বল পাঠিয়ে উদ্যাপনে মাতেন রুডিগার। ভিএআর অবশ্য একটু পরেই জানিয়ে দেয় অফসাইডে ছিলেন জার্মান ডিফেন্ডার ।
বাতিল হওয়া সেই গোলের মতো জার্মানির বিশ্বকাপ ভাগ্যও এখন অনিশ্চিত। শেষ ম্যাচে কোস্টারিকাকে বড় ব্যবধানে শুধু হারালেই চলবে না, স্পেন যেন জাপানকে হারায় সেই প্রার্থনাও করতে হবে দলটিকে।