জামালপুর সদর উপজেলার গোপালপুরে বসেছে জামাই মেলা

প্রকাশ : 2025-03-15 16:30:54১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

জামালপুর সদর উপজেলার গোপালপুরে বসেছে জামাই মেলা

জামালপুর সদর উপজেলার ৭নং ঘোড়াধাপ ইউনিয়নের অন্তর্গত গোপালপুর বাজারে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো  শনিবার ১ চৈত্র থেকে বসেছে জামাই মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে সমগ্র পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের বন্যা। জানা গেছে, তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে প্রায় দুই শত বছর আগে অর্থাৎ ১৮ শতকে গোপালপুর বাজারে ছিল একটি বিরাট  বটগাছ। সেই বটগাছের  নিচে বারুনি স্নান উপলক্ষ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জমায়েত হতো। ওই জমায়েত থেকে চৈত্র মেলার উৎপত্তি ।

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের এই মেলা বসানো দেখে এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করলেন তারা পারলে আমরা পারবো না কেন। হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমানরা গোপালপুরে জমায়েত হয়ে ইসলামী মেলা না দিয়ে পাল্টা মেলার আয়োজন শুরু করেন। পরবর্তীতে শত বছর ইসলামী মেলা নামে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে প্রায় অর্ধ শত বছর ধরে ইসলামী মেলাটি জামাই মেলা নাম ধারণ করেছে। মেলাটি এখন একক কোনো সম্প্রদায়ের মেলার মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে গোপালপুর মেলা এখন সবার  জন্য উন্মুক্ত এবং সার্বজনীন।

গোপালপুরের জামাই মেলা উপলক্ষে জামালপুর সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়ন যথাক্রমে নরুন্দি, ঘোড়াধাপ, ইটাইল, বাঁশচড়া, তুলশীরচর, লক্ষ্মীরচর, রানাগাছাসহ প্রতিবেশি মুক্তাগাছার চেচুয়া এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ শুরু হয়। ঈদ না আসতেই দেখা দেয় ঈদের আনন্দ। শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক এমনকি বৃদ্ধরাও মেলার আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন।

জামাই মেলা উপলক্ষে শশুর পক্ষ মেয়ে-জামাই, নাতি নাতনিদের দাওয়াত করে আনে। নাইর আনে। নতুন জামাইয়ের হাতে তুলে দেয় সেলামির টাকা। আর জামাই স্ত্রী, শালা শালিকে নিয়ে মেলায় গিয়ে মিষ্টি, নানা মিঠাই মন্ডা ও বিভিন্ন পণ্য কিনে। শালা শালীকে কিনে দেন নানা উপহার সামগ্রী। এছাড়াও শশুর পক্ষ থেকে জামাই বাড়ীতে পাঠানো হয় মিঠায় মন্ডা ও প্রসাধনী সামগ্রী। জামাইরা মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন সারা বছর। কবে মেলা আসবে। কবে হাতে পাবেন শশুর শাশুড়ির সেলামির টাকা। শুধু জামাইরা কেন, মেলা উপলক্ষে নিকট আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধদের দাওয়া দেয়া হয়। তাদের তুলে দেয়া হয় মিষ্টির প্যাকেট।

নান্দিনা এলাকার বাসিন্দা আজমুল হোসেন মিঠু ও রুহুল আমীন লাভলু জানান আমরা গোপালপুর এলাকায় বিয়ে করেছি। বিয়ের পর থেকেই আমাদের শশুর শাশুড়ি দাওয়া দিয়ে নিয়ে যায়। মেলা করার জন্য হাতে তুলে দেয় নগদ টাকা। এভাবেই চলছে প্রায় ১৫ বছর হলো। বাঁশচড়া গ্রামের রফিক মন্ডল জানান, প্রতি বছরই আমি শশুর বাড়ী থেকে মেলার দাওয়াত পাই। মেলার দাওয়াতে যে আনন্দ পাই তা বলে বুঝানো যাবে না। পর্বাঞ্চলের বহু লোকজন জানান একই কথা।

গোপালপুরের জামাই মেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো বালিশ মিষ্টি। এখানে ৫ কেজি থেকে ১০ কেজি ওজনের একেকটি বালিশ মিষ্টি পাওয়া যায়। এছাড়াও কাঁচা মরিচের সবুজ মিষ্টিসহ নানা ধরনের মিষ্টির বিশাল সমারোহ ঘটে।

জামাই মেলায় পুতুলনাচ, নাগরদোলা ও লাঠি খেলা, মটরসাইকেল খেলা, টয় ট্রেনসহ ইত্যাদি খেলার আয়োজন করা হয়। মিষ্টি-মন্ডার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে চমচম, গোল্লা, বালিশ মিষ্টি, কাঁচা মরিচের মিষ্টি, সন্দেশ, মুড়ি-মুড়কি, ঝুরি, বাতাসা, কদমা, নৈ-টানা ও সাজ। শিশুদের জন্য আছে বিভিন্ন প্রকার খেলনা ও নানা প্রসাধনী সামগ্রী।

আগামী ৩ চৈত্র  মূল মেলা শেষ হলেও ঘর-গৃহস্থের যাবতীয় ফার্নিচার ও আসবাবপত্র থাকবে আরও ১৫ দিন। এর মধ্যে রয়েছে লোহার তৈরি দা, বটি, খুন্তি, কুড়াল, কাস্তে ও ছেনি। বিভিন্ন পণ্য, পোশাক, মৃৎশিল্প, তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, বেঁতের তৈরি ডালা, ডাকি, দাঁড়িপাল্লা, বাঁশের তৈরি চালুন, খালই, ধারাই, ডুলি; তালের পাতার তৈরি হাতপাখা, শীতল পাটি; সিসা ও মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিলসহ গৃহস্থের বাড়ির সব ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বিপুল সমারোহ দেখা যাচ্ছে মেলায়। এছাড়া শুকনো মরিচ, হলুদ, আদা, অন্যান্য গরম মসল্লাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় তরকারি বেগুন, আলু, করলা, তরমুজ ও সাজনাসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ ও শাক-সবজি তো আছেই।

ঘোড়াধাপ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া জানান, ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা উপলক্ষে সমগ্র পূর্বাঞ্চল যেন প্রাণ ফিরে পায়। আনন্দ উৎসবের সীমা থাকে না। মেলাটি এবার মাঝ রমজানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারপরেও লাখো মানুষের সমাগম ঘটবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি। মেলায় সার্বিক নিরাপত্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানান তিনি।