ছাত্র রাজনীতিতে কৌশল না বিভাজন? জবাব দিলেন এন সি পি
প্রকাশ : 2025-05-14 12:11:31১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে একমঞ্চে আন্দোলন করেছিল জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।দল দুটি এখন প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে।আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের পরে এক উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।
সেই বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, “জামায়াত-শিবিরকে কাজে লাগানো শেষ। এখন তাদের পাকিস্তানপন্থী বলে চালিয়ে দাও। এনসিপির নেতারা জামায়াত-শিবিরের তকমা থেকে বের হতে চাইছে।”
জামায়াত-শিবিরকে ব্যবহার করে তাকে ছুঁড়ে ফেলার বিষয়টি নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুল রহমান তুহিন বলেন, “জামায়াত-শিবিরকে ব্যবহার করে তাকে ছুঁড়ে ফেলা—এই বিষয়টা আমার কাছে মনে হয়েছে এক প্রকার প্রোপাগান্ডার অংশ। আমরা কিন্তু শুরু থেকেই বলে আসছি, জুলাইয়ের যে অভ্যুত্থানটা হয়েছে সেই অভ্যুত্থানে সবগুলো ছাত্র সংগঠনই ছিল এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকায় আমাদের পাশে ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবির।”
তিনি আরও বলেন, “ওরা পাকিস্তানপন্থী রাজনীতি করেন বা এরকম কিছু আমার জানা নেই। মাহফুজ আলম যে বিষয়টা বলছেন সেটা হলো—“যারা ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে এদেশে রাজনীতি করছে, তাদের প্রত্যেকের ওই জায়গাগুলো পরিষ্কার করা উচিত—তারা '৭১ এবং '২৪-কে কীভাবে দেখে। কারণ একটি আমার জন্ম আরেকটি বলতে হয় পুনর্জন্ম।"
বিষয়টি পরিষ্কার করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ছিল দীর্ঘদিনের ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের ফল। এরপর পাকিস্তান যখন আমাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করে, নির্যাতন চালায়, তখন আরেকটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা নতুন একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। সেটিই ছিল আমাদের পুনর্জন্ম। তারপর আমরা ৫৪ বছরের একটি ইতিহাস দেখেছি, যেখানে রাজনীতিবিদরা শুধুমাত্র ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতি করেছে, পেশিশক্তির রাজনীতি করেছে। বারবার ফ্যাসিবাদ এসেছে। সেই জায়গা থেকেই কিন্তু আরেকটি রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের ২৪-এ এসেছে। তাই ৭১ এবং ২৪—এই দুটি ঘটনাকে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে দেখে, তা স্পষ্ট করা উচিত।”
আরিফুল রহমান তুহিন আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে কার কী ভূমিকা ছিল, সেই জায়গাগুলো স্পষ্ট করা উচিত। জামায়াতে ইসলামির প্রসঙ্গ আসছে, তাদেরও রাজনীতির স্বার্থেই পরিষ্কার করা উচিত যে তারা মুক্তিযুদ্ধকে কীভাবে দেখে। শুধু জামায়াত ইসলামী কেন অভিযুক্ত হবে? আমার মনে হয় তাদের অবস্থানও স্পষ্ট করা উচিত।”
অন্য আরেকটি আলোচনায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন,“আমরা মনে করি যে রাজনৈতিক শুদ্ধতার আলাপ যিনি দিয়েছেন, একাত্তরের প্রশ্নে সেই প্রশ্নের আসলেই মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ একাত্তরের চেতনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং জামায়াতের একাত্তরে যে ভূমিকা, জামায়াতও তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে। এ কারণে একাত্তর ইস্যু বারবার ঘুরে ফিরে আসে.
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে টানা আন্দোলনের মুখে শনিবার রাতেই জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের কথা জানানো হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে।এরপর তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন:
“৭১-এর প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। সহযোগীদের ইনিয়ে বিনিয়ে গণহত্যার পক্ষে বয়ান উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। জুলাইয়ের শক্তির মধ্যে ঢুকে স্যাবোটাজ করা বন্ধ করতে হবে। সাফ দিলে আসতে হবে।”
তিনি একই স্ট্যাটাসে আরেকটি প্রসঙ্গ টেনে লেখেন:
“মুজিববাদী বামদের ক্ষমা নেই। লীগের গুম-খুন আর শাপলায় মোদিবিরোধী আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের মস্তিষ্ক এরা। এরা থার্টি-সিক্সথ ডিভিশন। জুলাইয়ের সময়ে এরা নিকৃষ্ট দালালি করেও এখন বহাল তবিয়তে আছে। আজ পর্যন্ত মুজিববাদী বামেরা সাংস্কৃতিকভাবে ও বৌদ্ধিকভাবে জুলাইয়ের সঙ্গে গাদ্দারি করে যাচ্ছে। দেশে বসে জুলাইয়ের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে এরা চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। লীগের এসব বি-টিমও শিগগিরই পরাজিত হবে। অন্য কারও কাঁধে ভর করে লাভ নেই।”
মূলত মাহফুজের এই স্ট্যাটাস ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
এ নিয়ে জামায়াতে ইসলামি ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের অনেককেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাহফুজ আলমকে জড়িয়ে নেতিবাচক পোস্ট করতে দেখা যায়।
sa