ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা: অভিযুক্ত ৩ জনই যুক্ত ছিলেন মাদারীপুরে নানা অপকর্মের সাথে
প্রকাশ : 2025-05-19 17:56:54১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত সম্রাট, তামিম ও পলাশের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। গ্রেফতারকৃত তিনজনই মাদক সেবনসহ এলাকায় নানান অপকর্মের সাথে ছিল জড়িত। এর মধ্যে উগ্র মেজাজী তামিমের বিভিন্ন অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয়রা তাকে প্রায় বছর খানেক আগেই গ্রাম ছাড়া করেছিল। আর সম্রাট মল্লিক ডাসার ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ন আহব্বায়ক ছিলেন বলে স্বীকার না করলেও বিএনপির রাজনীতির সাথেই সম্রাট যুক্ত ছিলেন । ওদিকে পলাশ ছিল নেশাগ্রস্থ।
জানাযায়, গত মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে একদল দুর্বৃত্ত। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় রাত ১২টার দিকে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাম্যকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত তিন জনেরই বাড়ি মাদারীপুর। এদের মধ্যে তামিম হাওলাদার সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মন্দী গ্রামের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে। তামিম এলাকায় থাকাকালীন মাদক সেবন, মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত ছিল। উগ্র মেজাজী তামিমের নানান অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার লোকজন প্রায় এক বছর আগে তামিমের পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে তামিমকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করে। সেই থেকে তামিম এলাকায় মাঝে মধ্যে দু’এক দিনের জন্য আসা যাওয়া করতো। তবে পরিবারের দাবী গাজীপুরের টঙ্গী এবং ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে পোশাকের ব্যবসা করতো তামিম। তামিমের বন্ধু একই গ্রামের কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। তামিমের ঘনিষ্টজন ছিল পলাশ। একমাত্র মেয়ের কিডনিজনিত কঠিন রোগের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিল পলাশ। নিয়মিত মাদক সেবন করলেও পলাশ খুন করতে পারেনা দাবী এলাকাবাসীর। তামিমের সাথে থাকার কারনেই পলাশ ফেঁসে গেছেন বলে দাবী এলাকাবাসীর। অপরদিকে একই জেলার ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের শশীকর এলাকার যতিন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে স¤্রাট মল্লিক। মাদক সেবন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে ছিল জড়িত। এলাকার লোকজন তাকে ভয় পেতো। স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে তার অংশ গ্রহন ছিল। ২০২২ সালে গঠিত নবগ্রাম ইউনিয়ন শ্রমিক দলের কমিটিতে যুগ্ন আহব্বায়ক পদে তার নাম রয়েছে। তবে নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রেমেন্দ্র সরকার গ্রেফতারকৃত সম্রাটের দলীয় পদবীর বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, সম্রাট বিএনপির রাজনীতির সাথেই যুক্ত ছিল। তিনি আরো জানান, স¤্রাট কয়েক মাস আগেই ঢাকা তার বাল্য বন্ধু তামিম হাওলাদারের কাছে গিয়ে তার সাথে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
গ্রেফতারকৃত তামিমের বাড়িতে ১৪ মে রাতে উত্তেজিত জনতা আগুন লাগিয়ে দুটি ঘর পুড়িয়ে দেয়। মালামাল লুট করে বলেও তামিমের পরিবারের দাবী। এরপর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এরপর পুলিশও গ্র্রেফতারকৃত তিনজনের বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিতে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। নিহত সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষা-বর্ষের ছাত্র ও এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায়। পুলিশের ভাষ্য, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় আরেক মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগার জেরে বাকবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে সাম্যকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বুধবার (১৪ মে) নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
তামিম হাওলাদারের স্ত্রী ইতি হাওলাদার, বোন রাইশা আক্তার ইশা এবং মা পারভীন বেগম বলেন তামিম কখনোই খুন করতে পাওে না । সে হয়তো কোন ষড়যন্ত্রেও শিকার। গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের দাবী তারা নির্দোষ।
আটককৃত আরেক আসামী পলাশ সরদারের চাচী শিরিনা বেগম বলেন, তামিমের বিরুদ্ধে কোন খারাপ ব্যাড রেকর্ড নাই এই এলাকায় । সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী সচেতন মহলের।