চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা
প্রকাশ : 2022-02-18 22:04:38১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
টানটান উত্তেজনার শেষ ওভার। প্রতি বলেই ঘুরছে ম্যাচের মোড়। একবার কুমিল্লা ভিক্টোয়ান্সের দিকে তো একবার ফরচুন বরিশালের দিকে হেলে পড়ছে ম্যাচ। পঞ্চম বল পর্যন্তও ছিল চরম অনিশ্চয়তা। কিন্তু শেষ বলের রোমাঞ্চে মাত্র ১ রানের জয় নিয়ে অষ্টম বিপিএলের শিরোপা ঘরে তুললো কুমিল্লা।
এই নিয়ে বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে তৃতীয় শিরোপা জেতার কীর্তি গড়লো কুমিল্লা। অন্যদিকে গেইল-সাকিব-ব্র্যাভোদের নিয়ে গড়া দল নিয়েও প্রথমবারের শিরোপা জেতার স্বাদ অপূর্ণ রয়ে গেল বরিশালের।
শুক্রবার শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আসরের ফাইনালে ১ রানে জয় পেয়েছে কুমিল্লা। শুরুতে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রানের সংগ্রহ পায় কুমিল্লা। জবাবে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রানে থামে বরিশালের ইনিংস। ।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বরিশালের। এবারের বিপিএলে ব্যাট হাতে আলো ছড়ানো ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার ৭ বল খেলেও শূন্য রানে বিদায় নেন। কিন্তু তিনে নেমে দৃশ্যপট পাল্টে দেন সৈকত আলী। ডানহাতি তরুণ এই ব্যাটার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষ বোলারের ছন্নছাড়া করে দেন। মাত্র ২৬ বলে তুলে দেন দুর্দান্ত এক ফিফটি।
আরেক ওপেনার ক্রিস গেইলের সঙ্গে সৈকতের জুটিতে আসে ৫১ বলে ৭৪ রান। এর মধ্যে গেইলের অবদান মাত্র ১২ রান। শেষ পর্যন্ত তানভীর ইসলামের বলে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় সৈকতের ৩৪ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৫৮ রানের ইনিংস। বরিশালের ভরসা হয়ে থাকা গেইল দেখেশুনে খেলার পথে হাঁটেন।
কিন্তু স্বদেশী নারাইনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে গেইল বিদায় নেন ব্যক্তিগত ৩৩ রানে। ৩১ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো তার ইনিংসটি থামলে নামেন সাকিব। কিন্তু দারুণ ফর্মে থাকা এই বাঁহাতি তানভীরের বলে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৭ রান করে। তবে লক্ষ্যটা তখনও বরিশালের হাতের নাগালেই ছিল।
শেষ ৫ ওভারে ৩৪ রান দরকার ছিল বরিশালের। ক্রিজে নুরুল হাসান সোহান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। মঈন আলীর করা ইনিংসের ১৬তম ওভারে আসে ৭ রান। ফলে শেষ ২৪ বলে লক্ষ্য নেমে আসে ২৭ রানে। পরের ওভারে দুই সিঙ্গেলের পর ছক্কা হাঁকিয়ে লক্ষ্যটা আরও কমিয়ে আনেন শান্ত। কিন্তু পরের বলেই আরিফুল হকের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউটের শিকার হন সোহান (১৪)।
শেষ ১৮ বলে ঠিক ১৮ রানের লক্ষ্য ছিল বরিশালের সামনে। নিজের শেষ ওভার করতে এসে প্রথম বলেই স্বদেশী অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্র্যাভোকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন নারাইন। ওই ওভারে মাত্র ২ রান খরচ করেন ক্যারিবীয় স্পিনার। ফলে দারুণভাবে লড়াইয়ে ফেরে কুমিল্লা। পরের ওভারে মোস্তাফিজের দ্বিতীয় বলে এলডব্লিউর শিকার হন শান্ত (১২)। ফিজের ওই ওভারে আসে মাত্র ৬ রান।
শহিদুলের হাতে শেষ ওভারের ভার তুলে দেন কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল। শেষ ৬ বলে ১০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করছিলেন মুজিব ও হৃদয়। প্রথম ৩ বলে মাত্র ২ রান খরচ করেন শহিদুল। কিন্তু চতুর্থ বলে ওয়াইডসহ ৩ রান আসে। ২ বলে ৫ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়। পঞ্চম বলে তানভীরের ক্যাচ মিসে আসে ২ রান। শেষ বলে ৩ রান দরকার ছিল, কিন্তু হৃদয় নিতে পারেন ১ রান। ফলে ১ রানে জিতে যায় কুমিল্লা।
এর আগে টসে জিতে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামা কুমিল্লাকে দারুণ শুরু এনে দেন নারাইন। একপ্রান্তে লিটন দাসকে দর্শক বানিয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার। আফগান স্পিনার মুজিব-উর-রহমানের করা প্রথম ওভারেই নারাইন ঝড়ে আসে ১৮ রান। এর মধ্যে ২ ছক্কা ও ১ চারসহ ১৭ রান এসেছে তার ব্যাট থেকেই। পরের ওভারে শফিকুল ইসলামের বলে ফের ২ ছক্কা ও ১ চার হাঁকান তিনি। ওই ওভারেও আসে ১৮ রান।
নারাইন ঝড়ের মাঝে লিটন ছিলেন নিষ্প্রভ। ৬ বলে ৪ রান করে সাকিব আল হাসানের বলে বোল্ড হয়ে যান এই ওপেনার। ভাঙে ১৮ বলে ৪০ রানের ওপেনিং জুটি। এরপর নারাইন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে মাত্র ২১ বলে তুলে নেন ফিফটি। আগের ম্যাচেই তিনি বিপিএলে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েছিলেন। অবশেষে এই ক্যারিবীয়কে থামান মেহেদি রানা। তার একটি স্লোয়ার উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিসটাইমিং হয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়েন ২৩ বলে ৫টি করে চার-ছক্কায় ৫৭ রান করা নারাইন।
নারাইন বিদায় নিতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কুমিল্লা। একে একে বিদায় নেন মাহমুদুল হাসান জয় (৮), ফাফ ডু প্লেসি (৪), ইমরুল কায়েস (১২) এবং আরিফুল হক (০)। দলীয় ৯৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে টেনে তোলার কাজ শুরু করেন মঈন। আবু হায়দারকে নিয়ে সাবধানী ব্যাটিংয়ে ধাক্কা কিছুটা সামাল দেন এই ইংলিশ অলরাউন্ডার। দুজনের জুটিতে আসে ৫১ বলে ৫৩ রান।
শফিকুলের করা ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে দৌড়ে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন মঈন। সাকিবের দুর্দান্ত থ্রোয়ে স্ট্যাম্প ভাঙেন নুরুল। মঈন ৩২ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৩৮ রান। ওই ওভারে আরও ২ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয় কুমিল্লা। এর মধ্যে আবু হায়দার (১৯) কট অ্যান্ড বোল্ড এবং শহীদুল ইসলাম (০) ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ফলে ১৫১ রানে থামে কুমিল্লার ইনিংস।
বল হাতে ২টি করে উইকেট নেন মুজিব ও শফিকুল। আর সাকিব, ব্রাভো ও মেহেদী হাসান রানা ১টি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন।