চট্টগ্রামে ফেসবুক লাইভে এসে ওসিকে পেটানোর হুমকি

প্রকাশ : 2025-01-30 11:21:26১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

চট্টগ্রামে ফেসবুক লাইভে এসে ওসিকে পেটানোর হুমকি

চট্টগ্রামে হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ ১০টির বেশি মামলার আসামি সাজ্জাদ ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানকে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে নিজের ফেসবুক লাইভে এসে তিনি ওসি আরিফকে হুমকি দেন।

দুই মিনিট ২৭ সেকেন্ডের এই লাইভের এক পর্যায়ে ওসি আরিফকে গালাগাল করতে থাকেন সাজ্জাদ। সাজ্জাদ এক পর্যায়ে বলেন, ‘ওসি আরিফ আমি তোকে পেটাবো। বায়েজিদ থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত পেটাবো। দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন, আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না। প্রয়োজনে আমি মরে যাবো। কিন্তু হার মানবো না।’

এদিকে সাজ্জাদের ওই হুমকির পর মঙ্গলবার দিনগত রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ওসি আরিফুর রহমান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আরিফুর রহমান বলেন, নগরের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ। গত সোমবারও সাজ্জাদের সহযোগীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা চাঁদাবাজি করে ও যাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, চলবে। সাজ্জাদের চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। এ কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে ওই সন্ত্রাসী। ফেসবুক লাইভে এসে হুমকির ঘটনায় সাজ্জাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাজ্জাদ হোসেন চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ১০টির বেশি মামলা রয়েছে। গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ তাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছিল। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে তিনি। সর্বশেষ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় সাজ্জাদকে পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তিনি।

এদিকে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ধরা না পড়ায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা আতঙ্কে রয়েছেন। এলাকায় তার চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলেন এই সন্ত্রাসী।

নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন অনন্যা, শীতলঝরনা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালান সাজ্জাদ। পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদা না পেলেই সাজ্জাদ গুলি করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ কালারপুল এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন।

স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, ভবনমালিকদের সাজ্জাদকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এর আগে গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসা লক্ষ্য করে গুলি করেন সাজ্জাদ ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনার ভুক্তভোগী ইকবাল বাদী হয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করেন। চাঁদা না পেয়ে গত বছরের ২৭ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকায় মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের বাসা লক্ষ্য করেও গুলি করেন সাজ্জাদ। এ ঘটনায় হাছান বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন।

গত ২১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁওয়ের শমসেরপাড়া এলাকায় আফতাব উদ্দিন নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ ও নিহত আফতাব উদ্দিনের পরিবার বলছে, সাজ্জাদ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় আফতাবের পরিবারের করা মামলায় সাজ্জাদকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে গত ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অনন্যা আবাসিক ও বায়েজিদ সীমানা-সংলগ্ন কুয়াইশ এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় মো. আনিস ও মাসুদ কায়সার নামের দুই যুবককে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয় বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায়।

পুলিশ বলছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। মামলা দুটিতে সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়। আসামিরা ধরা না পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান নিহত মাসুদ কায়সারের ভাই মো. আরিফ।

 

কা/আ