ঘরেরর শত্রু বিভীষণ
প্রকাশ : 2021-10-31 10:46:45১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
আমার কথা গুলো কারো শুনতে খারাপ লাগতে পারে এ জন্য ক্ষমা প্রার্থী। তারপরও বলছি এজন্য যে বঙ্গবন্ধুই তো শিখিয়ে ছিলেন আত্মসমালোচনা আত্মশুদ্ধি না করলে আমরা জাতি হিসাবে কখনো বড় হতে পারবো না। সেই সাহস থেকেই বলছি।
৭৫ পরবর্তী সময়ে সামান্য একজন কর্মী হিসাবে বুকে রক্তক্ষরণ হয় বলেই বলি নইলে চুপ থাকাই ভালো। সেদিন সংগঠন করতে যেয়ে তো মাঠে দেখেছি কাদের কলঙ্ক কাদের মাথায় তিলক হয়েছিলো! বঙ্গবন্ধুর উপর সব দায় চাপিয়ে মিথ্যা কলঙ্ক দিয়ে সেদিন মোশতাক গংরা ফেরেশতা সেজেছিল।
একদিন এক নেতার একদেশ বলা মানুষগুলো পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্টের পরে বলেছিল এক গুলিতে সব শেষ। নির্মমভাবে সে শব্দ গুলো কানে আজো ভাসে। তখন প্রতিবাদ করা সেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক গুলো আজ প্রদীপের পাদদেশেও নেই। বরং দলে সেই মোশতাকের উত্তরসূরিরা ভীর করেছে। আওয়ামীলীগের এটাই ট্রাজেডি।
এরা আওয়ামীলীগ আর মুক্তিযুদ্ধকে কেবল কথার কথা, বলে বক্তৃতা বিবৃতিতে টেবিল চাপড়ান। মননে লালন করেন না। অপ্রিয় হলেও এটাই বাস্তবতা। সেই মিছিলে বঙ্গবন্ধুর বিরোধী বলা মানুষগুলোর রক্তের উত্তরাধিকারগন( মোশতাক বিএনপি জাপার) এখন অতিমাত্রায় বঙ্গবন্ধু প্রেমি সেজে পোষ্টার ব্যানার মাস্তানি করে দলের পদ পদবী বাগাতে পারে।
নেতারুপি বসরা কর্মচারী পোশতে পারেন নানা ভাবে (সকল সময় সরকারি দল করে) অর্থ বৃত্ত এখন তাদের শক্ত অবস্থায় দাঁড় করেছে। অপ্রিয় হলেও এটাই বাস্তবতা। এরা বঙ্গবন্ধু তার নীতি নৈতিকতা অসাম্প্রদায়িকতা কখনো লালন করে না। মননে তাদের বঙ্গবন্ধুর নৈতিকতা নেই, পরনে আছে নতুন মুজিব কোট।তারা কখনো বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ তার আদর্শের পতাকা বহন করতে পারে না। এটাই অপ্রিয় সত্য।
বঙ্গবন্ধুর সাথে তার চার সিপাহশালা জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছিলো বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে বিশ্বাসঘাতক হয়ে বেঁচে থেকে লাভ নেই। আবার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে মোশতাক গং প্রমাণ করেছিল কীভাবে ভালবাসার প্রতিদান চোখ পাল্টিয়ে দিতে হয়। আজ এত বেশী আওয়ামীলীগের কর্মচারী দেখলে ভয় হয়। কেউ কর্মী নয় কেউ নেতা নয়। কেউ বস কেউবা কর্মচারী। কর্মী কোথায়? কর্মচারীরা বসের জয়গান করে। বঙ্গবন্ধু ও আওযামীলীগ একটার পরিপূরক আরেকটি। আজ যোজন যোজন দূরে সে সংগঠন।
আওয়ামী লীগের আর্দশ কী তাও ওরা জানেন না। ওদের বেশীরভাগ কর্মচারীর ফেইসবুক পেইজ সার্চ করলেই দেখবেন ব্যক্তি বন্দনা আর স্ব স্ব বসের আত্মপ্রচার। দলের সাথে আর্দশের সাথে যায় না এমন সব উগ্র পোষ্ট ওরা শেয়ার করে। একটা কথা বলা প্রয়োজন এ দেশে ধর্ম সংস্কৃতি পাশাপাশি চলে। কোন ধর্মভীরু মানুষ তার ধর্মের অবমাননা সহজে মেনে নেয় না। কেনইবা নেবে! এদেশের মুক্তি সংগ্রাম হয়েছিল ধর্ম কে বাদ দিয়ে নয়। সকল মানুষের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত সহ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্খা নিয়েই। আবার পাকিস্তান এই ধর্মকেই ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে। ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুত্ববাদী সরকারের অস্ত্রও এই ধর্ম। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ সে যে ধর্মের হোক তিনিও অসাম্প্রদায়িক হন। আমার চেনা জানা বহু হিন্দু মুসলমান আছেন। তারা একে অপরের পাশে এসে দাঁড়ান।
বঙ্গবন্ধু ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন তিনি রবীন্দ্রনাথ পড়তেন। আজ অনেকেই রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে বলেন। পাক আমলে রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধ ছিলো। নোবেল বির্তকে কত কী বলা হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। তথাকথিত এইসব নব্য আওয়ামীলীগ কর্মচারীরা জানেন কী আমাদের জাতীয় কবির কবিতাও যে পরিবর্তন করে পড়াতো পাকিস্তান আমলে ?
হয়ত প্রশ্ন আসবে আজো ও তো আরো ভয়াবহ অবস্থা। শিক্ষা ব্যবস্থা এখন পাকিস্তান আমলের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও হার মানিয়েছে। এ লজ্জা সরকারের যতটা, তার চেয়ে বেশী মুক্তি যুদ্ধের চেতনার। শিশু মনন অসাম্প্রদায়িক না হলে বাংলাদেশ কখনো অসাম্প্রদায়িক হবে না। একটি শ্রেনী তো ধর্ম আর বাঙালি সংস্কৃতিকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে মরিয়া। এর প্রভাব তো জনমনে পড়বেই।
ওরা দলের আর্দশের পরিপন্থী সব কাজ করে একেক জন রথি মহারথি সেজে বসে আছেন। এতে ওদের রথ দেখা কলা বেচা হলেও দলের তেইশ মারা হয়ে যাচ্ছে নিভৃতে। সে দিকে কারো নজর নেই। আর নেই বলেই দল নানা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর অসামাপ্ত আত্মজীবনী ক'জন তৃণমূল কর্মী পড়ে তা অন্তরে ধারন করেন। যদি করতেন তবে তারা কখনো উগ্রতা লালন করতে পারতেন না।
এই যে আসছে ইউপি নির্বাচন সেখানে কী হচ্ছে? গোটা দেশ বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। দলের নমিনেশনের আশায় নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে মধুলোভীদের বাড়ী বাড়ী ঘুরছেন। অসহায় প্রার্থীদের এমন বেহায়াপনা দেখে আমার করুণা হয়। কী দরকার ছিলো স্থানীয় নিবার্চনে জাতীয় বা দলীয় প্রতীক দেয়ার। এটা স্থানীয় সরকারকে শক্তিধর করবে বলে মনে হয় না বরং নিজদের মধ্যে আত্মকলহ বাড়ায়।
মাদারীপুর-শরিয়তপুর আবার ব্যতিক্রম। মানুষ এত বোকা নয় সব বুঝে হয়ত বলে না। যেদিন বলবে তখন সবাই পগারপার হবে। নেত্রী একা হয়ে যাবেন। কথাটা মন্দ লাগলেও এটাই সত্য।
বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি শেখ হাসিনাকে যখন বলা হয় আপনিইতো বাংলাদেশ, তখন বিরোধী পক্ষ নানা কটুক্তি করলেও একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন। আবার উগ্রবাদী জঙ্গি যুদ্ধাপরাধী দমনে তার মত ঐতিহাসিক সিন্ধান্ত চোখ খুলে দেখুনতো কোন নেতা নিতে পারতেন? শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনা করতেও পারা যায় না। চারিদিকে নাগিনীরা সংঘবদ্ধ। শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশকে ওরা তালেবান রাষ্ট্র করতেও পিছপা হবে না।
একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যা আছে বলেই এখনো বাংলাদেশ আছে। এটা অপ্রীয় হলেও সত্য, যে নেত্রী যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে সকল রক্তচক্ষুকে কোন ভয় করেননি তাকে সড়াতে পারলে তো সব একাকার। তাই মানুষের আস্থার জায়গাটা এখনো শেখ হাসিনাকে ঘিরেই।
এ কথা অস্বীকার করার জো নেই। তবে তার দলের টক টক করা কীছু মানুষের মুখে একটু লাগাম দেয়া উচিত। সুকৌশলে বাংলাদেশকে একটা মধ্যযুগী দেশে নেবার পাঁয়তারা করছে নামে বেনামে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী। এরা কেউ নিরপেক্ষতার ভান করে, কেউ তথাকথিত আওয়ামী লীগার হয়ে। প্রশাসনেও এদের দাপট একেবারে কম নয়।
বিদেশের মাটিতে বসে কতিপয় মুখচেনা লোক তো ইনিয়ে বিনিয়ে দেশে অরাজকতা আর অস্থির করার পাঁয়তারা করেই চলেছে। বেশ কীছু লাইভ কাষ্ট করে দেশে কোন কোন মহল প্রগতিশীল ভাব ধরে আসলে ওরাও বেশ মেধামনন দিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের তেইশ মারার কাজটিই করছে।
আওয়ামী লীগের আদর্শের সত্যিকারের নেতাদের এদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে ঘরের শত্রু বিভীষণ কথাটা সবৈভ সত্য। মোশতাক গং তার বড় প্রমাণ।
লেখক :
অলক মিত্র
৭৫ উত্তর সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী যুবলীগ, মুন্সিগঞ্জ জেলা।